বিসিএস প্রস্তুতি
প্রিলির জন্য কম পড়ুন, সঠিকভাবে পড়ুন
বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা এ মাসের ৮ তারিখ। হাতে আছে মাত্র চার দিন সময়। যাঁরা বিসিএস পরীক্ষার জন্য এতদিন কষ্ট করে প্রস্তুতি নিয়েছেন, তাঁরা এরই মধ্যে সিলেবাস অনুসারে নিজেকে প্রস্তুত করে নিয়েছেন অনেকটাই। আর যাঁরা হাতে সময় পাননি কিংবা এতদিন সন্তোষজনক প্রস্তুতি নিতে পারেননি, তাঁরাও এই শেষ কয়েকটা দিন ভালোভাবে কাজে লাগাতে পারেন।
এই শেষ কয়েকটা দিন প্রস্তুতির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ‘শেষ সময়ের প্রস্তুতি’ না বলে আমি এ সময়ের প্রস্তুতিকে বলব ‘শেষ সময়ের প্রস্তুতির ব্যবস্থাপনা’। এ কথা বলছি এ কারণে যে, এ সময় প্রত্যেক পরীক্ষার্থী স্নায়ুর চাপে ভোগেন। বুঝে উঠতে পারেন না, কীভাবে এ সময়কে সর্বোচ্চ ব্যবহার করবেন।
এ জন্য স্বাভাবিক প্রস্তুতিতে ব্যাঘাত ঘটে। তা ছাড়া যাঁদের একেবারেই প্রথম চাকরির পরীক্ষা, তাঁরা বেশি চাপ অনুভব করেন। অথচ সঠিকভাবে এই কয়েকটি দিন ব্যবহার করে আপনি ভালো নম্বর নিশ্চিত করতে পারেন। নিচের কয়েকটি বিষয়কে আমি এ সময় গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছি।
১. সিদ্ধান্ত নিন, আপনি এ সময় সবকিছু পড়বেন না। শুধু গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলোই পড়বেন। প্রিলিতে আপনাকে টিকতেই হবে—এ চিন্তা না করে বরং ভাবুন, আপনি আপনার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন, বাকিটা ভাগ্য। বেশি চাপ অনুভব করলে আপনার সব প্রস্তুতিই বিফলে যাবে। যাঁরা এর আগে বিসিএস বা অন্য চাকরির পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন, তাঁরা হয়তো জানেন, কীভাবে এ সময় চাপ অনুভব করা আপনার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
২. বিষয়ভিত্তিক গুরুত্বপূর্ণ অংশ বাছাই করুন। কম সময়ে অধিক প্রশ্ন কমন পেতে এর কোনো বিকল্প নেই। তা ছাড়া হাতেও বেশি সময় নেই। আপনি যদি বুঝতে পারেন কোন অংশগুলো আপনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ, তবেই কেবল আপনি অল্প প্রস্তুতিতে ভালো পরীক্ষা দিতে পারবেন। এ জন্য প্রয়োজনে বিগত বছরগুলোতে কোন চ্যাপ্টারগুলো হতে বেশি প্রশ্ন এসেছে, তা দেখে নিন।
৩. সাধারণ জ্ঞান অংশে যত কম সম্ভব সময় দিন। এ অংশে অনেক সময় দিয়ে আপনি যে মার্কস পাবেন, অন্য অংশে অনেক কম সময় দিয়ে আপনি অনেক বেশি মার্কস পাবেন।
৪. বাংলা ব্যাকরণ অংশের গুরুত্বপূর্ণ চ্যাপ্টারগুলো দেখে নিতে পারেন। গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন লেখকের লেখাগুলো দেখে নিতে পারেন। সব চ্যাপ্টার পড়তে গেলে অন্য অংশে সময় দিতে পারবেন না।
৫. অঙ্কের সূত্রগুলো দেখে নিতে পারেন। সূত্রগুলো জানা থাকলে অঙ্ক সঠিকভাবে করে নিতে পারবেন। মানসিক দক্ষতা অংশ নিয়ে খুব মাথাব্যথা না দেখালেও সম্ভবত চলবে।
৬. কম্পিউটার অংশে কম পড়ে অনেক মার্কস তুলতে পারবেন। তাই এই অংশ দেখতে পারেন।
৭. বিজ্ঞানের ক্ষেত্রেও একই কথা, একবার পুরো বই দেখে নিতে পারেন। সম্ভব না হলে গুরুত্বপূর্ণ চ্যাপ্টারগুলো পড়ে নিতে পারেন।
৮. ইংরেজির ব্যাকরণ অংশের নিয়মগুলো দেখে নিতে পারেন। এই অংশে কম সময়ে অনেক প্রশ্ন কমন পেতে পারেন। আর সাহিত্যের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন সাহিত্যিকের সাহিত্যকর্ম দেখে নিতে পারেন।
৯. আমি ধরে নিচ্ছি, যাঁরা মোটামুটি সন্তোষজনক প্রস্তুতি এরই মধ্যে নিয়েছেন, তাঁরা বিগত বছরের প্রশ্ন পড়া শেষ করেছেন। যদি কারো ভুলবশত বা অন্য কারণে পড়া না হয়ে থাকে, তাহলে পড়ে ফেলুন। বিগত বছরের অনেক প্রশ্ন রিপিট হয়।
১০. সিলেবাসের অংশগুলোকে সামগ্রিকভাবে ভাবুন। কোনো অংশে অধিক গুরুত্ব দিতে গিয়ে বাকি অংশের প্রস্তুতিকে বাধাগ্রস্ত করবেন না।
১১. একটা তালিকা করে নিতে পারেন, সামনের কোন দিন আপনি কী পড়বেন। এমনভাবেই তালিকাটি তৈরি করবেন, যা শেষ করা আপনার দ্বারা সম্ভব। প্রতিদিন তালিকায় উল্লেখিত অংশের প্রস্তুতি সম্পন্ন করুন।
১২. পরীক্ষার হলে সময় ব্যবস্থাপনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই কয়েকটি মডেল টেস্ট দিয়ে ফেলুন ঘড়ি ধরে। আর দেখুন, আপনার সময়ের ব্যবহার ঠিক আছে কি না। ঠিক না থাকলে কারণ বের করুন। পরীক্ষার হলে কোন অংশ আগে ধরবেন আর কোন অংশ পরে, তা ঠিক করে সে হিসেবেই মডেল টেস্ট দিন।
১৩. সব প্রশ্নের উত্তর দেবেন না, এ সিদ্ধান্ত নিন। সব প্রশ্নের উত্তর কারো দ্বারাই দেওয়া সম্ভব হবে না। শুধু নিশ্চিত হয়েই উত্তর দেবেন।
১৪. যে প্রশ্নের উত্তর জানা নেই, তা প্রশ্ন দেখে বোঝামাত্রই একটি চিহ্ন দিয়ে পরের প্রশ্নে চলে যান। পরে সময় পেলে আবার এ প্রশ্নের পেছনে সময় ব্যয় করতে পারবেন।
১৫. শেষ প্রশ্নটি পর্যন্ত আপনার নিশ্চিতভাবে জানা উত্তরগুলো দ্রুত লেখার পর আপনি অতিরিক্ত সময় পেলেই কেবল চিন্তা করে দেওয়ার মতো প্রশ্নগুলোতে যাবেন। এখানে যে কয়টি উত্তর করতে পারবেন, সে কয়টাই আপনার বোনাস।
১৬. মডেল টেস্ট যেভাবে অনুশীলন করেছেন, সেভাবেই পরীক্ষার হলে পরীক্ষা দেবেন। নতুন করে পরিকল্পনা পরিবর্তন করবেন না।
১৭. পরীক্ষার আগের দিন নির্ভার থাকুন। চাপ অনুভব করলেই বিপদ। এতদিনের প্রস্তুতি বিফলে যাবে। আগের রাতে আমার পরামর্শ হলো, কিছু পড়বেন না। শুধু পরীক্ষা-সংক্রান্ত জিনিসপত্র, যেমন—প্রবেশপত্র, কলম, পেনসিল ইত্যাদি গুছিয়ে রাখুন। একটু আগেই ঘুমিয়ে পড়ুন।
১৮. পরীক্ষার দিন একটু সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠুন। পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে দূরত্বের কথা মাথায় রেখে আগেভাগেই বেরিয়ে পড়ুন, যাতে পরীক্ষা শুরুর বেশ আগেই হলে পৌঁছে যেতে পারেন।
সবশেষে, সবার জন্য শুভকামনা রইল।
লেখক : এএসপি (প্রবেশনার), ৩৩তম বিসিএস।