বেশি খেলেই কি ওজন বাড়ে?
বেশি ওজন একটি বড় ধরনের রোগ। ওজন বাড়ার অনেক কারণ রয়েছে। এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২৩৬৬তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন ডা. সরফরাজ বেগ। বর্তমানে তিনি বেলভিউ হাসপাতালের গ্যাস্ট্রো সার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে কর্মরত আছেন।
প্রশ্ন : ওজনাধিক্যের কারণ কী?
উত্তর : ওজনাধিক্যের কারণটা জটিল। আপনি যদি কাউকে জিজ্ঞেস করেন, তাহলে সবাই একটা কথা বলে যে সে বেশি খায়। আমরা সব সময় একটা অভিযোগ করতে চাই, যে মোটা সে নিজের কারণে মোটা বা বেশি খায় বলে মোটা। কিন্তু ওবেসেটি কিন্তু শুধু সে রকম রোগ নয়। অবশ্যই কিছুটা কারণ হলো খাওয়াদাওয়া। কিন্তু আপনারা দেখবেন হয়তো একই বাড়িতে সবাই অনেক রকম খাবার খাচ্ছে, একজন খুব বেশি মোটা, একজন খুবই রোগা। ধরুন, আমরা আজ দুই হাজার কিলোক্যালোরি খেলাম, আগামীকাল তিন হাজার কিলোক্যালোরি খেলাম। একদিন এক হাজার কিলোক্যালোরি খেলাম, একদিন উপোস করলাম, আমাদের ওজন তো বাড়ে না। তো খাওয়ার সঙ্গেই যে মোটা হওয়ার সব সময় একটি সম্পর্ক আছে, ওজনের সেটি কিন্তু নয়। এখানে আরো অনেক কারণ রয়েছে।
খাবারটা আসলেই একটি কারণ। তবে আমার শারীরিক পরিশ্রম বা কাজকর্ম কতটা, সেটা একটা বিরাট কারণ। আমি একদম সারা দিন কিছু করি না, আমি যদি দুই হাজার কিলোক্যালোরি খাই, তাও আমি মোটা হতে পারি।
আরেকটি হলো জেনেটিক। আমরা এখন ধরতে পারছি আমাদের জিনগুলো পরিবর্তিত হয়ে যাচ্ছে। ওজনাধিক্যের জিনগুলো নির্ণয় করা গেছে। আর আমার যদি ওবেসিটি জিন থাকে, তাহলে পাশের লোকটার মতো একই খাবার খেয়েই হয়তো আমি মোটা হয়ে যাব।
এ ছাড়া শরীরে হরমোনের পরিবর্তনের কারণে হতে পারে। আমাদের শরীরে যে রাসায়নিক পদার্থ আছে, তার মধ্যে ইনসুলিন যেগুলো আছে, এটি একটি বড় বিষয়। আমরা জানি, এটি ডায়াবেটিসের সঙ্গে সম্পর্কিত। ওই হরমোনের ওপর আমরা অনেক গবেষণা করে দেখেছি, যাদের ইনসুলিন, ল্যাপটিনের যদি কোনো অসুবিধা থাকে, তাহলে আমাদের ওজনাধিক্য হতে পারে।
তাহলে শুধু খাওয়া-দাওয়া যে বেশি করে সে মোটা হয়ে যায়, সেটি কিন্তু নয়। এ ছাড়া আরো অনেকগুলো কারণ আছে, যেগুলো থাকলে মানুষ মোটা হয়ে যেতে পারে।
প্রশ্ন : বর্তমানে আমাদের জীবনযাত্রার মান কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে। এখন অনেকেই চাকরি করছে বা বসে থেকে কাজ করার প্রবণতা বেড়েছে। শুধু তাই না, খাওয়া-দাওয়ার পরিবর্তন হচ্ছে, আমরা ফাস্ট ফুডের দিকে ঝুঁকে পড়েছি। এই বিষয়গুলো কী কারণের ভেতর আনা যায়?
উত্তর : আমি বলিনি যে খাওয়া-দাওয়া প্রধান কারণ নয়। আমি শুধু বললাম, ওই কারণটা হলেও আরো অন্য কারণ রয়েছে যেটা পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বব্যাপী কী হয়েছে? ১৯৮০ সালের পর থেকে হঠাৎ করে স্থূলতার মাত্রা বাড়ছে।
বাংলাদেশে প্রায় চার ভাগ ওজনাধিক্য ছিল ২০১০-২০১১ সালের দিকে। তার আগে এক ভাগ ছিল ২০০৬-২০০৭ সালে। এরপর গিয়ে চার ভাগ হলো। এখন নতুন যে বিষয়গুলো আসবে দেখবেন আট ভাগ, ১০ ভাগ স্থূলতার মাত্রা হয়ে গেছে। তার মানে আমরা ১০ গুণ বেশি হয়ে গেলাম। অন্তত চার-পাঁচগুণ তো হয়েই গেছি। আমাদের স্থূলতার মাত্রা বাড়ছে। তাই এমন কিছু অবশ্যই হয়েছে যেগুলো বাণিজ্যিক দেশে হলো, যেটা এখন আমাদের দেশে চলে এসেছে। সেটা কী? সেটা হলো যে, আমাদের পয়সা হয়েছে, ক্ষমতা বেড়েছে, খরচ করতে পারছি। আমরা বেশি খেতে পারছি। আমাদের প্রাপ্যতাও বেড়েছে। প্রত্যেক রাস্তায় কিন্তু একটি ঠান্ডা পানীয়ের দোকান, একটা কেকের দোকান বা আইসক্রিমের দোকান রয়েছে। খাওয়াটা একদম হাতের কাছে। এ ছাড়া আমাদের খাবারগুলো বেশি ভাজাভাবে তৈরি হয়, চিনি বেশি দিয়ে তৈরি হয়। আমরা এটা পছন্দ করি বলে, এটা তৈরি হয়।
এ ছাড়া শারীরিক পরিশ্রম কম। আমরা আগে হয়তো স্কুলে হেঁটে যেতাম। এখন গাড়ি ছাড়া আমরা যাই না। আমরা বাড়িতে এসে আগে ময়দানে খেলাধুলা করতাম। এখন ময়দান তো দূরের কথা, ঢাকায় মাত্র ১২টি ময়দান আছে। আমরা টিভিতে বসে সিনেমা দেখছি, ভিডিও গেমে ক্রিকেট আর ফুটবল খেলে নিচ্ছি। কিন্তু মাঠে আর যাচ্ছি না। এই শারীরিক অস্বাভাবিকতা ওজনাধিক্যে পরিবর্তিত হচ্ছে।