আবারও পড়ো
জুল ভার্নের মিস্টিরিয়াস আইল্যান্ড
১৮৬৫ সাল। যুক্তরাষ্ট্রে গৃহযুদ্ধ চলছে। জেনারেল গ্রান্ট মানুষকে এ ধ্বংসযজ্ঞ থেকে বাঁচাতে সংগ্রামে নামলেন। অবরোধ করলেন রিচমন্ড শহর। কাজের কাজ কিছুই হলো না। মাঝখান দিয়ে তাঁর সমর্থক ইঞ্জিনিয়ার ক্যাপ্টেন সাইরাস হার্ডিং আর সাংবাদিক গিডিয়ান স্পিলেট ধরা পড়লেন। তাঁদের বন্দি করা হলো শহরটির জেলে।
ওই শহরেই গা-ঢাকা দিয়ে দলবল নিয়ে দিন কাটাচ্ছিলেন প্যানক্রফট নামের এক নাবিক। অনেক বুদ্ধি করেও তাঁরা পালাতে পারছিলেন না। হঠাৎই একদিন পালানোর সুবর্ণ সুযোগ এসে গেল। অবরুদ্ধ শহর থেকে বাইরে সংবাদ প্রেরণের জন্য শহরের প্রধান জেনারেল লি এক বিশাল বেলুনের ব্যবস্থা করেছেন। কারণ, তখনো উড়োজাহাজ আবিষ্কারই হয়নি। তখন আকাশপথে উড়তে গেলে বেলুন ছাড়া কোনো গতি নেই। তা-ও সে বেলুন যাত্রীদের যে কোথায় নিয়ে যাবে, তারও কোনো ঠিক নেই। বাতাসের মর্জির ওপর নির্ভর করে মানুষকে উড়তে হতো।
বেলুনের খোঁজ পেয়ে প্যানক্রফট খবর চালান করে দিলেন ক্যাপ্টেন হার্ডিং আর স্পিলেটকে। তাঁরাও সুযোগ বুঝে বেলুনে চড়ে সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে রিচমন্ড ছেড়ে বের হয়ে পড়লেন। তাঁদের সঙ্গে এ যাত্রায় যোগ দিল ক্যাপ্টেন হার্ডিংয়ের নিগ্রো ভৃত্য নেবুচ্যাডনেজার আর তার পোষা কুকুর টপ। নেবুচ্যাডনেজার আবার কোত্থেকে এলো? মালিককে মুক্ত করতে সে একাই সব বাধা টপকে তার মালিকের কাছে চলে এসেছে।
তাতেও কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না। রিচমন্ড থেকে বেরোনোর পরই তাঁরা পড়লেন ঝড়ের তাণ্ডবে। বেলুন গেল ফুটো হয়ে, আছড়ে পড়ল এক জনমানবশূন্য দ্বীপে। বিখ্যাত মার্কিন প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিঙ্কনের নামে তাঁরা দ্বীপের নাম দিলেন লিঙ্কন আইল্যান্ড। আর সে দ্বীপে আটকে পড়ার দিন থেকে শুরু হলো ক্যাপ্টেন হার্ডিংয়ের বুদ্ধির প্রদর্শনী।
সাধারণ জ্ঞান আর বিজ্ঞানের দক্ষতা দিয়ে ক্যাপ্টেন হার্ডিং একের পর এক সমস্যার সমাধান করতে লাগলেন। ঘড়ির কাচের লেন্স দিয়ে আগুন জ্বালালেন। ওঅর্ম উড গাছের কাঠ আর পটাশিয়াম নাইট্রেট ও সোডা দিয়ে বানালেন দিয়াশলাই। প্যানক্রফটের জন্য একটা গাদাবন্দুক, আর গন্ধক ও কয়লা দিয়ে সে বন্দুকের জন্য তৈরি করে দিলেন কার্তুজ। দ্বীপে পাওয়া লোহা থেকে বানালেন কুড়াল। আরো কত যে দরকারি কাজ তাঁর বিজ্ঞানী-মাথা দিয়ে সারলেন! এমনকি কোনো দরকারি যন্ত্রপাতি ছাড়াই দ্বীপের অক্ষাংশ-দ্রাঘিমাংশও নির্ণয় করে ফেললেন তিনি। দ্বীপে পানি দিয়ে চালানোর উপযোগী একটা লিফটও বানিয়ে ছাড়লেন।
ওদিকে কিন্তু দ্বীপে রহস্যও কম না। কে যেন তাঁদের প্রয়োজনীয় জিনিস একটা সিন্দুকে ভরে দিয়ে গেল। আবার টপকে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করল। কাছের ট্যাবর দ্বীপে এক লোক ১২ বছর ধরে নির্বাসিত জীবন কাটাচ্ছিল। এমনকি তার খবরও কে যেন রহস্যময়ভাবে তাঁদের কাছে দিয়ে গেল। এমনি নানা রহস্যময় কাণ্ড ঘটতে লাগল একে একে।
ক্যাপ্টেন হার্ডিং তো এসব রহস্যের মাথামুণ্ডু কিছুই বের করতে পারছেন না। ওদিকে দ্বীপবাসী তো ধরেই নিয়েছে, তাদের বাকি জীবনটা লিঙ্কন দ্বীপেই কাটাতে হচ্ছে। কারণ, এই দ্বীপের খবর পৃথিবীর মানুষ জানেই না। যে দ্বীপের কথা মানুষ জানেই না, সেখানে মানুষ আসবে কোত্থেকে?
শেষ পর্যন্ত অবশ্য ওরা সেই অসাধ্যও সাধন করে। ক্যাপ্টেন হার্ডিংয়ের নেতৃত্বে রহস্যময় সেই দ্বীপ থেকে মুক্তি পায় ওরা। ফিরে আসে পরিচিত দুনিয়ায়। তার আগে রহস্যময় দ্বীপের সব রহস্যও উদ্ঘাটন করে তারা। সব মিলিয়ে ওদের সেই অভিযাত্রার কাহিনী জানাজানি হলে, তাদের নিয়ে বেশ একটা শোরগোলই পড়ে যায়। এই নিয়ে জুল ভার্নের কালজয়ী কল্পবিজ্ঞান কাহিনী—মিস্টিরিয়াস আইল্যান্ড। একসময় বিটিভিতেও এই উপন্যাস থেকে একটি টেলিভিশন সিরিজ দেখানো হয়েছিল, যা বেশ জনপ্রিয়তা পায়। সেবা প্রকাশনী থেকে এই বইটির অনুবাদ বের হয়েছিল ‘রহস্যের দ্বীপ’ নামে।
বই : মিস্টিরিয়াস আইল্যান্ড
লেখক : জুল ভার্ন
ধরন : অ্যাডভেঞ্চার
ভাষা : ফরাসি
প্রথম প্রকাশ : ১৮৭৪
প্রকাশক : পিয়েরে-জুল হেজেল