গল্প
ভূতবাগিচা
তামিম আর শামিম ভালো বন্ধু। তাদের বাসাটাও একই এলাকায়। তারা স্কুলে যাওয়া-আসা করে একই সঙ্গে। তাদের স্কুলের উল্টো পাশে রয়েছে একটি সুন্দর বাগান। প্রায়ই দুই বন্ধু ওই বাগান দেখতে যাবে বলে পরিকল্পনা করে। কিন্তু কোনো না কোনো কারণে যাওয়া হয় না। তাই ভাবল বৃহস্পতিবার হাফ ছুটিতে যাবে। আজ বৃহস্পতিবার হাফ ছুটি। সিদ্ধান্ত নিল আজই যাবে।
তামিমকে শামিম বলল, চল তাড়াতাড়ি মাসি দেখলে বকবে, যেতে দেবে না। তাই দেরি না করে দুজনে হাঁটা দিল। হাঁটতে হাঁটতে অনেক দূর চলে এলো তারা। কিন্তু অবাক ব্যাপার, বাগানটি যত কাছে মনে হয়েছিল, আসলে তত কাছে নয়। বাগানের রাস্তাটিও অনেক উঁচু। পাহাড়ি রাস্তার মতো। কিছুক্ষণ হাঁটার পর তামিম বলল, আজ আর যাব নারে।
কেন কী হয়েছে?
আমার ভালো লাগছে না। পা ব্যথা করছে। অন্য দিন যাব।
তামিমের কথা শুনে শামিম বলল, আচ্ছা চল আগামী সপ্তাহে আসব। এই বলে দুজনে বাড়ি চলে গেল। আগামী সপ্তাহে একই সময়ে দুজনে আবার যাওয়ার জন্য মনস্থির করল।
শামিমকে তামিম বলল, যাওয়া কি জরুরি?
হ্যাঁ, স্কুলের পাশে এত সুন্দর একটা জায়গা, তা না দেখলে কি হয়? তা ছাড়া আমরা চতুর্থ শ্রেণি পাস করে অন্য স্কুলে চলে যাব। এই সুন্দর বাগান কি আর দেখতে পাব? দিনের বেলায় সেখানে কি এত চকচক করে তা একবার অবশ্যই দেখা চাই। চল চল দেরি করিস না। এই বলে তারা আবার হাঁটতে লাগল।
কিন্তু আজব ব্যাপার তারা যতই হাঁটছে রাস্তা ফুরায় না। দুজন হাঁটছে তো হাঁটছে। মনে হচ্ছে বাগানটিও তাদের সঙ্গে হাঁটছে।
একটা সময় শামিম বলল, কিছু বুঝতে পারছি না। বাগানটি স্কুল থেকে অনেক কাছে মনে হয়, কিন্তু এখন দেখছি এটা অনেক দূরে।
আমিও তাই ভাবছি শামিম। আমার খুব ভয় হচ্ছে। চল বাড়ি চলে যাই।
আরে কিসের ভয়। বোকা নাকি। এই বাগান আমি দেখেই ছাড়ব। আর আমার বড় মামা যেভাবে সেলফি তোলে, সেভাবে কয়েকটা সেলফিও তুলব। কথা বলতে বলতে শেষ পর্যন্ত তাদের বাগানের রাস্তা শেষ হলেঅ। বাগানের গেটের সামনে দাঁড়িয়ে তাদের দুজনের চোখ বড় হয়ে গেল। এত সুন্দর বাগান হয় নাকি? এত হরেক রকম ফুল যা আগে কখনো তারা দেখেনি। এই ফুলগুলোই দূর থেকে চকচক করছে। সবচেয়ে আশ্চর্যের ব্যাপার হলো এই বাগান আকাশ ছুঁই ছুঁই। আকাশ থেকে তাদের চোখ নামতে নামতে হঠাৎ গেটটা খুলে গেল। কিন্তু কাউকে দেখা গেল না।
শামিম বলল, চল ঢোকা যাক। তামিম যেতে চাইল না। কিন্তু তামিমকে ভেতরে ধাক্কা দিয়ে নিয়ে গেল শামিম। বাগানে ঢুকতেই শামিমের এবার খটকা লাগল। মনে হচ্ছে তারা নিজেরা হাঁটছে না বাগানটি তাদের নিয়ে যাচ্ছে। এবার দুজনে ভয় পেয়ে গেল। তামিম অবশ্য আগে থেকে ভয় পাচ্ছিল। কিন্তু শামিমকে বলতে সাহস পাচ্ছিল না। সে বিশ্বাস করবে না তাই।
শামিম বলল, বন্ধু কিছু একটা উলট-পালট হচ্ছে।
তামিম বলল, আমি তো তোকে আগেই আসতে মানা করেছিলাম। তার আগেরবারও আমার ভয় হয়েছিল। কিন্তু তুই রাগ করবি বলে কিছু বলিনি। এখন কী হবে তাই ভাব।
দূর থেকে একটা ঘর দেখা যাচ্ছিল। তাদের সেই ঘরের দিকেই নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
শামিম বলল, আমরা ওই ঘরে ঢুকব না। ওখানে ঢুকলেই কিছু একটা হবে আমি জানি। এমন গল্প আমি অনেক শুনেছি। এখন সত্যি সত্যি দেখছি।
তাহলে শামিম এখন আমরা কী করব? তামিম কথা বলতে বলতে হঠাৎ দেখল, ঘরটার ছাদের ওপর অনেকগুলো পরী। তামিম কাঁপতে লাগল।
শামিম বলল, কী হয়েছে তোর? কাঁপছিস কেন ?
ওই যে পরী।
পরি?
কোথায়?
ছাদের ওপর।
কিন্তু আমি তো দেখছি কালো কালো ছায়া, ভূতের মতো।
বুঝতে পেরেছি, আমার আর বোঝার বাকি নেই শামিম। আমরা আজ শেষ। এটা একটা ভূতের বাগিচা। আমাদের আজ রক্ষা নেই।
হ্যাঁরে, আমিও তাই ভাবছি। আমরা ভুল করেছি তামিম।
কিন্তু এখন উপায়?
উপায় আছে। শোন আমার দাদা বলেছে ভয় পেলে দোয়া পড়তে। আমরা দোয়া পড়তে পড়তে পায়ের যত শক্তি আছে দৌড় দেব। পেছনে কেউ তাকাব না। এই বলে মনের জোরে অনেক সাহস নিয়ে ডানে-বামে, পেছনে না তাকিয়ে দৌড় দিল দুজনে। তাদের সাহসিকতার জন্য সেদিন বেঁচে গেল তারা দুই বন্ধু। সেদিন থেকে ওই সুন্দর বাগানের দিকে ভুলেও তাকাইনি তারা। তারা পাস করে সেই স্কুল ছেড়ে চলে গেল। সেই স্কুলে ভর্তি হলো আরো নতুন নতুন ছাত্র। তাদের মতো এখানেও দুজন ছাত্রের ভালো বন্ধুত্ব হলো। তারাও একই রকম প্লান করল বাগানটিতে যাওয়ার। যেদিন তারা দুই বন্ধু যেতে রওনা দিল, বাগানটি সেদিন হেসে উঠল।