মাইগ্রেনের ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায়
মাইগ্রেন হলো মাথাব্যথার সর্বোচ্চ পর্যায় যেখানে মাথার যেকোনো এক পাশে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভূত হয়। এই ব্যথার সময় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অনেকে অসুস্থ বোধ করেন। এমনকি আলো বা শব্দ সহ্য করতে পারেন না। মস্তিষ্কের রাসায়নিক গঠনে, স্নায়ু এবং রক্তনালীতে অস্থায়ী পরিবর্তনের ফলস্বরূপ এরকম ব্যথার আধিক্য হতে পারে। এছাড়া জিনগত বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করেও মাইগ্রেন বিভিন্ন মানুষের মধ্যে বিভিন্নভাবে প্রভাব ফেলে। কখনো প্রচণ্ড শারীরিক চাপ, ক্লান্তি ও নির্দিষ্ট কোন খাবার বা পানীয় গ্রহণ মাইগ্রেন ব্যথার সূত্রপাত ঘটাতে পারে। আজ জানতে পাবরবেন, কিভাবে এই মাইগ্রেনের ব্যথা কমানো যায়।
মাইগ্রেনের ব্যাথা কমানোর উপায়সমূহ
অনুকূল পরিবেশ তৈরি করা
আলো এবং শব্দ অধিকাংশ সময় মাইগ্রেন বৃদ্ধির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এক্ষেত্রে সর্বপ্রথম একটি শান্ত ও অন্ধকার জায়গা খুঁজে বের করা জরুরি। সম্ভব হলে অন্ধকার ঘরে কিছু শুয়ে থাকা অথবা ঘুমের চেষ্টা করা যেতে পারে। অনেক সময় সান্ধ্যকালীন পরিবেশে শান্ত প্রকৃতির গান মাইগ্রেনের ব্যথা উপশমে কাজ দেয়।
অ্যারোমাথেরাপিতে ব্যবহৃত কিছু তেল আছে যেগুলো মাথার ব্যথা কমাতে সাহায্য করতে পারে। তবে যাদের সুগন্ধি সংবেদনশীলতা আছে তারা এই তেলগুলো ব্যবহার করার আগে নিশ্চিত হয়ে প্রয়োজন যে সেগুলোর গন্ধে মাথাব্যথা আরও বেড়ে যাচ্ছে কি না। এই তেলগুলো হলো- ল্যাভেন্ডার, পুদিনা, মৌরি, রসুন এবং গোলাপের তেল।
আলোক সংবেদনশীলদের জন্য সানগ্লাস পড়াটা আবশ্যক। যখনই আলো বিরক্তিকর হয় তখনই সানগ্লাস পড়ে ফেলা দরকার, এমনকি বাড়ির ভিতরে থাকলেও।
সানগ্লাসের উপরে ফাঁকা অংশ দিয়ে আলো প্রবেশ ঠেকানোর জন্য ক্যাপ ব্যবহার করা যেতে পারে। সব মিলিয়ে শ্রবণ, ঘ্রাণ এবং দৃষ্টি; এই তিন ইন্দ্রিয়ের জন্য অনুকূল পরিবেশের ব্যবস্থা মাইগ্রেনের ব্যথা হাল্কা করতে পারে।
গরম বা ঠাণ্ডা পরশ
প্রচণ্ড গরমের সময় ঠাণ্ডা পরশ আর শীতকালে গরমের পরশ শরীর ও মন দুটোকেই আরাম দেয়। বাইরে থেকে ঘরে আসার পর বাইরের অতিরিক্ত শব্দ, অধিক পরিশ্রমের কারণে দেহ ও মন দুটোরই খুব খারাপ অবস্থা থাকে। এ অবস্থায় মাইগ্রেনের ব্যথা হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। এ সময় গরম স্নান বা ঝরনা পেশী শিথিল করে মুড ভালো করে দিতে পারে। সাথে মাথা ব্যথাটাও অনেকটা কমে যায়।
পেশী সংকোচনের কারণে মাইগ্রেনে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ঘাড় বা মাথার পিছনের অংশে বা সর্বত্র তাপ প্রযোগটা অনেক কাজে দেয়।
প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম মাইগ্রেনের ব্যথা উপশমের জন্য কার্যকরী উপায়
মানসিক চাপমুক্তির পাশাপাশি দৈহিক প্রশান্তির ব্যবস্থা
শারীরিক অনুশীলন শুধু শরীরের ফিটনেসের জন্য নয়, বিভিন্ন স্বাস্থ্য ঝুঁকি এড়ানোর পাশাপাশি মনের স্বাস্থ্যও উন্নত করে। ধ্যান, যোগব্যায়াম, অনেক শ্রমসাধ্য কাজের পর কিছুক্ষণ কিছু না করে চুপচাপ বসে থাকা, কাজের ফাঁকে ছোট্ট ন্যাপ নেওয়া ইত্যাদি কাজগুলো শরীর ও মনকে নতুন করে প্রফুল্লতা দেয়।
অনুশীলনের সময় খেয়াল রাখতে হবে কতটুকু ব্যায়ামে কেমন প্রভাব পড়ছে। ঘন ঘন মাইগ্রেন হওয়া ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে পর পর দুটি মাইগ্রেনের মধ্যবর্তী সময়টাকে বাড়িয়ে নেয়া যায় ব্যায়ামের মাধ্যমে। এভাবে এক সময় মাথা ব্যাথার প্রচণ্ডতা আর থাকে না।
প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম
খুব বেশি বা খুব কম ঘুম অথবা ঘুমে ব্যাঘাত ঘটা মাইগ্রেনের ব্যথার খুব সাধারণ একটি কারণ। ঘুমাতে যাওয়া এবং ঘুম থেকে ওঠার জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করা উচিত। অতঃপর সেই সময়গুলো নিত্যদিন অনুসরণ করা দরকার, এমনকি ছুটির দিনগুলোতেও ব্যতয় হওয়া চলবে না। এটি দীর্ঘমেয়াদে মাইগ্রেনের ব্যথা উপশমের জন্য কার্যকরী উপায়।
প্রতিদিন স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্যাভ্যাস বজায়
কোন একদিন মানসিক দুরবস্থাজনিত কারণে একবেলা খাবার গ্রহণ এড়িয়ে গেলে রক্তে শর্করার পরিমাণ কমে যেতে পারে, যা মাইগ্রেন উদ্রেকে ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারে। তাই যে অবস্থাতেই হোক না কেন, প্রতিদিনের খাদ্যাভাস নষ্ট করা উচিত নয়। এই নিয়ম এমনকি প্রতিদিনের পানি পানের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। কারও কারেও ক্ষেত্রে হালকা ডিহাইড্রেশনও মাইগ্রেনের কারণ হতে পারে।
এরপর দ্বিতীয় পর্যায়ে আসে খাবারের তালিকায় স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্য উপাদান থাকা। অপুষ্টিজনিত কারণে সারা শরীরের যেকোনো সমস্যার দরুণ মাইগ্রেনের সূত্রপাত ঘটাতে পারে। ফলে সঠিক খাবার গ্রহণ না করায় সেই সমস্যার পাশাপাশি মাইগ্রেনটা অসহ্য হয়ে উঠতে পারে। তাই মাইগ্রেন থেকে বাঁচতে সঠিক ডায়েটের কোনো বিকল্প নেই।
তাৎক্ষণিকভাবে মাইগ্রেন কমানোটা বেশ কষ্টসাধ্য ব্যাপারে। স্বভাবতই অসহ্য মাথা ব্যথার সাথে লড়াইয়ের সময় অন্যান্য প্রয়োজনীয় করণীয়গুলোর কথা ভাবার অবকাশ থাকে না। এক্ষেত্রে আশেপাশের কাছের মানুষেরা তাদেরকে সাহায্য করতে পারেন। তাছাড়া মাত্রাতিরিক্ত হলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।