রোজায় স্বাস্থ্য
রোজায় কতটুকু পানি পান করবেন?
চলছে পবিত্র মাহে রমজান। সেই সঙ্গে চলছে প্রচণ্ড গরম। সুস্থভাবে এই আবহাওয়ায় রোজা রাখার ক্ষেত্রে তরলের চাহিদা পূরণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রায় ১৬ ঘণ্টা পানি ও অন্যান্য তরল থেকে বিরত থাকার পর আমাদের শরীরে যে তরলের চাহিদা হয়, সেটা যথাযথভাবে ইফতার থেকে সেহরি পর্যন্ত পূরণ করতে হয়। রোজায় রোজা রেখেও সব কাজকর্মই আমাদের করতে হয়। এতে শরীরকে প্রাণবন্ত ও সতেজ রাখতে সব রকম পুষ্টি উপাদানের গুরুত্বই বৃদ্ধি পায়। প্রচণ্ড গরম আবহাওয়ার কারণে তরলের বিষয়টি সবচেয়ে প্রাধান্য দেওয়া হয়ে থাকে।
• পানি : সর্বোত্তম তরল। এই রোজায় এবং এই গরমে ইফতার থেকে সেহরি পর্যন্ত দুই থেকে তিন লিটার পানি পান করা উচিত। পানির এই পরিমাণকে খেয়াল করার জন্য সুনির্দিষ্ট বোতল বা পরিমাপক ব্যবহার করা উচিত। সুস্থ থাকতে পানির কোনো বিকল্প নেই। পানি ত্বকে সজীবতা বজায় রাখে, খাদ্য হজম, শোষণ ও বিপাকে সাহায্য করা ছাড়াও শরীরে নানা কাজ করে। পানিতে কোনো ক্যালরি নেই। তাই পানিতে ওজন বাড়ার আশঙ্কা নেই। কারো যদি শারীরিক কারণে পানি খাওয়া নিয়ন্ত্রণ করার প্রয়োজন হয়, তাহলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে সেটি করতে হবে।
• দুধ : ক্যালসিয়াম ও প্রোটিনের চাহিদা পূরণে তরল হিসেবে দুধ অন্যতম। দুধ ও বাদাম দিয়ে তৈরি শরবত ইফতারিতে, রাতের খাবারে এক কাপ দুধ এবং সেহরিতে দুধ খাওয়া যেতে পারে। রোজায় আমাদের শরীরের ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণ করতে দুধের কোনো বিকল্প নেই। এক গ্লাস দুধ শরীরের মাংসপেশিকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। ভোররাতে ডায়াবেটিক রোগীরা ননিহীন দুধ খেলে হাইপোগ্লাইসেমিয়া প্রতিরোধ করতে পারেন। যাঁরা উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন এবং যাঁরা হৃদরোগী, তাঁরা স্কিমড দুধ অথবা লো ফ্যাট দুধ খেতে পারে। যেসব শিশু রোজা রাখে, তাদের অবশ্যই দৈনিক আড়াইশ থেকে সাড়ে তিনশ এমএল দুধ বা দুধের তৈরি খাবার খেতে হবে।
•দইয়ের শরবত বা লাচ্ছি : ইফতারে দইয়ের লাচ্ছি অনেকের কাছে পছন্দ। এটি স্বাদে অন্যতম এবং স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। লাচ্ছি মিষ্টি এবং নোনতা দুই রকম স্বাদের হয়। মিষ্টি লাচ্ছি শরীরে তাৎক্ষণিক শক্তি দেয়। আর নোনতা লাচ্ছি শরীরে ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্য রক্ষা করে। উভয় প্রকার লাচ্ছি হতেই ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও প্রোটিন পাওয়া যায়। লাচ্ছির পুষ্টিমূল্য বাড়াতে তার সঙ্গে ফলও যুক্ত করে থাকে।
• শরবত : শরবত ইফতারে সব মানুষেরই একটি পছন্দের তরল। সাধারণত কী জাতীয় শরবত খাওয়া হয়, তার ওপর সুস্বাস্থ্যের বিষয় নির্ভর করে। ইফতারে শরবত তাৎক্ষণিক শক্তি দেয়। এ ছাড়া পানির পাশাপাশি তরলের চাহিদা পূরণ করে। লেবুর শরবত, আখের গুড়ের শরবত, তোকমা, ইসুবগুলের শরবত শরীরের জন্য উপকারী। শরবতে চিনির পরিবর্তে গুড় ও মধু দিলে সেটি আরো বেশি উপকারী। খাঁটি রুহ আফজাও মাঝেমধ্যে শরবত হিসেবে খাওয়া যেতে পারে। তবে বাজারে কমার্শিয়াল, প্যাকেটজাত, রঙিন শরবত না খাওয়াই স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
• লেবুর শরবত : লেবুর শরবত থেকে পটাশিয়াম পাওয়া যায়, যেটি রক্তে ইলেকট্রোলাইটের সমতা বজায় রাখে।
• তোকমার শরবত : যাঁদের এসিডিটি ও কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা রয়েছে, তাদের জন্য এটি খুবই উপকারী। ওজন নিয়ন্ত্রণেও তোকমার শরবত অনেক কাজে আসে। ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য এটি অত্যন্ত ভালো একটি শরবত।
• ইসুবগুলের শরবত : হার্টের রোগী, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগী এবং যাঁরা কোষ্ঠকাঠিন্যে আক্রান্ত, তাঁদের জন্য উত্তম একটি শরবত। ইসুবগুলের শরবতের সঙ্গে সামান্য রুহ আফজা মিলিয়ে নেওয়া যেতে পারে।
• ডাবের পানি : ডাবের পানি থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণ খনিজ লবণ পাওয়া যায়। ডাবের পানির ক্যালরি কম হওয়ায় ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে এটি খুবই উপকারী। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য ডাবের পানি সহায়তা করে। তবে যেসব কিডনি রোগী চিকিৎসকের পরামর্শে রোজা রাখেন, তাঁরা চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ডাবের পানি গ্রহণ করবেন না।
• ফলের রস : এখন বাজারে প্রচুর মৌসুমি ফল পাওয়া যাচ্ছে। শতভাগ তাজা ফলের তৈরি রস রোজায় উত্তম একটি তরল। এই মৌসুমে অনেক রকম ফল পাওয়া যায়, যেটি বাড়িতে জুস করে খেলে ফলের পাশাপাশি তরলের চাহিদাও পূরণ করে এবং ইফতারিতে তাৎক্ষণিক শক্তির জোগান দেয়। তবে যেকোনো ফলের রসই না ছেঁকে আঁশসহ খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। আম, কলা ইত্যাদির সঙ্গে চাইলে দই বা দুধও যোগ করা যেতে পারে। এটি ফলের পুষ্টিমূল্যকে বাড়িয়ে দেয়। ঘরে তৈরি ফলের রসে চিনি ব্যবহার না করাই ভালো।
রোজায় তরলের চাহিদা পূরণে পানির পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর বিভিন্ন তরল আমাদের বেছে নিতে হবে। রোজায় চা, কফি ও কোমল পানীয় পান করা থেকে যথাসম্ভব বিরত থাকতে হবে। তবে শরীরকে কিছুটা চাঙ্গা রাখতে লেবু চা, গ্রিন টি, লাল চা, দারুচিনির চা পান করতে পারেন।
লেখক : প্রধান পুষ্টিবিদ, অ্যাপোলো হাসপাতাল।