কিশোর-কিশোরীরা কেন আসক্তিপ্রবণ
কিশোর-কিশোরী অবেগপ্রবণ হয়। তারা দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়। ওই সিদ্ধান্ত পরিণত বয়স্কদের মতো সঠিক হয় না। এর কারণ কী? মানুষের মস্তিষ্ক নিয়ে গবেষণায় এর ব্যাখ্যা মেলে।
কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য মানুষের মস্তিষ্কের সামনের অংশের ফ্রন্টাল লোব কাজ করে। কিশোর-কিশোরীদের ক্ষেত্রে এই অংশটি তৈরি হয়ে গেলেও পূর্ণতা পায় না। তাই সেখানে কোনো নির্দেশ ধীরগতিতে চলে। এ কারণে সিদ্ধান্ত নিয়ে ভাবনার কাজটি কিশোর-কিশোরীদের মস্তিষ্কে ধীরগতিতে হয়। এই সময় না দেওয়া হলেই সিদ্ধান্ত নিতে ভুল হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যের বোস্টন শিশু হাসপাতালের মনোবিদ্যার গবেষক ফ্রান্সেস জেনসেন রেডিওতে এক সাক্ষাৎকারে এসব তথ্য জানান। তিনি কিশোর-কিশোরী মস্তিষ্কের বিকাশ বিষয়ে ‘দ্য টিনএজ ব্রেন’ নামে একটি বই লিখেছেন। এ বইয়ে তিনি কিশোর-কিশোরীদের অবেগপ্রবণ হওয়া, অল্পতেই কষ্ট পাওয়া এবং ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়ে আলোচনা করেন।
ফ্রেশ এয়ার নামের ওই রেডিওতে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জেনসেন বলেন, মানুষের স্নায়ুকোষের (নিউরন) মাঝামাঝি অংশে মায়েলিন নামক তুলনামূলক সরু অংশ থাকে। এর মধ্যদিয়েই কোনো নির্দেশ সঞ্চালিত হয়। মায়েলিন এক ধরনের চর্বি, তাই স্নায়ুকোষে এ অংশটি পূর্ণতা পেতে কয়েক বছর সময় লাগে।
গবেষক জেনসেন আরো বলেন, মানুষের মস্তিষ্কের পেছনের অংশ থেকে পূর্ণতা পাওয়া শুরু হয়। সবশেষে পূর্ণতা পায় মস্তিষ্কের সামনের অংশ। সাধারণত ২০ বছর বয়সে মানুষের মস্তিষ্ক পূর্ণতা পায়। ক্ষেত্রবিশেষে এর চেয়েও বেশি সময় লাগে।
মস্তিষ্কের সামনের অংশে থাকে প্রিফ্রন্টাল ও ফ্রন্টাল কর্টেক্স। এই অংশে থাকে অন্তর্দৃষ্টি, সহানুভূতি। এ অংশ থেকেই আবেগ ও ঝুঁকি গ্রহণের মতো বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রিত হয়। ফ্রন্টাল কর্টেক্সের গঠনে পূর্ণতা না থাকায় কিশোর-কিশোরীরা অনেক সময় মদ্যপান, ধূমপানসহ নানা রকম নেশাদ্রব্য ও বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতিতে (স্মার্টফোন, কম্পিউটার) আসক্ত হয়ে পড়ে।
অনেক অভিভাবক কিশোর বয়সের সন্তানদের ব্যাপারে উদাসীন থাকেন। তাঁদের মতে, সন্তান একটু এদিক-সেদিক যেতেই পারে, পরে ঠিক পথে চলে আসবে। আর আসক্তি তেমন বড় কোনো ক্ষতি করবে না। গবেষক জেনসেনের মতে, এসব ধারণা সম্পূর্ণই ভুল। কিশোর বয়সে কোনো আসক্তির বিষয়টি মস্তিষ্কে স্থায়ীভাবে দাগ ফেলে। আর আসক্তির নেতিবাচক প্রভাব পূর্ণবয়স্কদের চেয়েও তাদের ওপর বেশি হয়। নেশার প্রভাবও কিশোর-কিশোরীদের ওপর বেশি সময় থাকে। নেশার কারণে কিশোর-কিশোরীদের মস্তিষ্কে নতুন স্মৃতি যুক্ত হওয়া বাধাগ্রস্ত হয়। তাই ব্যাহত হয় তাদের স্বাভাবিক জীবন ও শিক্ষাগ্রহণ।
গবেষক জেনসেন আরো বলেন, স্মার্টফোন বা কম্পিউটারের মতো বৈদ্যুতিক যন্ত্রে আসক্তিও কিশোর-কিশোরীর মনোবিকাশের ক্ষতি করে। বৈদ্যুতিক যন্ত্রের আলোর কারণে তাদের স্বাভাবিক ঘুমানো বাধাগ্রস্ত হয়। ঘুম কম হওয়া মস্তিষ্কের বিকাশের জন্য ক্ষতিকর।
নেশাদ্রব্য বা বৈদ্যুতিক যন্ত্রের নেশা কাটাতে কঠোর কোনো পদক্ষেপের চেয়ে কিশোর-কিশোরীদের সঙ্গে আলোচনাকে গুরুত্ব দেন গবেষক জেনসেন। তিনি বলেন, নেশাদ্রব্য ব্যবহারে ক্ষতি ও এর নেতিবাচক প্রভাব সম্পর্কে কিশোর-কিশোরীদের বোঝাতে হবে। একই সঙ্গে মনোবিকাশের ক্ষতিগ্রস্ত হয় না এমন বৈদ্যুতিক যন্ত্র বাছাই করতে হবে। আর বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারও নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।