মেলা ও উৎসবে স্বাস্থ্য সচেতনতা
এখন বিভিন্ন মেলা ও উৎসবের মৌসুম। শুরু হয়েছে বইমেলা। শেষ হচ্ছে বাণিজ্যমেলা। আসছে পহেলা ফাল্গুন ও ভালোবাসা দিবসের মতো উৎসব। আমরা অধিকাংশ মানুষই পছন্দ করি এই দিনগুলোতে অংশ নিতে। তবে প্রচণ্ড ভিড় বা জনস্রোত কখনো কখনো স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তাই মেলা বা উৎসবে যেতে কিছু বিষয় লক্ষ রাখুন।
বাইরে বের হলে
এখন শীতের প্রায় শেষ। এ সময় বাতাসে প্রচুর ধূলিকণা থাকে। এগুলো বেশ ক্ষতিকর। হাঁপানি, সিওপিডি আক্রান্তদের এসব জায়গায় খুব সাবধানে যেতে হবে। কারণ বাতাসের এ ধুলোবালি আপনার শ্বাসকষ্ট বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। এগুলোর কারণে শ্বাসনালি সংকুচিত হয়।
এ ছাড়া জনস্রোতের মধ্যে অনেকের বিভিন্ন রোগবালাই থাকতেই পারে। হাঁচি-কাশির মাধ্যমে ছড়ায় এমন রোগগুলো খুব সহজেই আপনাকে আক্রান্ত করতে পারে। তাই সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। এ সময় বাড়ির বাইরে বের হলে মাস্ক ব্যবহার করুন।
যাঁদের যক্ষা আছে, তাঁরা অবশ্যই মাস্ক পড়ুন। আপনার কফ-থুতু যেখানে সেখানে ফেলবেন না। হাঁচি-কাশি এলে মুখে রুমাল চেপে ধরুন।
পানি পান করুন
বইমেলা বা বাণিজ্যমেলায় দীর্ঘ সময় ধরে হাঁটতে হয়। পয়লা ফাল্গুন বা ভালোবাসা দিবসেও অনেকে বন্ধুদের সঙ্গে সারা দিন ঘোরাঘুরি করেন। এতে প্রচুর ঘাম হয়। এর ফলে দেখা দিতে পারে পানিস্বল্পতা। এটি প্রতিরোধে প্রচুর পানি পান করুন। বাইরের খোলা পানি পান করবেন না। সবচেয়ে ভালো হয় মেলায় যাওয়ার সময় বাসা থেকে বোতলে করে পানি ভরে নিয়ে গেলে। যদি বেশি ঘাম হয়, তাহলে প্রয়োজনে স্যালাইন পান করতে পারেন।
শিশুরা সঙ্গে থাকলে তাদের প্রতিও খেয়াল রাখবেন। কারণ শিশুদের পানিস্বল্পতা বেশি হয়।
বাইরের খাবার এড়িয়ে যেতে চেষ্টা করুন
মেলায় গেলেন তো বাইরের চটপটি, ফুচকা খাবেন না তা কি হয়? আপনাদের বলতে চাই, সম্প্রতি আইসিডিডিআরবির এক গবেষণায় দেখা গেছে, বাসার বাইরের খাবারের প্রায় ৮৭ ভাগ জীবাণুযুক্ত। বাইরের এ খাবারগুলো থেকে হতে পারে বিভিন্ন ধরনের পেটের পীড়া। তাই চেষ্টা করুন বাইরের খাবার পরিহার করার। প্রয়োজনে বাসায় খাবার বানিয়ে বাক্সে ভরে নিয়ে যেতে পারেন।
ডায়াবেটিস রোগীর ক্ষেত্রে
ভিড়ের মধ্যে ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তে শর্করা কমে যেতে পারে এবং এতে তিনি হাইপোগ্লাইসেমিয়ায় আক্রান্ত হতে পারেন। যদি ডায়াবেটিস আক্রান্ত কেউ হঠাৎ করে অজ্ঞান হয়ে যান, বেশি ঘাম হয়, মাথা ঘোরে, মেজাজ খিটখিটে হয়, জ্ঞান হারানোর মতো মনে হয় তাহলে বুঝবেন আপনি হাইপোগ্লাইসেমিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন। তাই দেরি না করে মিষ্টি চকোলেট, মধু মুখে পুরে দিন। ভিড় এড়িয়ে চলুন। এতেও সুস্থ বোধ না করলে বা অজ্ঞান হয়ে গেলে দ্রুত হাসপাতালে নিন।
যদি অন্যান্য রোগের কারণেও কেউ বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েন তবে পার্শ্ববর্তী স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যান।
পায়ের ব্যথায়
মেলায় বসার জায়গার অভাব থাকে। সারাক্ষণ শুধু হাঁটা আর হাঁটা। এতে পায়ে পানি জমতে পারে, ব্যথা হতে পারে। পায়ে পানি জমলে ভয়ের কিছু নেই। রাতে ঘুমানোর সময় পায়ের নিচে বালিশ দিয়ে পা উঁচু করুন। একটানা বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে না থেকে কিছুক্ষণের জন্য বসুন। এতে আরাম পাবেন। এ সময় সেরে নিতে পারেন কিছু ব্যায়াম। যেমন সেলাই মেশিন চালানোর সময় পায়ের যে কাজ করতে হয় তেমনটি করতে পারেন। তাহলে পায়ে পানিও আসবে না বা ব্যথাও কম হবে।
বাসায় ফেরার পর
বাসায় ফেরার পর কুসুম গরম পানিতে লবণ মিশিয়ে নাক-মুখ ভালো করে পরিষ্কার করুন। বাসায় এসে সাথে সাথে হাত-মুখ ধুয়ে নিন। যদি দেখেন শ্বাসকষ্ট বেশি হচ্ছে তবে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ইনহেলার ব্যবহার করুন।
ডা. হুমায়ুন কবীর হিমু : মেডিকেল অফিসার, সিভিল সার্জন অফিস, গোপালগঞ্জ