যে গ্রামে পুরুষ নিষিদ্ধ!
এখন তোমাদের এমন একটি গ্রামের গল্প বলব, যেখানে নেই কোনো পুরুষের প্রবেশাধিকার, শুধুই নারীদের বাস। ভাবছো, এমন গ্রাম আবার হয় নাকি! পৃথিবীর অন্য কোথাও না থাকলেও এমনই এক নারীদের গ্রাম আছে আফ্রিকার দেশ কেনিয়ায়। কেনিয়ার উত্তরাঞ্চলের ওই গ্রামের নাম ‘উমোজা’। এর এ রকম বিস্ময়কর বৈশিষ্ট্যের জন্য গ্রামটিকে বলা হয় নোম্যান্স ল্যান্ড। আমরা সাধারণত নোম্যান্স ল্যান্ড বলতে দুদেশের সীমান্তসংলগ্ন এমন কিছু এলাকাকে বুঝি, যেখানে নারী-পুরুষ-শিশু নির্বিশেষে সবারই প্রবেশ নিষেধ। তবে কেনিয়ার ওই গ্রামকে নোম্যান্স ল্যান্ড দ্বারা মূলত বোঝানো হয়—এটা শুধু উইমেন্স ল্যান্ড, অর্থাৎ শুধুই নারীদের গ্রাম।
এই গ্রাম প্রতিষ্ঠা নিয়ে রয়েছে একটি ইতিহাস। জানা যায়, রেবেকা লোলোসোলি নামের এক নারী এই গ্রামের প্রতিষ্ঠাতা। রেবেকা প্রায় ২৫ বছর আগে ওই নারীশাসিত গ্রামের গোড়াপত্তন করেন এবং পুরুষদের প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ করে দেন। কেনিয়ার সামবুরু জাতিগোষ্ঠীর একজন সদস্য রেবেকা। তিনি নারীকে পুরুষতান্ত্রিক সমাজের নির্যাতন ও লাঞ্ছনা থেকে বাঁচাতে এই গ্রাম প্রতিষ্ঠা করেন। তিনিই বর্তমানে ‘উমোজা উসাউ উইমেন্স ভিলেজ’-এর প্রধান হিসেবে কাজ করছেন।
ছোটবেলা থেকে রেবেকার দেখা সামবুরু জাতির নারী নির্যাতনের চিত্র একপর্যায়ে তাঁকে প্রতিবাদী করে তোলে। তিনি চিন্তা করেন, কীভাবে নারী ও শিশুদের সামাজিক দুর্দশা দূর করা যায়। এতে অনেক বিপত্তির মুখেও পড়তে হয় তাঁকে। একসময় রেবেকার গ্রামের পাশেই প্রশিক্ষণ নিত ব্রিটিশ সৈনিকরা। তাদের কাছে ধর্ষণের শিকার হতেন স্থানীয় অনেক নারীই। তখন কেউ এর প্রতিবাদ করতে পারতেন না। রেবেকা প্রথম ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের প্রতিবাদ করেন। এতে গ্রামের পুরুষদের হাতে মার খেতে হয় তাঁকে। কিন্তু এতেও দমে যাননি রেবেকা। স্বজাতির ১৬ জন নির্যাতিত নারীকে নিয়ে গড়ে তোলেন প্রতিরোধ কমিটি। ১৯৯০ সালে একটি ক্যাম্প করেন পরিত্যক্ত মাঠে। সেই ক্যাম্পটিই এখন মেয়েদের জন্য নিরাপদ নোম্যান্স ল্যান্ড। নারীদের নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচাতে রেবেকার এই প্রচেষ্টা অবশ্যই প্রশংসনীয়।
চাইলে তোমরা ইনফরমেশন নাইজেরিয়া, বিফোর ইটস নিউজসহ বিভিন্ন ওয়েবসাইটে এই গ্রাম সম্পর্কে আরো তথ্য জানতে পারো।