হাতির লড়াই
দুই বুনো হাতি।
একজন থাকে বনের এ মাথায়।
অপরটা ও মাথায়।
দুটো হাতিই নিজকে নিয়ে
করে ভীষণ বড়াই।
একদিন তাই দুই হাতিতে
লাগল ভীষণ লড়াই।
হাতির লড়াই! হাতির লড়াই! পুরো বন তোলপাড়। বনের যত পশু আছে, সবাই এলো। বনের যত পাখি আছে, সবাই এলো।
বনের বাইরে থেকেও এলো। কে এলো?
চালাক-চতুর শেয়াল এলো। প্যাঁচা এলো। নেকড়ে এলো। শকুন এলো। আরো অনেকেই এলো। সবার কথা কি আর মনে থাকে?
যাই হোক। লড়াইয়ের জায়গাটা একটা মাঠ। সবুজ ঘাসে ঢাকা। মোটা মোটা আর বড় গাছের গুঁড়ি দিয়ে ঘের দেওয়া। এ তো আর চামচিকে বা ইঁদুর-ছুঁচোর লড়াই নয়। হাতির লড়াই বলে কথা! লড়াই করতে করতে কখন কার গায়ের ওপর পড়ে, বলা তো যায় না। তাই মোটা গাছের গুঁড়ি দিয়ে ঘের দেওয়া।
হাতি দুটো এলো লড়াইয়ের ময়দানে।
একটা হাতি ধবধবে সাদা। আরেকটা হাতি একটু কম সাদা।
দুই হাতিরই বিশাল বিশাল দাঁত। আট ফুট তো হবেই। নতুন চাঁদের মতো বাঁকানো। আর কী মোটা! ওদের ওই দাঁত দেখে কে ভয় পায় না? বাঘ ভয় পেয়ে পালিয়েছে কতদিন। দাঁতের খোঁচা খেয়ে কেশরঅলা সিংহটাও ব্যথা পেয়েছিল কয়েকদিন। হাতি দুটো যখন দাঁত উঁচিয়ে হাঁটত, ভয়ে বনের সবাই কাঁপত।
লড়াইয়ে নামবে দুই হাতি। দুজন দাঁড়াল দুই পাশে।
এ পাশ থেকে চেঁচিয়ে ওঠল ধবধবেটা, ‘আয়। তোর দাঁত ভেঙে শুঁড়ে ধরিয়ে দেব।’
ও পাশ থেকে কম সাদাটাও চেঁচাল, ‘সাহস থাকলে তুই আয়। তোর শুঁড়টাকে থেতলে দেব।’
‘তোর কান কামড়ে ছিড়ে দেব।’
‘তোর লেজের বারোটা বাজাব।’
‘তোর পায়ে শুড়শুড়ি দেব।’
‘তোর শুঁড়ে কাতুকুতু দেব।’
‘তোর মাথার চুল ছিড়ব।’
‘তোর কানের লতি ফাটাব।’
আরো কত কি যে বলল ওরা। আরো বলত। নাহ! জমছে না। চেঁচিয়ে ওঠল চালাক শেয়াল, এমন লড়াই চাই না।
চেঁচিয়ে ওঠল খোঁচা খাওয়া সিংহ, লড়াইয়ের নামে এসব কী! লড়াই করো।
বাঘটাও হালুম করল, ধেৎ! লড়াই ছাড়া ভালো লাগে?
তাই তো! ওরা তো হাতির লড়াই দেখতে এসেছে, ঝগড়া নয়।
ঘেরের চারপাশে অনেক পশু। গাছে গাছে অনেক পাখি। সবাই চেঁচাতে লাগল, ‘লড়াই লড়াই লড়াই চাই। এবং লড়াই দেখতে চাই।’
হাতির লড়াই! লড়াইটা যে মাঠে, সে মাঠের ঘাসেরা আছে ভীষণ ভয়ে। হাতির লড়াই তো আর যেন তেন নয়। হাতির পায়ের তলায় কত ঘাস থেতলে যাবে। কত ঘাসের ডগা ছিঁড়ে যাবে। সে খবর কি কেউ রেখেছে? কেউ রাখেনি। কেউ কোনোদিন খোঁজও নেয়নি। ঘাসেরাও চেঁচাতে শুরু করল, ‘এমন লড়াই চাই না। এমন লড়াই চাই না।’
ঘাসেদের কথা কেউ শুনল না। হাতিরা তো শুনলই না। বরং লড়াই শুরু করে দিল। ধবধবেটা তীর বেগে ছুটে এলো কম সাদার দিকে। কম সাদাটাও ছুটে গেল দাঁত উঁচিয়ে। তারপর হঠাৎ আওয়াজ হলো গুড়ুম।
গুড়ুম। গুড়ুম। গুড়ুম।
আবার গুড়ুম।
আরো গুড়ুম।
এবং গুড়ুম।
তারপর?
তারপর ধপাস ধপাস।
হাতি দুটো পড়ে রইল খোলা মাঠে। নড়ছে না কেউ।
বিপদে পড়েছে ঘাসেরা। দুই হাতির লড়াইয়ে কত ঘাসের ডগা ছিড়ল। কত ঘাসের শিকড় উপড়ে গেল। কত ঘাস উড়ে গেল। থেতলে গেল সবচেয়ে বেশি ঘাস। তখনো টাটকা ঘাসেরা চেঁচাতে লাগল, ‘হাতি দুটোকে সরাও। এখান থেকে সরাও।’
কেউ ঘাসেদের কথা শুনল না। আর শুনলেই কি, হাতি সরাবে কে? কেউ সরাবে না। বাঘও না, সিংহও না, শেয়ালও না। মরা হাতি সরাতে ওদের বয়েই গেছে। বরং ওরা আলোচনা শুরু করল-বনের কোন অংশটা কে নেবে।
ওদিকে ঘাসেরা চেঁচাতেই থাকল, ‘হাতি সরাও, হাতি সরাও।’
ঘাসেদের কথা কারো কানেই ঢুকল না। মরা হাতি ঘাসের ওপর ওভাবেই পড়ে রইল।