ভিন্ন ধর্মাবলম্বী দুজনের মধ্যে বিয়ের বিধান কী
পাত্রপাত্রী ভিন্ন ধর্মাবলম্বী হলে বিয়ে কোন আইনে হবে, সে সম্বন্ধে ধারণা নেই অনেকের। এ ক্ষেত্রে আশ্রয় নিতে হয় বিশেষ বিবাহ আইনের। সেই অনুযায়ী বিয়ে করতে চাইলে পাত্রপাত্রীকে শরণাপন্ন হতে হয় একজন আইনজীবীর।
নিয়ম অনুযায়ী, ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের বিয়ের ক্ষেত্রে আইনজীবীর তত্ত্বাবধানে প্রস্তুতকৃত হলফনামায় পাত্রপাত্রী স্বাক্ষর দেবেন। এরপর ওই হলফনামা নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে নোটারাইজড করতে হবে। হলফনামায় অবশ্যই ‘বিশেষ বিবাহ আইনের অধীন বিয়ে’ লেখা থাকতে হবে।
দ্বিতীয় ধাপে সরকার অনুমোদিত বিশেষ বিবাহ রেজিস্ট্রারের কাছে নির্ধারিত ফরম পূরণ করে তিনজন সাক্ষীর উপস্থিতিতে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে হবে। তবে বিশেষ বিবাহ আইনে বিয়ের ক্ষেত্রে যৌতুক প্রথা এবং আমন্ত্রিত অতিথিদের খাওয়া-দাওয়ার বাহুল্য নেই ৷
বিশেষ বিবাহ আইন : ১৮৭২ সালের বিশেষ বিবাহ আইন অনুসারে, যেসব ব্যক্তি খ্রিস্টান, ইহুদি, হিন্দু, মুসলিম, পার্সি, বৌদ্ধ, শিখ বা জৈন ধর্ম গ্রহণ করেননি, তাঁদের জন্য বিয়ের একটি ধরন নির্ধারণ করা এবং যেসব বিয়ের বৈধতা সম্পর্কে সন্দেহের অবকাশ রয়েছে, সেসব সুনির্দিষ্ট বিয়ের বৈধতা প্রদান করা সমীচীন। বিশেষ বিবাহ আইনের ২ ধারা অনুযায়ী অনুষ্ঠানের শর্তগুলো হলো :
(ক) বিয়ের সময় বিয়ের পক্ষগণের মধ্যে কারোরই কোনো জীবিত স্বামী বা স্ত্রী থাকতে পারবে না,
(খ) গ্রেগরিয়ান পঞ্জিকা অনুসারে পুরুষ ব্যক্তির বয়স ২১ বছর এবং নারীর বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হতে হবে,
(গ) পক্ষগণ রক্ত সম্পর্কে বা বৈবাহিক সম্পর্কে সম্পর্কযুক্ত হতে পারবেন না, যাতে তাদের একজনের ওপর প্রযোজ্য আইন দ্বারা ওই বিবাহ অবৈধ হতে পারে।
বিশেষ বিবাহ আইনের ১১ ধারা অনুযায়ী, বিয়ে সম্পন্ন করতে হবে রেজিস্ট্রার এবং ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষরদানকারী তিনজন সাক্ষীর সামনে। পক্ষগুলোকে রেজিস্ট্রার ও সাক্ষীদের উপস্থিতিতে তিনবার বলতে হবে ‘আমরা পরস্পর পরস্পরকে আইনসঙ্গত স্ত্রী অথবা স্বামী হিসেবে গ্রহণ করলাম।’
বিয়ে কোথায় করা যাবে : ঢাকার সদরঘাট ও কোতোয়ালি থানার উত্তরে এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা কলেজিয়েট হাই স্কুলসংলগ্ন পাটুয়াটুলী রোডের ২-৪ লয়াল স্ট্রিটে বালাদেশ ব্রাহ্ম সমাজ কার্যালয়ে বিশেষ বিবাহ সম্পন্ন হয়। সেখানে দেশের একমাত্র সিভিল ম্যারেজ রেজিস্ট্রার রেভারেন্ড প্রাণেশ সমাদ্দার বিশেষ বিবাহ আইনের অধীন বিয়ের কার্যক্রম সম্পন্ন করেন।
সিভিল ম্যারেজ রেজিস্ট্রারের দায়িত্ব পালনকারী প্রাণেশ সমাদ্দার জানান, পাত্রপাত্রীর পরস্পরের ধর্মীয় বিশ্বাস পৃথক হলে তারা যদি স্ব স্ব ধর্ম পালন করতে চায়, তবে বিশেষ বিবাহ আইনের অধীন বিয়ের কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হবে। এ জন্য সাত হাজার টাকা ও তিনজন সাক্ষীর প্রয়োজন।
লেখক : আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট