কী করে এলো মা দিবস?
আজ বিশ্বজুড়ে পালিত হচ্ছে মা দিবস। মায়েদের জন্য প্রতিটি দিনই ভালোবাসার। আলাদা কোনো দিবসের প্রয়োজন হয় না।
তবুও বিশ্বব্যাপী মায়েদের জন্য একটি দিন রাখা হয়েছে, যেদিন সবাই ভালোবাসার কথাটা মুখে বলতে পারে। মাকে নিয়ে কোথাও ঘুরতে যেতে পারে। আনুষ্ঠানিকভাবে মায়েদের প্রতি সম্মান জানাতে পারে।
মা দিবসের প্রচলন প্রথম শুরু হয় প্রাচীন গ্রিক ও রোমান সাম্রাজ্যে। কিন্তু বর্তমানে যে দিনে মা দিবস পালিত হয়, এটা এসেছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে।
প্রাচীন গ্রিসে বার্ষিক বসন্ত উৎসবের সময় গ্রিকরা মাতৃদেবীদের উপাসনা করত। এ সময় তারা রিয়া দেবীর উপাসনা করত। গ্রিক পুরাণে বর্ণিত অনেক দেব-দেবীর মা এই রিয়া।
গ্রিকদের মতো প্রাচীন রোমেও বসন্ত উৎসব পালন করা হতো। এই উৎসবের নাম ছিল হিলারিয়া। দেবী সিবেলের প্রতি উৎসর্গকৃত ছিল এই উৎসব। খ্রিস্টের জন্মের ২৫০ বছর আগে থেকে পালিত হতো এ উৎসব।
এর পর সপ্তদশ শতাব্দীতে যুক্তরাজ্যে পালন করা হতো মা দিবস। যিশুখ্রিস্টের মা মেরির সম্মানে ‘লেন্ট’-এর চতুর্থ রোববার পালন করা হতো মা দিবস। ইস্টার সানডের আগের ৪০ দিনের সময়কালকে বলা হয় লেন্ট। মা মেরির প্রতি সম্মান জানিয়ে প্রার্থনা করার পর সবাই নিজেদের মাকে বিভিন্ন উপহার দিত। এই দিনটিকে বলা হতো ‘মাদারিং সানডে’। ইংল্যান্ডে এদিন সরকারি ছুটি থাকত।
বর্তমান মা দিবস পালনের প্রচলন শুরু হয়েছে ‘মাদারিং সানডে’ থেকে। তবে বিংশ শতাব্দীতে এসে মা দিবস পালনের রীতি প্রায় বিলুপ্ত হয়ে যায়। এটি আবার নতুন করে শুরু হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে। এটি চালু করে মার্কিনিরা।
আনুষ্ঠানিকভাবে মা দিবস পালনের উদ্যোগ প্রথম গ্রহণ করেন মার্কিন লেখক, কবি ও সংগঠক জুলিয়া ওয়ার্ড হাউই। ১৮৭২ সালে তিনি প্রথম প্রস্তাবটি দেন। ২ জুন মায়ের প্রতি ভালোবাসা ও বিশ্ব শান্তির জন্য দিবসটি উদযাপনের আহ্বান জানান তিনি। এ ছাড়া দিনটিকে সরকারি ছুটির দিন ঘোষণা দেওয়ারও প্রস্তাব রাখেন তিনি। এই দাবিতে যুক্তরাষ্ট্রে প্রচার শুরু করেন জুলিয়া।
তবে আধুনিক মা দিবসের প্রচলন শুরু হয় যুক্তরাষ্ট্রের আন্না জারভিসের হাত ধরে। যদিও তিনি নিজে কখনো বিয়ে করেননি বা সন্তান নেননি। নিজের মা আন্না ম্যারি রিভস জারভিসের প্রতি ভালোবাসা জানাতে মা দিবস পালনের আহ্বান জানান তিনি।
১৯০৫ সালে মারা যান আন্না জারভিসের মা। তাঁর খুব ইচ্ছা ছিল, বিশ্বজুড়ে মায়েদের সম্মান জানানোর জন্য একটি দিন থাকবে। মায়ের সেই ইচ্ছা পূরণ করতেই মা দিবস পালনের জন্য প্রচার শুরু করেন আন্না জারভিস। তিনি বিভিন্ন চার্চে ফুল পাঠান এবং মায়েদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের আহ্বান জানান।
১৯১১ সালে আমেরিকার বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে মা দিবস পালিত হয়। ১৯১৪ সালের ৮ মে প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন আনুষ্ঠানিকভাবে মে মাসের দ্বিতীয় রোববারকে ‘মা দিবস’ ঘোষণা করে একটি বিল পাস করেন। সেই থেকে মে মাসের দ্বিতীয় রোববার মা দিবস হিসেবে পালন করে থাকে আমেরিকানরা।
তবে এর বাইরেও বিভিন্ন দেশে নানা দিবসে মা দিবস পালনের রীতি রয়েছে। থাইল্যান্ডে মা দিবস পালিত হয় আগস্টে, থাইল্যান্ডের বর্তমান রানি সিরকিতের জন্মদিনে। ইথিওপিয়ায় মা দিবসে পরিবারের সবাই একত্র হয় এবং বিশাল ভোজের আয়োজন করে।