হলিউড স্টুডিওর লোগো নির্মাণের ১০ কাহিনী
যদি প্রশ্ন করা হয়, একটি প্রতিষ্ঠান সবার কাছে পরিচিতি পায় কীভাবে? প্রথম উত্তর হবে নামে, দ্বিতীয় উত্তর হবে তাদের লোগো বা প্রতিষ্ঠানের বিশেষ প্রতীকের মাধ্যমে। দুটি প্রতিষ্ঠানের নাম এক রকম হতে পারে; কিন্তু লোগোর ক্ষেত্রে তাদের আলাদা হওয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকে না। লোগোর দিক দিয়ে সবার থেকে আলাদা হতে গিয়েই এর নির্মাণের পেছনে তৈরি হয় বিভিন্ন গল্পের। বিনোদনমূলক ওয়েবসাইট ব্রাইটসাইটের সৌজন্যে চলো জেনে নিই হলিউডের বিখ্যাত কিছু ফিল্ম স্টুডিওর লোগো নির্মাণের পেছনের গল্প।
১. ড্রিমওয়ার্কস পিকচার্স
ছবির শুরুতে ড্রিমওয়ার্কসের লোগোতে দেখা যায় একটি বাচ্চা ছেলে আধখানা চাঁদের ওপর থেকে বড়শি দিয়ে ছিপ ফেলে বসে আছে। ড্রিমওয়ার্কস স্টুডিও প্রথমে যে লোগোর পরিকল্পনা করেছিল, তাতে বাচ্চা ছেলের পরিবর্তে একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের কথা ভাবা হয়েছিল। পরিকল্পনা অনুসারে শিল্পী রবার্ট হান্টকে লোগো তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিনি পূর্ণবয়স্ক মানুষের ছবি দিয়ে লোগো তৈরির পাশাপাশি নিজের ছেলে উইলিয়ামের ছবিকে পূর্ণবয়স্ক মানুষের জায়গায় বসিয়ে আরো একটি লোগো তৈরি করেন। ড্রিমওয়ার্কস পিকচার্স দ্বিতীয় ছবিটিকেই তাদের প্রতিষ্ঠানের লোগো হিসেবে নির্বাচন করে। পরে এই উইলিয়াম বড় হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংগীত অঙ্গনে একজন সুরকার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন।
২. কলাম্বিয়া পিকচার্স
একজন নারী হাতে জ্বলন্ত মশাল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। সেই ১৯২৪ সাল থেকে কলাম্বিয়া পিকচার্স স্টুডিওর লোগো হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে এই ছবি। তবে লোগোটির মডেল কখনই একজন নারী ছিলেন না। সময়ের পালাবদলের সঙ্গে লোগোটির মডেলও পরিবর্তন হয়েছে। লোগোটির সর্বশেষ সংস্করণ বের হয় ১৯৯২ সালে। যেখানে মডেল হিসেবে নেওয়া হয় জেনি জোসেফ নামের একজন মার্কিন গৃহিণীকে। কাকতালীয়ভাবে জেনি জোসেফের চেহারার অবয়ব অবিকলভাবে প্রথম লোগোতে ব্যবহার করা নারীর সঙ্গে মিলে যায়।
৩. মেট্রো-গোল্ডুইন-মেয়ার (এমজিএম)
জনপ্রিয় কার্টুন টম অ্যান্ড জেরির শুরুতে সিংহের সেই গর্জন নিশ্চয়ই মনে আছে? এমজিএম স্টুডিওতে নির্মিত বিভিন্ন ছবির শুরুতেও এই লোগো ব্যবহার করা হয়। সেই ১৯২৪ সালের কথা, মেট্রো-গোল্ডুইন-মেয়ার তখন সবেমাত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির লোগো কী হবে, সেটা ভেবে যখন সবাই গলদঘর্ম, তখন সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন মার্কিন লেখক-গীতিকার হাওয়ার্ড ডিটজ। তিনি যখন কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তেন, তখন সেখানে একটি ক্রীড়াদল ছিল, যাদের নাম ছিল ‘দ্য লায়ন্স’ বা সিংহের দল। সেখান থেকেই অনুপ্রাণিত হয়ে এমজিএম প্রতিষ্ঠানকে লোগোটি সম্পর্কে ধারণা দেন ডিটজ। তখন থেকে এখন পর্যন্ত লোগোটির বিভিন্ন সংস্করণের জন্য প্রায় পাঁচটি সিংহ ব্যবহার করা হয়েছে : স্ল্যাটস, জ্যাকি, ট্যানার, জর্জ ও লিও। লোগোটির সাম্প্রতিক সংস্করণে ব্যবহৃত সিংহটির নাম স্টার।
৪. প্যারামাউন্ট পিকচার্স
প্যারামাউন্ট পিকচার্সের লোগোর জন্য এর কর্তাব্যক্তিরা শরণাপন্ন হন চিত্রশিল্পী উইলিয়াম হডকিনসনের। তিনি একটি বরফ আচ্ছাদিত পাহাড়ের ছবি আঁকেন, যা অনেকটা উটাহ অঞ্চলে (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম দিকে অবস্থিত একটি প্রদেশ) অবস্থিত লমন্ড পাহাড়ের অনুরূপ। এই পাহাড়ের পাদদেশেই কেটেছে চিত্রশিল্পী উইলিয়াম হডকিনসনের শৈশব। ১৯১৪ সালে পাহাড়ের ছবির ওপরে ২৪টি তারকা দিয়ে প্রকাশ করা হয় প্যারামাউন্ট পিকচার্সের লোগো। এই ২৪টি তারকা আসলে ২৪ জন অভিনেতা-অভিনেত্রীর প্রতীক। যাঁরা প্যারামাউন্ট পিকচার্সের প্রথম ছবিতে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন। তবে লোগোটির আধুনিক সংস্করণে তারকার সংখ্যা কমিয়ে ২২টিতে নিয়ে আসা হয়েছে। তারকার সংখ্যা কমে যাওয়ার কারণটা অবশ্য গোপন রেখেছে প্যারামাউন্ট পিকচার্স কর্তৃপক্ষ।
৫. ওয়ার্নার ব্রাদার্স
ব্যাটম্যান, সুপারম্যান থেকে সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া ওয়ান্ডার ওমেন। এসব ছবির পেছনের কারিগর ওয়ার্নার ব্রাদার্স স্টুডিও। হ্যারি ওয়ার্নার, আলবার্ট ওয়ার্নার, স্যাম ওয়ার্নার ও জ্যাক ওয়ার্নার—এই চার ভাই মিলে প্রতিষ্ঠা করেন ওয়ার্নার ব্রাদার্স স্টুডিও। তাই প্রত্যেকের নাম দিয়ে লোগো তৈরির ঝামেলায় না গিয়ে নিজেদের উপাধি দিয়েই প্রতিষ্ঠানের লোগো সাজান ওয়ার্নার ভ্রাতারা। যদিও ওয়ার্নার উপাধিটি তাঁদের আসল উপাধি নয়। রুশ থেকে পুরোদস্তুর মার্কিন বনে যাওয়া এই ভাইদের আসল উপাধি ছিল ওনস্কোলাসের।
৬. ওয়াল্ট ডিজনি
যদি জিজ্ঞেস করা হয়, অ্যানিমেশন ছবির জন্য বিখ্যাত একটি প্রতিষ্ঠানের নাম বলুন, তাহলে সবার প্রথমে যে উত্তর আসবে তা হলো ওয়াল্ট ডিজনি। মিকি মাউস, ডোনাল্ড ডাক, রুপাঞ্জেল, লিটল মারমেইড, সিনডারেলার মতো চরিত্র সৃষ্টি করে লাখো শিশু-কিশোরের শৈশব রঙিন করে তোলা স্টুডিওটির লোগোতে শুরু থেকেই রূপকথার রাজপ্রাসাদ বা দুর্গের চিত্রকর্ম ব্যবহার করা হয়েছে। ওয়াল্ট ডিজনি স্টুডিওর সর্বপ্রথম লোগোটি তৈরি করা হয়েছিল জার্মানিতে অবস্থিত নাইশভানস্টাইন দুর্গের আদলে। কিন্তু ২০০৬ সালে ওই দুর্গের বদলে প্যারিসের ডিজনিল্যান্ডে অবস্থিত সিনডারেলা দুর্গের অনুরূপে লোগোটি পুনর্নির্মাণ করা হয়।
৭. পিক্সার
অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, পিক্সারের প্রথম ছবিতে কোনো লোগো ব্যবহার করা হয়নি। তবে ১৯৮৬ সালে দুটি ল্যাম্পের কাহিনী নিয়ে পিক্সার স্টুডিও থেকে মুক্তি পাওয়া তাদের প্রথম অ্যানিমেশনধর্মী স্বল্পদৈর্ঘ্য সিনেমা ‘লুক্সো জুনিয়র’ সাড়া জাগায় গোটা বিশ্বে। ছবিটির জনপ্রিয়তা এতটাই ছড়িয়ে পড়ে যে পিক্সার কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেয়, ইংরেজি পিক্সার বানানের ‘আই’ অক্ষরের পরিবর্তে লুক্সো জুনিয়র সিনেমার ল্যাম্প ব্যবহার করবে। ফলে প্রথম স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের স্মৃতি নিয়ে গঠিত হয় পিক্সারের লোগো।
৮. ক্যাসেল রক এন্টারটেইনমেন্ট
পিক্সারের মতো ক্যাসেল রক এন্টারটেইনমেন্টের লোগোর ধারণা এসেছে তাদেরই তৈরি একটি ছবি থেকে। আশির দশকে প্রতিষ্ঠিত ক্যাসেল রক এন্টারটেইনমেন্ট ভৌতিক উপন্যাসের জন্য বিখ্যাত লেখক স্টিফেন কিংয়ের উপন্যাস অবলম্বনে বেশ কিছু চলচ্চিত্র নির্মাণ করে। এগুলোর মধ্যে একটি চলচ্চিত্রের নাম ছিল ‘নিডফুল থিংস’। চলচ্চিত্রটিতে কাল্পনিক ক্যাসেল রক শহরের নাম অনুসারে এই প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানটির নামকরণ করা হয়। ছবিতে দেখানো ক্যাসেল রক শহরের একটি বাতিঘরকে স্থান দেওয়া হয় প্রতিষ্ঠানটির লোগোতে। যদিও পরে প্রতিষ্ঠানটির মালিকানা কিনে নেয় ওয়ার্নার ব্রাদার্স।
৯. লায়ন্সগেট
লায়ন্সগেট—নাম শুনেই ভেবে বসবেন না, এই প্রতিষ্ঠানটির দরজার সামনে সব সময় সিংহ বসে থাকে। লায়ন্সগেট কানাডার ভ্যানকুভারে অবস্থিত একটি সেতুর নাম, যার আশপাশেই নিজের শৈশব কাটিয়েছেন লায়ন্সগেটের প্রতিষ্ঠাতা রবার্ট আল্টম্যান।
১০. স্কট ফ্রি
প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান স্কট ফ্রির প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক রিডলি স্কট। নাম শুনেই বুঝতে পারছ যে নিজের নাম অনুসারেই প্রতিষ্ঠানের নামকরণ করেছেন রিডলি। তবে প্রতিষ্ঠানটির লোগোর জন্য তিনি দ্বারস্থ হয়েছিলেন ইতালিয়ান চিত্রশিল্পী জানলুইজি তোকাফোন্দোর। তাঁর তৈরি লোগোটিতে দেখা যায়, একজন মানুষের অবয়ব দৌড়াতে দৌড়াতে পাখিতে পরিণত হয়। পাখি হয়ে কিছুক্ষণ ওড়ার পর বসে যায় স্কট ও ফ্রি লেখার ঠিক মাঝখানে। এর জন্য জানলুইজিকে লোগোটির প্রতিটি মুহূর্তের ছবি আঁকতে হয়। পরে সব ছবি একসঙ্গে জুড়ে দিয়ে নির্মাণ করা হয় স্কট ফ্রির লোগো। লোগোটি একটি বিশেষ অর্থ বহন করে। মূলত লোগোটি দিয়ে ব্যক্তিস্বাধীনতাকে বোঝানো হয়েছে।