অন্দরমহলে আলো আঁধারির খেলা
অন্দরমহলে আলোছাঁয়ার খেলায় স্পট লাইট এখন বেশ পরিচিত। ঘরের যেকোনো একটি অংশকে খুব সহজেই ফুটিয়ে তোলে স্পটলাইট। সাধারণত নকল ছাদ বা স্তম্ভে স্পট লাইট বসানো হয়। এই লাইটের আলো ঘরের সব জায়গায় না পড়ে ঘরের নির্দিষ্ট একটা অংশে গিয়ে পড়ে। অথচ সরাসরি এই আলোর উৎস দেখা যায় না। আমরা না বুঝেই অনেক সময় ঘরের যেকোনো জায়গায় স্পট লাইট সেট করে থাকি। এর ফলে স্পট লাইটের এই আলো ঘরকে মাঝেমধ্যে বেমানান করে দেয়। ঘরের কোথায় স্পট লাইট ব্যবহার করবেন, কয়টা করে লাইট ব্যবহার করবেন, কোন আলোর লাইট ব্যবহার করবেন- এই বিষয়গুলো সম্বন্ধে জানিয়েছেন ফারজানা ব্লিসের প্রধান নির্বাহী এবং ইন্টেরিয়র ডিজাইনার ফারজানা গাজী।
আজকাল সব বাড়িতেই জায়গার অভাবে ঘরের ভেতরে একটি-দুটি বিম বা পিলার করা হয়। এই বিম ও পিলারগুলো প্রথমে বেমানান লাগে। মনে হয় এই জায়গাটি পুরো ঘরের সৌন্দর্য নষ্ট করছে। অথচ এই বিম বা পিলারই স্পট লাইটের সঠিক জায়গা। এই অংশ ঢেকে দিতে একটা ফলস সিলিং করা হয়। আর এই সিলিংয়ের মাঝেই বসানো হয় স্পট লাইট। অনেক সময় ঘরের ভিতর আলাদা করেই নকল ছাদ করা হয়। যা দেখতেও ভালো লাগে আবার স্পট লাইট বসানোর কাজেও লাগে।
জেনে নিন ঘরের কোন জায়গায় স্পট লাইট ব্যবহার করবেন-
সিঁড়ির জায়গা
আজকাল সিঁড়ির জায়গাটিতে বড় পটারি বা ফুলদানি থাকে এর ওপর আপনি স্পটলাইটের আলো ফেলতে পারেন। এছাড়া অনেকে এই জয়গায় ছোট ঝর্ণা বানিয়ে নেয়। এই ঝর্ণার মাঝেও আলো দিতে পারেন।
ঘরে ঢুকতে
ঘরে ঢোকার সময় ফয়ার বা কনসিল টেবিল রাখতে পারেন। যার ওপর আয়না লাগানো থাকে। এর ওপর চাইলে একটি স্পটলাইট সেট করতে পারেন।
লিভিং রুম
সাধারণত একটা ঘরের প্রথম আকর্ষণই থাকে লিভিং রুম। তাই এই জায়গাটিতে আভিজাত্যের ছোঁয়াও থাকে বেশি। এর ফলে আলোছায়ার মিশ্রণেও এখানে রয়েছে ভিন্নতা। তবে আগে থেকেই ঠিক করে নিন কোন জায়গা আলোকিত করবেন। সোফাকে আলোকিত করার জন্য দেয়ালের ওপর থেকে ঠিক সোফা বরাবর একটা ফলস সিলিং তৈরি করে নিতে পারেন। এরপর সেট করতে পারেন স্পট লাইট। এ ছাড়া সোফাকে না করে শুধু সেন্টার টেবিলকেও স্পট লাইট দিয়ে হাইলাইট করতে পারেন। কর্নার শোকোসেও লাগাতে পারেন স্পট লাইট। বড় পেইন্টিংটিকে ফোকাস করতে স্পট লাইটের জুড়ি নেই। টিভির জায়গাটি স্পট লাইট দিয়ে চাইলে জায়গাটি হাইলাইট করতে পারেন। এ ছাড়া মৃদু আলোর ফ্লোর লাইটও লাগাতে পারেন মেঝেতে।
ডাইনিং রুম
ডিনার ওয়াগান বা শোকেসকে স্পটলাইট দিয়ে হাইলাইট করতে পারেন। বেসিনে যে আয়না থাকে তাতে স্পট লাইট লাগাতে পারেন। দেখতে অনেক সুন্দর লাগবে।
শোয়ার ঘর
হালকা বা মৃদু আলো শোয়ার ঘর বা বেডরুমকে আরো স্নিগ্ধ করে। এমনকি রোমাঞ্চকর একটা পরিবেশও সৃষ্টি করে এই আলো। বিছানার মাথার ওপর ফলস সিলিং করে স্পট লাইট লাগিয়ে নিতে পারেন। অথবা বিছানার ঠিক ওপরেই কিছুটা জায়গা ফলস সিলিং করে নিতে পারেন। এরপর বিছানার ঠিক মাঝ বরাবর স্পট লাইট দিতে পারেন। দেখতে ভালো লাগবে। মেঝের শতরঞ্জিতে দিতে পারেন মৃদু আলোর স্পট লাইট। চাইলে ড্রসিং টেবিলেও একটা লাইট সেট করতে পারেন। এ ছাড়া দেয়ালে কাঠ, বাঁশ ওয়াল ব্যাঙ্গিং ঝোলানো থাকলে তাতেও জুড়ে দিতে পারেন হালকা আলোর আবেশ।
রান্নাঘর
অনেকে রান্নঘরেও স্পট লাইট ব্যবহার করে থাকেন। তবে মনে রাখবেন, রান্নাঘরে অবশ্যই উজ্জ্বল আলো ব্যবহার করবেন। রান্নঘরে কেবিনেটের মধ্যে লাইট লাগাতে পারেন। এতে দেখতেও ভালো লাগবে আবার কাজেও লাগবে।
ঘরের কোণে
ঘরের যেকোনো কোণকে আলোকিত করে স্পট লাইট। এখানে একটা বড় ভাস্কর্য রেখে তার ওপর একটা মৃদু আলোর স্পট লাইট লাগাতে পারেন।
কয়টা করে লাইট ব্যবহার করবেন
দরজা দিয়ে ঢুকতে যে লম্বা জায়গা বা করিডর থাকে তার দুই পাশে চারটি করে আটটি লাইট লাগাতে পারেন। সোফার উপরে তিনটি, সেন্টার টেবিল হলে একটি এবং শোকেসে একটি স্পট লাইট দিবেন। টিভির জায়গাটিতে দুটি আর ভাস্কর্যের ওপর একটি লাইট ব্যবহার করবেন। বিছানার মাথায় তিনটি আর মাঝ বরাবর একটি লাইট লাগাতে পারেন। মনে রাখবেন যত কম স্পটলাইট ব্যবহার করবেন তত জয়গাটি হাইলাইট হবে। করিডর ছাড়া ঘরের যেকোনো জায়গায় একটা বা দুইটা স্পটলাইট ব্যবহার করুন। করিডরে একটু বেশি লাইট লাগে কারণ সেই জায়গাটি খালি থাকে। ঘর ছোট হলে কম লাইট ব্যবহার করুন। আর বড় হলে কিছু নির্দিষ্ট জিনিসকে প্রাধান্য দিয়ে মায়াবী পরিবেশ তৈরি করুন ।
কোন রঙের আলো কোথায়
সাধারণত ৮০ ওয়াটের বাল্ব ব্যববার করলে স্পট লাইটের ভালো আবেশ পাওয়া যাবে। করিডরে দুই বা তিন রঙের লাইট লাগাতে পারে। দেখতে ভালো লাগবে। লিভিং রুম বা বেডরুমে এক রঙের লাইট লাগানোর চেষ্টা করুন। অনেক রঙের লাইট ব্যবহারে এসব জায়গা দেখতে বেমানান লাগবে। মিররগুলোতে হালকা আলোর লাইট ব্যবহার করুন। মনে রাখবেন অতিরিক্ত রঙচঙা লাইট ঘরের সৌন্দর্য বাড়ানোর থেকে নষ্ট করে বেশি।
কোথায় পাবেন
রাজধানীর হাতিরপুল, গুলশান, বিজয় নগর, নবাবপুর ও নিউমার্কেটের কোনো লাইটের দোকানেই পাওয়া যাবে স্পট লাইট। পাইকারি কিনতে চাইলে যেতে পারেন নবাবপুরের লাইটের মার্কেটগুলোতে।
দরদাম
যেকোনো সাধারণ স্পটলাইটের দাম পড়বে ৬০ থেকে ৬০০ টাকার মধ্যে। ২৫০ থেকে ৩০০০ টাকার মধ্যে পাবেন মুভিং লাইটগুলো। কিছু বিশেষ এলইডি ধরনের লাইট পাওয়া যায়, যার দাম পড়বে ৮০০ থেকে ৫,৫০০ টাকার মধ্যে। নিজের পছন্দ আর সাধ্য অনুযায়ী কিনতে পারেন এসব স্পটলাইট।