কর্মজীবীদের ওজন নিয়ন্ত্রণের ১৬টি উপায়
কর্মজীবীদের শরীর নিয়ে প্রায়ই ভুগতে হয়। কাজের চাপে ব্যায়ামের ফুরসত মেলে না, আবার কাজের কারণেই খাওয়াটা হয় না ঠিকঠাকমতো। কিন্তু তাতে স্বাস্থ্যের বেশ ক্ষতি হতে পারে। কিছু পদ্ধতি মেনে চললে কর্মজীবীরাও নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন তাঁদের ওজন। স্বাস্থ্যবিষয়ক ওয়েবসাইট হেলথডটকম দিয়েছে এ বিষয়ে কিছু পরামর্শ।
১. সিদ্ধান্ত নিন
অধিকাংশ মানুষই ভাবেন ওজন নিয়ন্ত্রণের জন্য বা ভালো স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের জন্য কেবল জিমে গিয়ে ব্যায়াম করাই একমাত্র উপায়। যখন তাঁরা এগুলো পালন করতে না পারেন, তখন ওজন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টাই ছেড়ে দেন। আপনার সারা দিনের সফলতা ব্যর্থতা নির্ভর করবে ছোট ছোট স্বাস্থ্যকর অভ্যাসের সিদ্ধান্তের ওপর। এসব সিদ্ধান্তই আপনাকে ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করবে। জিমে যেতে সময় পাচ্ছেন না বা ঠিকমতো ডায়েট পালন করতে পারছেন না- এসব ভেবে ওজন নিয়ন্ত্রণের কথা ভুললে চলবে? বরং সহজসাধ্য কিছু অভ্যাস গড়ে তুলুন, কাজে দেবে।
২. নির্দিষ্ট পরিমাণ প্রোটিন খান
ওজন নিয়ন্ত্রণের জন্য আপনাকে সব সময় নিজের রান্না নিজেই করতে হবে, এমন নয়। আপনার প্রয়োজন কেবল নির্দিষ্ট পরিমাণ খাওয়া। ওজন কমাতে চাইলে অধিকাংশ লোকেরই প্রতিদিন ১২০০-১৫০০ ক্যালরি মানের খাবার খাওয়া প্রয়োজন। তবে এটা নির্ভর করবে আপনার উচ্চতা, ওজন এবং শরীরের অবস্থার ওপর। অনেকে হয়তো ওজন নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রোটিন-জাতীয় খাবার একেবারেই বাদ দিয়ে দেন। এটিও ঠিক নয়। তাই একজন পুষ্টিবিদের কাছে জেনে নিতে পারেন কতটুকু প্রোটিন আপনার দিনে গ্রহণ করা প্রয়োজন।
৩. কোনো বেলার খাবার বাদ না দেওয়া
অনেকেই ব্যস্ততার দোহাই দিয়ে সময়মতো খান না। এটা করলে কিন্তু ভুগতে হবে! অন্তত প্রতিবেলার খাবার প্রতিবেলায় খেতে হবে। চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা পরপর দেহের শক্তির জন্য খাবারের প্রয়োজন হয়। নয়তো এর কর্মক্ষমতা কমে যায়। সময়মতো না খাওয়া ইনসুলিন এবং হরমোনের মাত্রাকে প্রভাবিত করে। অধিকাংশ ওজনাধিক্যের কারণ বেশি খাওয়া নয়, বরং সময়মতো না খাওয়া এবং খাবারের ধরন। অনেকে হয়তো সকাল বেলা উঠে এককাপ কফি পান করেন। আর সারা দিন কিছু খান না। এই অভ্যাস অনেক ক্ষতিকর স্বাস্থ্যের জন্য। সারা দিনে অন্তত তিনটি বড় খাবার এবং দুই থেকে তিনটি ছোট খাবার খেতে হবে।
৪. ব্যায়ামের সময় ভাগ করুন
কাজের ফাঁকে ৩০ মিনিট পরপর বিরতি নেওয়া ভালো। তবে ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে চাইলে সপ্তাহে অন্তত ১৫০ মিনিট হাঁটা বা ব্যায়াম করা জরুরি। এটাকে তিন ভাগে ভাগ করে নিতে পারেন। সকালে খাবারের পর ১০ মিনিট, দুপুরের খাবারের পর ১০ মিনিট এবং রাতের খাবারের পর ১০ মিনিট। এভাবে সপ্তাহে অন্তত পাঁচদিন এই নিয়ম পালন করতে পারলে অনেক উপকার পাবেন বলে জানান বিশেষজ্ঞরা।
৫. হালকা খাবার খান
ভারী খাবার বা ফাস্ট ফুড-জাতীয় খাবার না খেয়ে চেষ্টা করুন হালকা জাতীয় খাবার খাওয়ার। ক্যালরি কমাতে চাইলে মাঝে মাঝে লেবুর পানি খেতে পারেন বা কফিতে চিনি একটু কম দিয়ে পান করতে পারেন।
৬. দাঁড়ানোর অভ্যাস করুন
অনেকক্ষণ বসে থাকা হৃৎপিণ্ড, মস্তিষ্ক এবং চোখের জন্য ক্ষতিকর। আপনার স্থুলতার জন্যও দায়ী এটি। তাই কিছু সময় দাঁড়িয়ে থাকারও অভ্যাস করুন। বাসে যাওয়া, অফিসের মিটিং, ফোনে কথা বলা এসব কাজগুলো দাঁড়িয়ে করতে পারেন।
৭. পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমানো
খাবার ও ব্যায়ামের পাশাপাশি ওজন নিয়ন্ত্রণের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমও খুব দরকারি। ঘুম না হলে শরীরের শক্তির মাত্রা হ্রাস পায়। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দৈনিক সাত থেকে আট ঘণ্টা ঘুমানো প্রয়োজন। তাই সময়মতো এবং সঠিকভাবে ঘুমান।
৮. ছুটির দিন ভালোভাবে পালন করুন
ছুটির দিনে একটি দিনলিপি তৈরি করতে পারেন। সেদিন বাজার করুন, নিজের জন্য স্বাস্থ্যকর কিছু রান্না করুন; যেই সময়টুকু ব্যায়াম করতে পারেননি সেই সময়টুকু পূরণ করার চেষ্টা করুন।
৯. পরিবারের সদস্যদের সময় দিন
আপনি হয়তো বলতেই পারেন, ছুটির দিনটি কেবল পরিবার এবং বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে সময় কাটানোর জন্য। এই সময়টিকে আপনি ফিটনেসের জন্য ব্যয় করতে চান না, জিমে যেতে চান না। বিশেষজ্ঞরা বলেন, যদি না চান এসবের জন্য বাড়তি সময় দিতে, ভালো কথা। দেবেন না! কিন্তু অন্য কিছু তো করতে পারেন। আপনার বাচ্চাদের সঙ্গে খুঁনসুটি করুন, পরিবারের লোকদের সঙ্গে হাঁটতে বেরিয়ে যান বা বন্ধুদের সঙ্গে কোনো খেলায় মেতে উঠুন। এতেও কিন্তু শরীরের কিছু শ্রম হয়েই যাবে। আর যেকোনো অভ্যাস বদলের জন্য সামাজিক সাহায্য বেশ কাজেও দেয়।
১০. দ্রুত ব্যায়াম করুন
গবেষকরা বলেন, ৪৫ মিনিট ধীরে ধীরে ব্যায়াম করার চেয়ে ২০ মিনিট দ্রুত ব্যায়াম করা ভালো। এই সময়ে মধ্যে আপনি দ্রুত দৌড়ানো, হাঁটা বা সাইকেল চালাতে পারেন।
১১. সহজে তৈরি করা যায় এমন খাবার খান
সহজে তৈরি করা যায় এ রকম স্বাস্থ্যকর খাবার খান। একটি ভাজা মুরগি, এক টুকরো সালাদ, সবজি দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় রাখতে পারেন। সব সময় যে এটা ঘরের তৈরি হতে হবে, তা নয়। রেস্টুরেন্টে খাবারের জন্য গেলেও এসব খাবারের অর্ডার দিতে পারেন।
১২. ঘরে বসে ব্যায়াম
সব সময় জিমে গিয়ে ব্যায়াম করা সম্ভব না হলে কিছু যন্ত্র কিনে রেখে দিন ঘরেই!
১৩. খাবারের সময় নির্দিষ্ট করুন
খাবারের সময় নির্দিষ্ট করুন। চেষ্টা করুন সময়মতো খেতে।
১৪. আঁশযুক্ত খাবার খান
একজন ব্যক্তির প্রতিদিন অন্তত ৩০ গ্রাম আঁশযুক্ত খাওয়া দরকার। এই চাহিদা পূরণ হতে পারে শাক-সবজি ও ফল থেকে। তাই ওজন নিয়ন্ত্রণে প্রচুর পরিমাণে এসব খাবার খান।
১৫. চাপকে আয়ত্তে আনতে শিখুন
মানসিক চাপ শরীরের ওপরও প্রভাব ফেলে। এটি হজমে সমস্যা করে এবং শরীরের ক্যালরি নিয়ন্ত্রণে বাজে প্রভাব ফেলে। তাই চাপ আয়ত্তে আনুন।
১৬. অগ্রাধিকার দিন
বিশেষজ্ঞরা বলেন, যখন আমরা অসুস্থ হই, তখন দৌড়ে চিকিৎসকের কাছে যাই। তবে কিছুক্ষণের জন্য ব্যায়াম করা এবং স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার জন্য সময় বের করতে পারি না। এই বিষয়গুলোতে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। নয়তো ভবিষ্যতে বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে। তাই এসবের জন্য সময় বের করুন এবং নিজের যত্ন নিন।