ঈদে কোন সময় কীভাবে খাবেন
৩০ দিন রোজায় সংযমের পর আগামীকাল ঈদ। সাধারণ নিয়মের থেকে যেহেতু এই ৩০ দিন খাবারের নিয়মকানুনে কিছুটা পরিবর্তন হয়, সে জন্য সুস্থভাবে ঈদ উদযাপনে খাবারের মেন্যু স্বাস্থ্যকর হওয়া ভালো। রোজায় ইফতার, সেহরি ও রাতের খাবারের মধ্যে যেহেতু সীমাবদ্ধ থাকতে হয় এবং সেই সাথে মুখরোচক বেশ কিছু খাবারও খাওয়া হয়, তাই ঈদের মেন্যুতে ভিন্নতা এনে স্বাস্থ্যকর খাবার নির্বাচন করলে ভালো।
ঈদের সকালের মেন্যু : সাধারণ ঈদের সকালে সবাইকে নামাজ পড়তে যেতে হয়। সাধারণত হালকা খাবার যেমন ফলের জুস, মিষ্টান্ন ইত্যাদি খাবার নামাজের আগে খাওয়া হয়ে থাকে। নামাজের পর সবাই মিলে সকালের নাস্তা খেয়ে থাকে। ঈদের সকালের মেন্যুতে একটু হালকা খাবার থাকলে স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। কেননা ৩০ রোজার পর হঠাৎ করে সকালে অনেক ভারি খাবার খেয়ে নিলে তা বদহজম, পেটে ব্যথা, এসিডিটি বা যেকোনো গ্যাসট্রোইনটেসট্রাইনাল সমস্যা করতে পারে। সকালে তেল ছাড়া পরোটা বা রুটি, কার্বোহাইড্রেট হিসেবে নেওয়া যেতে পারে। সেই সাথে সবজির কোনো মেন্যু রাখা ভালো। কেননা সারাদিন মাংস ও ভারি খাবারের জন্য সবজি মেন্যু থেকে বাদ পড়ে যায়। তাই প্রোটিন হিসেবে রুটি ও সবজির সাথে ডিম বা মুরগির মাংসের কোনো মেন্যু রাখা যেতে পারে। কেউ চাইলে ডিম বা মুরগির মাংসের বদলে দুধের ডেজার্টও খেতে পারেন।
দুপুরের মেন্যু : সাধারণত পরিবারের সবাই মিলে দুপুরের খাবারটি এক সাথে খেয়ে থাকে। অথবা বাড়িতে অতিথি আসলেও তাকে খাওয়াতে হয়। তাই দুপুরের মেন্যুতে কার্বোহাইড্রেট হিসেবে পোলাও বা খিচুড়ি রাখা যেতে পারে। তবে খেয়াল রাখতে হবে পোলাও বা খিচুড়িতে ঘি ব্যবহার করা না হয়। এ ছাড়া দুপুরের মেন্যুর তালিকায় মাছের একটি রেসিপি, যেমন—মাছের কোরমা, ফিস কাটলেট, ফিস কোপতা, গ্রিলড ফিস, বেকড ফিশ ইত্যাদি মুখোরোচক মাছের তৈরি রেসিপি খেলে স্বাদও মেটে এবং স্বাস্থ্যসম্মতও হয়।
সকালের মেন্যুতে মুরগি না থাকলে দুপুরের মেন্যুতে মুরগির কাবাব, রেজালা বা রোস্ট, কোরমা ইত্যাদি রেসিপি রাখা যেতে পারে। কেউ যদি এর সাথে গরু বা খাসির মাংস যোগ করেন, সে ক্ষেত্রে খাদ্য প্রস্তুতে অবশ্যই ভারসাম্য রাখতে হবে। যেমন মুরগির রোস্ট খেলে, গরুর হাড়ি কাবাব বা স্যাঁকা তেলে ভাজা টিকিয়া কাবাব খেতে পারেন। এগুলো প্রস্তুতে কম তেলের প্রয়োজন হয়। দুপুরের মেন্যুকে আরো স্বাস্থ্য সম্মত করতে যেকোনো সালাদ অবশ্যই রাখতে হবে।
রাতের খাবার : সারাদিন বাড়িতে এবং বাইরে ঈদ আনন্দ উদযাপনে সবাইকে নানা রকম খাবার খেতে হয়। তাই রাতের খাবারের ব্যাপারে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে। অতিরিক্ত খেয়ে নিলে রাতে হজমে গোলযোগজনিত সমস্যা হতে পারে।
রাতে ভাতের সাথে একটু ভিন্ন ধর্মী মেন্যু রাখা যেতে পারে। অথবা রুটি, কাবাব জাতীয় মেন্যুও রাখা যেতে পারে। এ ছাড়া অল্প তেলে তৈরি মোরগ পোলাও বা তেহাররিও রাতের মেন্যুতে থাকতে পারে। তবে বিরিয়ানি বা তেহারির ক্ষেত্রে আনুষঙ্গিক অন্য কোনো মেন্যু না থাকলেই ভালো। এ ছাড়া ভিন্নধর্মী খাবারের মধ্যে চাইনিজ, থাই বা ইংলিশ খাবার-দাবার রাখা যেতে পারে। এই জাতীয় খাবারে ঘি বা বাটারের ব্যবহার যেহেতু হয় না, তাই স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।
ঈদের ডেজার্ট : নানা জাতীয় খাবারের পাশাপাশি সব বাড়িতেই কম বেশি মিষ্টান্ন তৈরি হয়। স্বাস্থ্যসম্মত মিষ্টান্ন তৈরির ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলোকে মাথায় রাখতে হবে। সেগুলো হলো :
- শিরা বা ভাজার পরিবর্তে দুধ দিয়ে তৈরি ডেজার্ট করা।
- মিষ্টান্ন তৈরিতে চিনির পরিবর্তে গুড়ের ব্যবহার।
- মিষ্টান্ন তৈরিতে শুকনো ফলের ব্যবহার করা।
- মিষ্টান্ন তৈরিতে সবজি বা ফলের ব্যবহার।
সাধারণত ঈদে অনেক রকম ভারি খাবারের সাথে এমন কিছু মিষ্টান্ন খেতে হয়, যা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। পাশাপাশি তৃপ্তিও পাওয়া যায়। যেমন ফলের তৈরি কাস্টার্ড, ফল ও দই দিয়ে তৈরি স্মুদি, ফ্রুটস চাট ইত্যাদি স্বাস্থ্যকর ডেজার্ট। এ ছাড়া দুধের তৈরি পায়েস, টকমিষ্টি দই, পুডিং, দুধ সেমাই এগুলো অনেক পুষ্টিকর মিষ্টান্ন। এই ধরনের মিষ্টান্ন তৈরিতে কোনো ঘি বা মাখনের প্রয়োজন হয় না। এই ধরনের ডেজার্ট থেকে প্রোটিন ও ভালো ক্যালোরি পাওয়া যায়। তাই ঈদের মেন্যুতে দুধের তৈরি ডেজার্ট থাকলে ভালো।
ঈদের সালাদ : ঈদে এমন সালাদ নির্বাচন করতে হবে যেটি ভিটামিন ও মিনারেলের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি খাবার হজমে সাহায্য করবে। সাধারণভাবে ঈদে যেহেতু মুখরোচক ও ভারি মেন্যু থাকে, তাই সালাদে ক্রিম, মেয়নেজ ইত্যাদি ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে। ঈদ মেন্যুতে অনেক মাছ মাংস থাকে। তাই সালাদে মাছ বা মাংসের ব্যবহার থেকে বিরত থাকলে ভালো হয়। সেই ক্ষেত্রে শশার সালাদ, টমেটোর সালাদ, কাঁচা পেপের সালাদ, মুলার সালাদ, সবজির সালাদ ইত্যাদি মেন্যুতে রাখলে ভালো। ড্রেসিং হিসেবে ভিনেগার, সস, দই, টকদই, লেবুর রস, ফলের রস ব্যবহার করা যেতে পারে। এ ছাড়া চিনি, লবণ, মধু, গোলমরিচ , সরিষা বাটা ও অন্যান্য হার্ব বা মশলা যুক্ত করেও সালাদটি সুস্বাদু করা যেতে পারে।
ঈদ মানে আনন্দ। আর তার সবচেয়ে বড় মাধ্যমই হলো খাওয়া দাওয়া। মুখরোচক বিভিন্ন রেসিপি মেন্যুতে থাকতেই পারে। তবে স্বাস্থ্য ও ক্যালোরির কথা বিবেচনা করে, খাদ্য গ্রহণের পরিমাণের ওপর বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে যেকোনো ভারি খাবারও পরিমাণে কম গ্রহণ করলে তা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতি করে না। সারাদিন কিছুটা হাঁটাহাঁটি এবং দুই থেকে তিন লিটার পানি গ্রহণ সবাইকে নিশ্চিত করতে হবে।
লেখক : প্রধান পুষ্টিবিদ, অ্যাপোলো হাসপাতাল।