আলোকবর্ষ কত লম্বা?
লাইট ইয়ার নামটা যেমন গালভরা, এর বাংলা নামটাও তেমনই- আলোকবর্ষ। এই লাইট ইয়ার বা আলোকবর্ষ কিন্তু মোটেই সময়ের একক না। এটা হলো দৈর্ঘ্যের একক। মহাকাশে তো সবকিছুরই দূরত্ব অনেক বেশি। সেখানে তাই কিলোমিটার- মাইলে হিসেব করাও সম্ভব নয়। তখন অঙ্কের পাশে শূন্য বসাতে বসাতেই জ্যোতির্বিদদের সময় কেটে যাবে। সে জন্যই মহাকাশের হিসাব-নিকাশে প্রচলিত এককের চেয়েও অনেক বড় এই দৈর্ঘ্যের একক ব্যবহার করা হয়।
কিন্তু এই লাইট ইয়ার বা আলোকবর্ষ কত বড় একক? ভ্যাকুয়ামে, মানে শূন্যস্থানে আলো কোনো বাধা না পেয়ে এক বছরে যে দূরত্ব অতিক্রম করে, তাকেই বলা হয় এক আলোকবর্ষ। আলোর গতি হলো প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ৩ লাখ কিলোমিটার (২,৯৯,৭৯২ কিলোমিটার)। অর্থাৎ বোঝাই যাচ্ছে, এই আলোকবর্ষ আসলেই অনেক অ-নে-ক বড়! এক আলোকবর্ষ প্রায় ৬ ট্রিলিয়ন মাইলের সমান। কিলোমিটারে হিসাব করলে প্রায় ১০ ট্রিলিয়ন কিলোমিটার (৯,৪৬০,৭৩০,৪৭২,৫৮১ কিলোমিটার)।
মহাকাশের হিসাব-নিকাশের জন্য শুধু লাইট ইয়ারই ব্যবহার করা হয় না। আরো বড় এককও ব্যবহার করা হয়। এই যেমন গ্যালাক্সির বিভিন্ন অংশের দূরত্ব নির্ণয় করতে গেলে এই লাইট ইয়ার দিয়েও ঠিক হিসাব করা যায় না। তাতেও এককটা বেশ ছোট হয়ে যায়। তখন ব্যবহার করা হয় কিলোলাইট-ইয়ার (১ হাজার লাইট ইয়ার)। আবার পাশাপাশি গ্যালাক্সির হিসাব করতে গেলে, কিংবা গুচ্ছ গ্যালাক্সির হিসাব করতে গেলে এই কিলোলাইট-ইয়ারও ছোট হয়ে যায়। তখন ব্যবহার করা হয় মেগালাইট-ইয়ার (১ মিলিয়ন লাইট ইয়ার)। আবার সুপারগ্যালাক্টিক বিষয়াষয়ের দূরত্ব মাপার সময় মেগালাইট-ইয়ারও হার মেনে যায়। তখন ব্যবহার করা হয় গিগালাইট-ইয়ার!
অবশ্য মহাকাশের হিসেব-নিকেশে আলোকবর্ষের চেয়ে ছোট এককও ব্যবহৃত হয়। ওগুলোও আলোকবর্ষের সঙ্গে মিলিয়েই হিসাব করা হয়। লাইট সেকেন্ড আর লাইট মান্থ। লাইট ইয়ারের ১২ ভাগের ১ ভাগ হলো এক লাইট মান্থ। আর লাইট সেকেন্ড হলো আলোর গতির সমান দূরত্ব, মানে আলো এক সেকেন্ডে যে দূরত্ব অতিক্রম করে, সেটাই লাইট সেকেন্ড।
বিজ্ঞানভিত্তিক লেখালেখিতেই মহাকাশের হিসাব-নিকাশে প্রচুর ব্যবহৃত হলেও, জ্যোতির্বিজ্ঞানে এই আলোকবর্ষ বা লাইট ইয়ার এককটি তেমন ব্যবহৃত হয় না। জ্যোতির্বিজ্ঞানে যে এককটি ব্যবহৃত হয়, তার নাম পারসেক। ১ পারসেক ৩.২৬ আলোকবর্ষের সমান। কিলোমিটারের হিসেবে ৩১ ট্রিলিয়নের চেয়ে একটু কম, আর মাইলের হিসাবে ১৯ ট্রিলিয়নের একটু বেশি।