প্যাটেন্ট কী জিনিস
ধরা যাক, একজন বিজ্ঞানী একটা কিছু আবিষ্কার করলেন। এখন তাহলে সেই আবিষ্কার করা জিনিসটি বাজারে বিক্রি করে বেশ একটা ব্যবসা জমিয়ে তোলা সম্ভব। এখন তাঁর অনুমতি ছাড়াই আরেকজন সেই আবিষ্কার করা জিনিসটি বানিয়ে বাজারে বিক্রি করতে শুরু করলে ব্যাপারটা নিশ্চয়ই ভালো হবে না।
এই ব্যাপারটা বন্ধ করার রাস্তাই হলো ‘প্যাটেন্ট’। কেউ কিছু আবিষ্কার করলে সেটা চটজলদি নিজের নামে প্যাটেন্ট করে ফেলতে হবে। তাহলে চাইলেই যে কেউ আর সেটা বানিয়ে বিক্রি করতে পারবে না। যদি করেও, মামলা ঠুকে এর একটা বিহিত করা যাবে।
তাহলে যেটা দাঁড়াল, প্যাটেন্ট হলো এক ধরনের অধিকার। কেউ কোনো কিছু আবিষ্কার করলে রাষ্ট্রকে জানাবে, এটা তাঁর আবিষ্কার। রাষ্ট্র মেনে নেবে, এটা বানানোর অধিকার শুধু তাঁর। বিনিময়ে রাষ্ট্রও তাঁকে কিছু শর্ত দিয়ে দেয়। যেমন—এই অধিকারটা আজীবনের জন্য নয়, বরং একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত পাওয়া যাবে। সাধারণভাবে মেয়াদটা ২০ বছরের মতো হয়। আবিষ্কার করা জিনিসটার ধরন-ধারণ অনুযায়ী এই মেয়াদ কমবেশিও হয়। সাধারণত প্যাটেন্ট করতে গেলে আরো একটা শর্ত দেওয়া হয়, আবিষ্কারের বিষয়টা প্রকাশ্যে জানাতে হয়।
আগে এই প্যাটেন্টের বিষয়টা রাষ্ট্রের ইচ্ছাধীন ছিল। মানে, চাইলে কোনো রাষ্ট্র এই অধিকার না-ও দিতে পারত। আবার কোনো রাষ্ট্র চাইলে প্যাটেন্টের বিপরীতে যা ইচ্ছা শর্তও জুড়ে দিতে পারত। পরে বিশ্ব শ্রম সংস্থা এই নিয়ে একটা চুক্তি করল। সেই চুক্তি অনুযায়ী, সংস্থাটির সব সদস্য রাষ্ট্রকে প্যাটেন্টের অধিকার দিতে হবে।
এই প্যাটেন্ট শব্দটা এসেছে লাতিন শব্দ patere থেকে, যার অর্থ খুলে রাখা। পৃথিবীতে প্রথম প্যাটেন্টের ধারণা চালু হয় প্রাচীন গ্রিসের শহর সাইবেরিসে, খ্রিস্টপূর্ব ৫০০ অব্দে। এখনকার হিসেবে সেটা ইতালির দক্ষিণ অংশে পড়বে। সেটি অবশ্য এখনকার প্যাটেন্ট ব্যবস্থার মতো ছিল না। এখনকার মতো প্যাটেন্ট, মানে আধুনিক প্যাটেন্ট প্রথম চালু হয় ভেনিসে, ১৪৭৪ সালে।
তবে বেশিরভাগ দেশ ভেনিসের এই প্যাটেন্ট ব্যবস্থা অনুসরণ করে না। ব্রিটেনে ১৬২৪ সালের ২৫ মে একটি বিধিমালা পাস হয় Statute of Monopolies নামে। পরে এটাকেই ওরা প্যাটেন্ট আইনে রূপান্তরিত করে। বেশির ভাগ দেশই এই বিধিমালা অনুসরণ করেই প্যাটেন্ট আইন তৈরি করেছে।