জন্মদিন
বিপ্লবী নেতা চেকে চেন?
চে গেভারা। এক মহান বিপ্লবী নেতা। একাধারে ছিলেন সংগ্রামী, বিপ্লবী, চিকিৎসক, রাজনীতিবিদ, সাহিত্যিক, কবি। সাধারণ মানুষের জন্য তিনি তাঁর জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নিঃস্বার্থভাবে সংগ্রাম করেছেন। লড়েছেন যুদ্ধের ময়দানে অক্লান্তভাবে। শেষ পর্যন্ত প্রাণ দিয়েছেন, কিন্তু বিপ্লব আর সংগ্রামে কখনো মাথা নোয়াননি।
চে গেভারা জন্ম নিয়েছিলেন আর্জেন্টিনায়, তবে তিনি ছিলেন কিউবার বিপ্লবী সমাজতন্ত্রী নেতা। আর্নেস্তো গেভারা দে লা সের্না ছিল তাঁর পুরো নাম। চে ছিল তাঁর উপাধি। ১৯২৮ সালের এই দিনে তিনি আর্জেন্টিনার রোজারিও এলাকায় এক মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মেছিলেন। বুয়েনস আইরেস বিশ্ববিদ্যালয়ে মেডিসিনের ওপর পড়ালেখা করেছিলেন তিনি। এই সময়েই তিনি দক্ষিণ এবং মধ্য আমেরিকার বহু জায়গায় ঘুরে বেড়ান।
এ সময় চে দেখলেন যে, এই অঞ্চলগুলোতে তীব্র দারিদ্র্য- আর একইসাথে এখানকার সাধারণ মানুষ কতটা বঞ্চিত, শোষিত আর নিপীড়িত। মার্কসবাদে বিশ্বাসী আর্নেস্তো তখন এই পরিস্থিতি বদলে দেওয়ার সংকল্প করেন। এ জন্য একটি পথই রয়েছে বলে তাঁর বিশ্বাস ছিল- সশস্ত্র বিপ্লব।
১৯৫৪ সালে চে মেক্সিকো যান। সে বছরই তিনি কিউবার বিপ্লবী নেতা ফিদেল কাস্ত্রোর সাথে পরিচিত হন। কাস্ত্রোর ‘টুয়েন্টি সিক্সথ জুলাই মুভমেন্ট’-এ যোগ দেন তিনি। কিউবার স্বৈরশাসক ফালিগেনসিও বাতিস্তার সরকারের বিরুদ্ধে গেরিলা যুদ্ধে নামে এই বাহিনী। সাময়িকভাবে সফল এই যুদ্ধে আর্নেস্তোর ছিল বিশাল অবদান।
১৯৫৯ সালে বাতিস্তাকে উৎখাত করতে সক্ষম হন কাস্ত্রো। ১৯৫৯ থেকে ১৯৬১, কাস্ত্রোর শাসনামলে গেভারা ছিলেন কিউবার ন্যাশনাল ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট। এ সময় তিনি কিউবার রাষ্ট্রদূত হিসেবে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ঘুরে বেড়ান।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একজন প্রতিপক্ষ হিসেবেই ধরা হতো তাঁকে। তিনি কাস্ত্রো সরকারের সাথে সোভিয়েত ইউনিয়নের ভালো সম্পর্ক গড়ে তোলেন। এতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে কিউবার সম্পর্ক খারাপ হয়ে যায়। এই কারণে কিউবার অর্থনীতিরও অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। এরপর একসময় গেভারা চিন্তা করেন যে তাঁর বিপ্লবকে পৃথিবীর আরো সব অঞ্চলে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য কাজ করতে হবে। ১৯৬৫ সালে কাস্ত্রো ঘোষণা করেন যে চে কিউবা ত্যাগ করেছেন।
এরপর বেশ কিছু সময় চে কাটান আফ্রিকায়, বিশেষ করে কঙ্গোতে। এ সময় তিনি বিদ্রোহী বিভিন্ন দলকে গেরিলাযুদ্ধের বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেন। তাঁর এই প্রচেষ্টা তেমন একটা সফল হয়নি, ১৯৬৬ সালে তিনি আবার কিউবায় ফেরেন। কিউবা থেকে তিনি বলিভিয়ার দিকে যাত্রা করেন। বিদ্রোহী দলকে নেতৃত্ব দেন বলিভিয়ার রেনে বারিয়েন্তোস ওর্তুনো সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য। মার্কিন সহায়তার সুবাদে বলিভিয়ার সেনাবাহিনী এই প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দেয়। তারা চে গেভারাকে তাঁর অন্যান্য যোদ্ধাদের সাথে ধরে ফেলে। ১৯৬৭ সালের ৯ অক্টোবর লা হিগুয়েরা নামের বলিভিয়ার একটি গ্রামে তাঁকে হত্যা করা হয়। একটি গোপন স্থানে কবর দেওয়া হয় তাঁকে। ১৯৯৭ সালে স্থানটি আবিষ্কৃত হয় এবং সসম্মানে তাঁর দেহাবশেষ কিউবায় নিয়ে এসে মর্যাদার সাথে কবর দেওয়া হয়।