অনুভূতি ভোঁতা করে প্যারাসিটামল!
জ্বর কিংবা শরীরে সামান্য মাথাব্যথা হলেই আজকাল সবাই চট করে খেয়ে নেন একটা-দুটো প্যারাসিটামল। তার পর কিছুক্ষণের মধ্যেই ব্যথা গায়েব। তবে এই ওষুধ শুধু ব্যথাই গায়েব করছে না, সে সঙ্গে হয়তো আপনার আনন্দ বা অনুভূতিকেও গায়েব করে দিচ্ছে!
অবাক করার মতো তথ্য হলেও সম্প্রতি এক গবেষণায় এমনটিই দাবি করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের একদল গবেষক বলছেন, প্যারাসিটামল বা অ্যাসিটামিনোফেন-জাতীয় ওষুধ সেবনের ফলে ব্যথা সারার পাশাপাশি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে কমে যেতে পারে আপনার আবেগ-অনুভূতি।
গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ গবেষণার ফলাফল যদি সত্যি হয়, তাহলে এর অর্থ দাঁড়াবে বাজারের সবচেয়ে জনপ্রিয় এই ওষুধগুলো ব্যথার পাশাপাশি আনন্দের অনুভূতিও কমিয়ে দিয়ে আসছে।
এর আগে এক গবেষণায় দেখা গিয়েছিল, প্যারাসিটামল-জাতীয় ওষুধ দ্রুত শরীরের ব্যথা উপশম করতে পারে।
এবারের গবেষণায় দেখা গেল, যাঁরা এই ব্যথানাশক সেবন করেন, তাঁরা মানসিক কষ্টও কম অনুভব করেন। বলা ভালো, মস্তিষ্কের একই অংশ এ দুই ধরনের ব্যথা বা কষ্টের অনুভূতি জানান দেয়।
সম্প্রতি সাইকোলজিক্যাল জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখানো হয়েছে, প্যারাসিটামল আমাদের ব্যথা কমাতে যেমন কাজ করে, তেমনি একই সঙ্গে এটা মানুষের মানসিক বিভিন্ন প্রতিক্রিয়াও নিস্তেজ করে দেয়।
ওহাইও স্টেট ইউনিভার্সিটির সমাজতাত্ত্বিক মনোবিজ্ঞানী জিওফ্রে ডুরসো বলেন, ‘শুধু ব্যথানাশক হওয়ার বদলে অ্যাসিটামিনোফেন-জাতীয় ওষুধ সব ধরনের অনুভূতিনাশক হিসেবে কাজ করে।’
জিওফ্রে ডুরসো ৮২ শিক্ষার্থীকে এক হাজার মিলিগ্রাম মাত্রার অ্যাসিটামিনোফেন অথবা একই ধরনের দেখতে ডামি ওষুধ প্লাসিবো গ্রহণ করতে দেন। এক ঘণ্টা পর ওষুধগুলো কাজ করা শুরু করলে তিনি ওই ৮২ শিক্ষার্থীকে ৪০টি ফটোগ্রাফ বা স্থিরচিত্রের একটি সিরিজ দেখতে দেন। ছবিগুলোর মধ্যে ছিল পুষ্টিহীনতায় ভোগা শিশুর দল এবং বিড়াল নিয়ে খেলা করা আনন্দিত শিশুর দলের আলাদা ছবি। শিক্ষার্থীদের মানসিক প্রতিক্রিয়া দেখার জন্যই এ ধরনের ছবি নির্বাচন করা হয়।
এর পর এই ছবিগুলোর মধ্যে ইতিবাচক ও নেতিবাচক মান অনুযায়ী নম্বর দিতে বলা হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে ইতিবাচক ছবির জন্য +৫ ও সবচেয়ে নেতিবাচক ছবির জন্য -৫ নম্বর দিতে বলেন ডুরসো।
শিক্ষার্থীরা ছবিগুলো প্রথমে একবার পর্যবেক্ষণ করে নম্বর দেয়। এর পর দ্বিতীয়বার দেখে আবারো নম্বর দিতে বলা হয়। এ সময় প্রতিটি ছবি দেখে তাদের প্রতিক্রিয়া চাওয়া হয়। শূন্য নম্বর দেওয়ার অর্থ হলো, কোনো প্রতিক্রিয়া নেই এবং ১০ নম্বর দেওয়ার অর্থ হলো, তীব্র মানসিক প্রতিক্রিয়া হয়েছে।
এই পরীক্ষার পর দেখা যায়, যে শিক্ষার্থীরা প্যারাসিটামল সেবন করেছিল, তারা ছবিগুলোর ব্যাপারে কম প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। আনন্দের ছবিগুলোও তাদের কাছে কম ইতিবাচক মনে হয়েছে। এমনকি চরম দুর্দশাগ্রস্ত শিশুদের ছবিও তাদের খুব একটা বিপর্যস্ত করতে পারেনি।
এ গবেষণার সহগবেষক ব্যাল্ডউইন ওয়ে বলেন, ‘অ্যাসিটামিনোফেন ও প্লাসিবো সেবনকারীদের মধ্যে অনুভূতির প্রতিক্রিয়া দুই ধরনের।’
যদিও এ দুই গ্রুপের প্রতিক্রিয়ার মধ্যে খুব বড় মাত্রার কোনো পার্থক্য নেই। যেসব শিক্ষার্থী প্লাসিবো সেবন করেছিল, তারা যখন সবচেয়ে যন্ত্রণাদায়ক ও আনন্দের ছবিগুলো দেখছিল তখন তাদের গড় মানসিক প্রতিক্রিয়া ছিল ৬ দশমিক ৭৬ মাত্রার। আর যারা প্যারাসিটামল সেবন করেছিল, একই ছবি দেখে তাদের গড় মানসিক প্রতিক্রিয়ার মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৮৫ মাত্রার।
জিওফ্রে ডুরসো জানান, এখানেই শেষ নয়। আইবুপ্রোফেন ও অ্যাসপিরিনের মতো ব্যথানাশকগুলো সেবন করলেও একই ধরনের প্রতিক্রিয়া হয় কি না, তা এখন গবেষণা করে দেখবেন তিনি।