সিন্ডারেলা! সিন্ডারেলা!!
সিন্ডারেলার গল্প তো সবারই জানা। তার পরও জানা গল্প সিনেমায় দেখতে খারাপ লাগে না। সিন্ডারেলার গল্প নিয়ে কার্টুন ছবি তো হয়েছেই, গত ১৩ মার্চ মুক্তি পেয়েছে সিন্ডারেলার গল্প নিয়ে একই নামের একটি চলচ্চিত্র। কেনেথ ব্রানাগ পরিচালিত ছবিটিতে সিন্ডারেলার ভূমিকায় অভিনয় করেছেন লিলি জেমস। সৎমায়ের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন কেট ব্ল্যানশেট। রাজপুত্রের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন রিচার্ড ম্যাডেন।
মা ছাড়া লক্ষ্মী মেয়ে সিন্ডারেলার দিন একভাবে কেটে যাচ্ছিল বাবার সঙ্গে। কিন্তু হঠাৎ সংসারে এসে হাজির হন সৎমা। সঙ্গে দুই সৎবোন। সৎমা ও বোনেরা সব সময় সিন্ডারেলাকে শুধু জ্বালায় আর ঘরের সব কাজ করিয়ে নেয়। একদিন সেই রাজ্যের রাজপুত্রের জন্য পাত্রী পছন্দ করা হবে বলে সবাইকে ডাকা হলো রাজদরবারে। সিন্ডারেলার বোনেরা খুব সেজেগুজে গেলেও সিন্ডারেলাকে একগাদা কাজ ধরিয়ে দিয়ে গেল, যাতে সে না যেতে পারে। সবাই যাচ্ছে, কিন্তু নিজে যেতে পারছে না দেখে সিন্ডারেলার খুব মন খারাপ হলো। কাঁদতে কাঁদতে কাজ করতে থাকল সে। এ সময় এক জাদুকর বুড়ি এসে সিন্ডারেলার কান্না থামাল।
সিন্ডারেলাকে নতুন জামাকাপড় দিল, জুতো দিল, সঙ্গে একটা জাদুর গাড়িও দিল। গাড়ি চালানোর দায়িত্ব দেওয়া হলো রাজহাঁসকে। তবে বুড়ি বলে দিল, রাজদরবারে যাও ঠিক আছে, কিন্তু শর্ত হচ্ছে মধ্যরাতের আগে ফিরে আসতে হবে। কারণ, ততক্ষণে জাদু শেষ হয়ে যাবে এবং সে আবার আগের অবস্থায় ফিরে যাবে।
খুশিমনে সিন্ডারেলা রাজদরবারে যায়। রাজপুত্রকে দেখে ভালো লাগে তার। অবশ্য চলচ্চিত্রে রাজপুত্রের সঙ্গে আগেই একবার সিন্ডারেলার দেখা হয়। রাজপুত্র তখন বনে হরিণ শিকার করছিল। আর সিন্ডারেলা বন্যপ্রাণীদের হত্যা করতে বারণ করে রাজপুত্রকে। রাজপুত্রের ভাবনায় তখন থেকেই জুড়ে বসে সিন্ডারেলা। আসলে রাজদরবারে অত বড় আয়োজনটা করা হয়েছিল সিন্ডারেলার জন্যই। কারণ, বনে পরিচয় হলেও তাকে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না।
রাজকীয় আয়োজনে সিন্ডারেলা ও রাজপুত্র দুজনে মিলে অনেক গল্প করল। নাচল, গাইল। সে যেন এক অন্য দুনিয়া। কিন্তু ঘড়ির কাঁটা জানান দিল, যেতে হবে। জাদুর প্রভাব ঠিক রাত ১২টায় শেষ হয়ে যাবে। আর তাতে আগের গরিব পোশাকে ফিরে যাবে সিন্ডারেলা। কাজেই ঘড়িতে ১২টা ছুঁইছুঁই যখন হলো, তখনই সিন্ডারেলা দে ছুট। এই ছুটে যাওয়ার সময় ফেলে যায় এক পায়ের একপাটি জুতো। রাজপুত্রের কাছে সেদিনও নিজের পরিচয় গোপন করে সিন্ডারেলা। কাজেই একপাটি জুতোকে সম্বল করেই চলতে থাকে খোঁজাখুঁজি। কে এই সিন্ডারেলা?
বাড়ি বাড়ি রাজার লোক যায়। সেই জুতা যার পায়ে লাগবে, সেই হবে সে রাজ্যের রাজবধূ। এ ঘোষণায় কত মেয়ে যে চেষ্টা করল জুতোর ভেতর পা গলানোর। কিন্তু ওই জুতোয় কি অন্যদের পা ঢোকে? সে তো শুধু সিন্ডারেলার জন্য তৈরি! ওদিকে সিন্ডারেলাকে কিছুতেই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। পাবে কীভাবে? সৎমা তো তাকে বন্দী করে রেখেছে। তাহলে? রাজপুত্র কিন্তু ঠিকই সিন্ডারেলাকে খুঁজে পায়। কী করে? সেটা জানতে চলচ্চিত্রটি দেখতে পারো। আবার বই থেকেও পড়ে নিতে পারো বাকি কাহিনী।
সিন্ডারেলার মূল গল্পটি আসলে একটি মিসরীয় লোককথা। কিন্তু এই লোককথার আধুনিক রূপায়ণ করেন ফরাসি লেখক শার্ল প্যারল। তাঁর লেখা গল্পটি প্রকাশিত হয় ১৬৯৭ সালে। সে সময় থেকেই সিন্ডারেলাকে নিয়ে মঞ্চনাটক ও ছবি তৈরি হয়েছে বিভিন্ন সময়ে।
সিন্ডারেলাকে নিয়ে নির্মিত প্রথম চলচ্চিত্রটি ছিল মাত্র সাত মিনিটের। জর্জ মেলিয়ে পরিচালিত ছবিটি ১৮৯৯ সালে ফ্রান্সে মুক্তি পেয়েছিল। ১৯১৪ সালে সিন্ডারেলাকে নিয়ে প্রথম হলিউডে ছবি করে প্যারামাউন্ট পিকচার্স। নির্বাক সেই ছবিতে সিন্ডারেলার ভূমিকায় অভিনয় করেন ম্যারি পিকফোর্ড।
সিন্ডারেলার জনপ্রিয় অ্যানিমেটেড ভার্সন, যেটা ডিজনি তৈরি করেছিল, সেটি মুক্তি পেয়েছিল ১৯৫০ সালে। ব্যবসায়িকভাবে দারুণ সফল হয় ছবিটি। এ ছাড়া সিন্ডারেলার গল্প নিয়ে নির্মিত অন্যান্য ছবির মধ্যে রয়েছে ‘দ্য স্লিপার অ্যান্ড দ্য রোজ’ (১৯৭৬), ‘এভার আফটার’ (১৯৯৮) এবং ‘আ সিন্ডারেলা স্টোরি’ (২০০৪)।