মে দিবস
শ্রমিকদের আত্মত্যাগের কথা
মার্চ মাসের প্রথম দিনটিকে পুরো দুনিয়ায় পালন করা হয় ‘মে দিবস’ হিসেবে। পৃথিবীর সব শ্রমিকের লড়াই-সংগ্রাম-পরিশ্রমের প্রতি সম্মান জানানো হয় এই দিনে, শ্রদ্ধা জানানো হয় তাঁদের আত্মত্যাগের পুণ্যস্মৃতির উদ্দেশ্যে। এই দিনটির প্রতি সম্মান জানানোর পেছনে রয়েছে এক রক্তাক্ত ইতিহাস।
১৮৮৬ সাল। যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের হে মার্কেটের শ্রমিকরা নেমেছেন তুমুল আন্দোলনে। তাঁদের দাবি ছিল, উপযুক্ত মজুরি এবং দৈনিক আট ঘণ্টার বেশি কাজ নয়। কারণ, তাঁদের কাজের কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা তো ছিলই না, উপরন্তু সেই কাজের জন্য তাঁরা একেবারেই ন্যায্য মজুরি পেতেন না। প্রতিদিন ১৬ ঘণ্টা করে হাড়ভাঙা খাটুনি করতে হতো তাঁদের, ভাবা যায়?
কল-কারখানা তখন গিলে খাচ্ছিল শ্রমিকের গোটা জীবন। সপ্তাহের ছয় দিন কাজ করে শ্রমিকদের শরীর-স্বাস্থ্য-জীবন বলতে কোনোকিছুই অবশিষ্ট থাকত না। দাবি উঠেছিল, কল-কারখানায় রক্ত পানি করা পরিশ্রমী শ্রমিকের গোটা জীবন এভাবে কিনে নেওয়া যাবে না। এই দাবিতে শুরু হয় আন্দোলন। মে মাসের প্রথম দিনেই শ্রমিকরা ধর্মঘটের আহ্বান জানায়। প্রায় তিন লাখ মেহনতি মানুষ যোগ দেয় সেই সমাবেশে। এক সময় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের রুখতে মিছিলে পুলিশ এলোপাতাড়ি গুলি চালায়। এতে পুলিশের গুলিতে বহু শ্রমিক হতাহত হন।
পরে আন্দোলনে অংশ নেওয়ার অপরাধে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয় গ্রেপ্তারকৃত ছয় শ্রমিককে। কারাগারে বন্দিদশায় এক শ্রমিক নেতা আত্মহত্যাও করেন। পরের বছর প্যারিসে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক শ্রমিক সম্মেলনে দিনটিকে মে দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এটাই হলো মে মাসের পয়লা দিনটি শ্রমিক দিবস হয়ে ওঠার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস।