এইচ অ্যান্ড এমের পণ্যদূত হিজাবি মডেল!
বিখ্যাত সুইডিশ ফ্যাশন রিটেইল এইচ অ্যান্ড এম। ৬০ বছরে যা কোনোদিন তারা করেনি, সেটাই এবার করেছে। একেবারে প্রথা ভেঙে লন্ডনের এক মুসলমান হিজাবি তরুণীকে এই বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানটি তাদের পণ্যদূত করেছে। দূতের নাম মারিয়া ইদ্রিসি। পাকিস্তানি আর মরোক্কান মা-বাবার সন্তান তিনি। জন্ম ও বেড়ে ওঠা লন্ডনে। এখন মারিয়ার বয়স ২৩, হিজাব পরেন ১৭ বছর বয়স থেকে। থাকেন ওয়েস্ট লন্ডনের ওয়েম্বলি পার্কে। সেখানে স্যানল মারাক্কেশ নামের মরক্কোপ্রাণিত একটি হেনা স্যালনও পরিচালনা করে থাকেন তিনি।
ছোটবেলা থেকে নানা ধরনের সুকুমার-বৃত্তির চর্চা করেছেন মারিয়া। কবিতা আবৃত্তি করতেন, গান গাইতে পারেন। কবিতাও লেখেন। অবশ্য তাঁর সবকিছুই ধর্মনির্ভর। তবে তিনি আধুনিকমনস্ক। ইংরেজি সাহিত্যে ডিগ্রি নিয়েছেন। একটি ব্লগও রয়েছে তাঁর। লেখেন নিয়মিত।
যদিও এইচ অ্যান্ড এম কেন হিজাবি মডেল ব্যবহার করতে আগ্রহী হয়েছে, তা বলা না গেলেও ধারণা করা যায়, একটি গোষ্ঠীকে ভোক্তা হিসেবে টার্গেট করতেই তাদের এ উদ্যোগ। এইচ অ্যান্ড এমের এই পদক্ষেপ কোনো সন্দেহ নেই, বিতর্ক উসকে দিতে পেরেছে বেশ ভালোভাবেই। মুসলমান ও অমুসলমান উভয় তরফেই প্রতিক্রিয়া হয়েছে। মারিয়াও তাঁর ব্লগে নানা ধরনের মন্তব্য পেয়েছেন। তবে তিনি মনে করেন, ইসলাম বিশ্বাসের সঙ্গে মডেলিংয়ের কোনো বিরোধ নেই। অবশ্য নিজের সীমার মধ্যে থেকেই তা করা যেতে পারে। আর সেটা সম্ভবও। এ জন্যই বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ফ্যাশন রিটেইলের মডেল হয়ে তিনি নস্যাৎ করে দিতে চেয়েছেন হিজাব নিয়ে চলমান ভুল ধারণা। এ বছরের প্রান্তিক ফ্যাশন মৌসুমের বিজ্ঞাপনে মডেলিংয়ে জন্য তাঁকে নেয় এইচ অ্যান্ড এম। যদিও প্রথমে এক মডেল স্কাউটের ফোন পেয়ে তিনি অবাকই হয়েছিলেন। পরে মত দেন। স্টিল ও মুভি দুই ধরনের বিজ্ঞাপনেই তাঁকে নেওয়া হয়। ভিডিও ক্যাম্পেইনে অংশ নেওয়ার আগে তিনি অবশ্য তাঁর অভিভাবকদের অনুমতি নিয়ে নেন।
এইচ অ্যান্ড এমের ভিডিও বিজ্ঞাপনটির শিরোনাম ছিল ক্লোজ দ্য লুপ। এখানে বিভিন্ন ভূমিকায় অনেক মডেলই অংশ নেন। সবার মতো তাঁর উপস্থিতিও ছিল সংক্ষিপ্ত। সঙ্গে ছিল ভয়েসওভার : লুক শিক। এই বিজ্ঞাপনচিত্রে তিনি পরেছিলেন সাদা টপ, ফ্লেয়ারড ট্রাউজার এবং পিচ রঙের ওভারকোট আর বিশাল রোদচশমা। কালো ব্যাগ ছিল হাতে। মাথা ঢাকা ছিল শেমাগ-ডিজাইনড হেডস্কার্ফে। ভিডিওর শেষ বক্তব্য ছিল : আপনার পোশাকের পুনর্ব্যবহার ছাড়া ফ্যাশনে আর কোনো নিয়ম নেই।
এদিকে, ফ্যাশন জায়ান্ট এইচ অ্যান্ড এম বর্তমানে অপ্রয়োজনীয় পোশাক তা সে যে ব্র্যান্ড বা অবস্থার হোক, কিনে নেওয়ার জন্য বিক্রেতাদের অনুরোধ জানাচ্ছে। তারা এই পোশাক পুনরায় সেকেন্ড হ্যান্ড হিসেবে বিক্রি করবে অথবা রিসাইকেল করা হবে।
এইচ অ্যান্ড এমের আগে অন্য কোনো শীর্ষ ইন্টারন্যাশনাল ফ্যাশন ব্র্যান্ড হিজাবি মডেল ব্যবহারের সাহস দেখাতে পারেনি। তবে ডিএনওয়াইকে, টমি হিলফিগার, ম্যাঙ্গোর মতো সব সামনের সারির ব্র্যান্ড বিশ্বের ফ্যাশনেবল মুসলমানদের জন্য রামাদান কালেকশন লঞ্চ করেছে গত বছর। এসব পোশাকের ডিজাইন এবং কাট ও প্যাটার্ন আধুনিক হলেও ইসলামী নিয়ম অনুসারী ছিল। বিশ্বব্যাপী ভোক্তা হিসেবে মুসলমানরা এখন যথেষ্ট গুরুত্ব পাচ্ছে। তাদের সংখ্যা ক্রমবর্ধমান। দ্রুত বিস্তার ঘটছে অভিজাত মুসলমানদের বাজার। বিশ্বজুড়ে খরুচে মুসলমান ভোক্তার সংখ্যা বর্তমানে ১৬০ কোটি। এরা সহজেই বিলাসী পণ্য আর দামি ফ্যাশন ব্র্যান্ডের পণ্য অনায়াসে কেনার ক্ষমতা ধরে। রয়টার্সের এক পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৩ সালে মুসলমান ভোক্তারা কেবল পোশাক আর জুতার পেছনে ব্যয় করে ২৬ হাজার ৬০০ কোটি মার্কিন ডলার। এই পরিমাণ বেড়ে ৪৮ হাজার ৪০০ কোটি ডলার হবে ২০১৯ সালে। অবশ্য এর মধ্যে হিজাবদের সংখ্যা তুলনায় নগণ্য। তবে সারা বিশ্বে তো বটেই, ইউরোপেও প্রতিনিয়ত বাড়ছে মুসলমানের সংখ্যা। সেই বাস্তবতা থেকেও ইসলামী নিয়মানুসারী পোশাক তৈরি এবং বিপণনের ব্যাপারে বিভিন্ন আগ্রহ প্রতীয়মান হচ্ছে। কেবল পোশাক নয়, প্রসাধনসামগ্রীর ক্রমপ্রসারমান বাজারকে বিবেচনায় রেখে হালাল প্রসাধনী উৎপাদন ও বিপণনে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান প্রভূত আগ্রহ দেখাচ্ছে।