গরুর মাংসের কাবাব না কি তরকারি, কোনটি স্বাস্থ্যকর?
গরুর মাংস প্রাণীজ প্রোটিনের মধ্যে খুবই সুস্বাদু। গরুর মাংস দিয়ে নানা রকম রেসিপি তৈরি করা সম্ভব। হারি কাবার, জালি কাবাব, মোতি কাবাব, শিক কাবাব, সুতি কাবাব ছাড়াও আরো নানা জাতের কাবাব গরুর মাংস দিয়ে সম্ভব। আর তরকারি বা কারি হিসেবে গরুকে সাধারণত আলু ছাড়া বা আলু দিয়ে রান্না করা হয়ে থাকে। সাধারণ এই তরকারির পাশাপাশি গরুর মাংসের রেজালা বা কোরমাও হয়ে থাকে। ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে গরুর নানা রকমের রেসিপি তৈরি করা হয়। কিন্তু স্বাস্থ্যকর উপায়ে গরুর মাংস খাবারের ক্ষেত্রে তার প্রস্তুত প্রণালি বা রন্ধন প্রণালি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা রান্নার ওপরই নির্ভর করবে গরুর মাংস কতটা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হবে।
কাবাব
যেকোনো কাবাব তৈরির ক্ষেত্রে গরুর মাংসের কিমা অথবা বাটা অথবা ছোটো করে কাটা হয়ে থাকে। এতে গরুর মাংসে বিদ্যমান সম্পৃক্ত চর্বি অনেকটা কমে যায়। বিভিন্ন মসল্লার ব্যবহার করে শুধু গরুর মাংস দিয়ে অনেক বেশি স্বাস্থ্যকর রেসিপি তৈরি করা যায়। জালি কাবাব প্রস্তুতে গরুর মাংসের কিমার সাথে অন্যান্য খাদ্য উপাদান ব্যবহার করা হয় বলে গরুর মাংসের পরিমাণ কিছুটা কম গ্রহণ করা হয়। আবার শিক কাবাবে বেশ কিছু মসলার ব্যবহার করা হয়। শিক কাবাব তৈরির প্রক্রিয়ায় মাংসের চর্বি পুরোটাই নষ্ট হয়ে যায়। যদিও কয়লার ব্যবহার করা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়,তাই কয়লার ব্যবহার না করে শিক কাবাব তৈরি করা গেলে শিক কাবাব স্বাস্থ্যকর।
গরুর মাংসের টিকিয়া কাবাবে গরুর মাংসকে বেটে ডাল দিয়ে করা হয়ে থাকে। এতে মাংস ও ডাল সমপরিমাণে নিলে প্রাণীজ প্রোটিন ও উদ্ভিজ প্রোটিন সম পরিমাণ গ্রহণ করা হয়।
হারি কাবাবেও মাংসের যেই অংশটুকু নেওয়া হয়। এতে চর্বির পরিমাণ কম থাকে।
গরুর মাংসের তরকারি
সাধারণত গুরুর মাংসের প্রচলিত তরকারি বা কারি বলতে আমরা আলু দিয়ে গরুর মাংসের কারিকেই বোঝি। এটি উৎসব ছাড়াও আমরা সাধারণ সময় খেয়ে থাকি। কিছু মসলা দিয়ে মাংসকে কষিয়ে,আলু দিয়ে ঝোল আকারে এই তরকারি প্রস্তুত করা হয়। এই ধরনের তরকারির স্বাদ বাড়ানোর জন্য সাধারণত মাংসের চর্বি ফেলা হয় না। মসলা বিশেষ করে লাল মরিচেরও বেশ ব্যবহার করা হয়। এই রেসিপিতে ঝোল সুস্বাদু হয়। এতে মাংসের সাথে প্রচুর পরিমাণ ঝোলও খাওয়া পড়ে।
স্বাস্থ্যের বিচারে গরুর মাংস যেকোনোভাবেই রান্না করা হোক না কেন,স্বাস্থ্যের ক্ষতি কমাতে এর পরিমাণ মেপে খাওয়া অত্যন্ত জরুরি। গরুর মাংসের তরকারি খেলে ঝোল বেশি খাওয়া পড়ে। এটি রক্তের কোলেস্টেরল বাড়িয়ে দিতে পারে। ভাত বা পোলাও বা রুটির সাথে গরুর মাংসের তরকারি আলু দিয়ে খেলে এর কারণে শর্করার পরিমাণ বেড়ে যা্য়। যেটি ওজন বাড়ায়।
অপর দিকে কাবাব প্রস্তুতের সময় চর্বি কমে যায়। জালি কাবাব ছাড়া অন্যান্য কাবাব প্রস্তুতিতে অন্যান্য শর্করার ব্যবহার থাকে না। কাবাব নিজেই অনেক সুস্বাদু বলে এটি খাওয়ার জন্য খুব বেশি ভাত পোলাও বা রুটি খাওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। কাবাব প্রস্তুত করতে যেসব উপাদান লাগে, সেগুলো কাবাবের সোডিয়ামের মাত্রা কিছুটা বাড়িয়ে দেয়। এ ছাড়া কাবাব শুকনো অবস্থায় থাকে বলে এর মধ্যে সোডিয়ামের মাত্রা ও স্বাদ বেশি থাকে।
অপরদিকে গরুর মাংসের তরকারিতে চাইলেই পরিমিত পরিমাণে লবণ ব্যবহার করা সম্ভব।
কাবাব সাধারণত ঝলসানো বা পোড়ানো হয় বলে এতে নাইট্রাসের পরিমাণ বেশি হয়। এটি ক্যানসারের জন্য দায়ী। অপর দিকে গরুর মাংসের কারিকে ঝলসানো বা পোড়ানোর প্রয়োজন হয় না। এতে নাইট্রাস থাকে না বললেই চলে।
গরুর মাংসের তরকারির মধ্যে চর্বি ফেলা হয় না। এতে তেল বেশি দিয়ে রান্না করার কারণে চর্বির মাত্রা বেশি থাকে। অপরদিকে কাবাব ঝলসানো বা পোড়ানো হয় এবং অল্প তেল ব্যবহার করে প্রস্তত করা হয় বলে চর্বি পরিমাণ কম থাকে। তবে উভয় প্রকার রন্নায় চর্বির মাত্রা নির্ভর করবে রান্নায় ব্যবহৃত তেলের মাত্রার ওপর।
গরুর মাংস অনেক পুষ্টি সম্মত একটি খাবার। কিন্তু গরুর মাংসের সঠিক পুষ্টি পেতে হলে সঠিক রান্নার প্রণালি খুব গুরুত্বপূর্ণ। তাই বুঝতে হবে কোন রান্নার প্রণালিটি আপনার জন্য কম ক্ষতিকর। এ ছাড়া মাসে দুই থেকে তিন বারের বেশি কোনো ধরনের রেসিপি খাওয়াই উচিত নয়।