পিতৃত্বকালীন ছুটি কেন জরুরি
কোলজুড়ে সন্তান এলে মা যেমন আনন্দে ভাসেন, সমান আনন্দ কিন্তু বাবারও হয়। অথচ কর্মজীবী মায়েদের অফিসে মাতৃত্বকালীন ছুটি থাকলেও অনেক সময়েই বাবারা এ জন্য বিশেষ কোনো ছুটি পান না। সন্তান জন্মের পর অধিকাংশ পিতাই অতিরিক্ত ছুটি থেকে বঞ্চিত হন। সম্প্রতি বোস্টন কলেজ সেন্টারের এক গবেষণা থেকে জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রে চার সপ্তাহ বা তার বেশি পিতৃত্বকালীন ছুটি নেন মাত্র ১৩ শতাংশ বাবা। অন্যদিকে, গড়পড়তায় অন্য বাবারা কাজে ফিরে আসেন সন্তান জন্মানোর দুই সপ্তাহের মাথায়।
বাংলাদেশ সরকার ২০১১ সালে মাতৃত্বকালীন ছুটি চার মাস থেকে বাড়িয়ে ছয় মাস করেছে। তার পর থেকে পিতৃত্বকালীন ছুটির বিষয়টিও বিভিন্নভাবে আলোচিত হচ্ছে।
নরওয়ে, স্পেন, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, বেলজিয়াম, কেনিয়াসহ নানা দেশে বাবাদের জন্য বিভিন্ন মেয়াদে পিতৃত্বকালীন ছুটির ব্যবস্থা রয়েছে। নেপালে ২০০৪ সাল থেকে সব সরকারি পুরুষ কর্মকর্তাকে পিতৃত্বকালীন ছুটি দেওয়া হচ্ছে। যুক্তরাজ্যে মা কাজে যোগ না দেওয়া পর্যন্ত বাবারা সর্বোচ্চ ছয় মাস এই ছুটি ভোগ করতে পারেন। ভারতেও কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান শ্রমিক-কর্মচারীদের এই ছুটি দিয়ে থাকে। অনেকের অবশ্য এ সময় অবৈতনিক ছুটিও কাটাতে হয়। ছুটি যেভাবেই কাটানো হোক না কেন, পিতৃত্বকালীন ছুটি যে দরকার, সেটা এখন একবাক্যে প্রায় সবাই মেনে নেন। অনেকেই আবার পুরোনো ধ্যানধারণা থেকে বেরোতে পারেননি। তাঁরা ভাবেন, সন্তান জন্মের পর বাবার এত ছুটির দরকার নেই। তবে দরকার যে আছে, সেটার পক্ষে পাঁচটি যুক্তি নিয়ে সম্প্রতি একটি নিবন্ধ ছাপা হয়েছে ইয়াহু অনলাইনে। চলুন পড়ে নিই কারণগুলো কী :
১. যেসব পরিবারে স্বামী-স্ত্রী দুজনই চাকরি করেন, সেসব পরিবারে পিতৃত্বকালীন ছুটি খুবই জরুরি। মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোতে সাংসারিকভাবে সচ্ছল থাকতে স্বামী-স্ত্রী দুজনেই বাড়ির বাইরে কাজ করেন। ক্যারিয়ারের জন্যই স্বামী বাইরে কাজ করার উৎসাহ দেন স্ত্রীকে। এবং প্রয়োজনে তিনি সন্তানের লালন-পালন থেকে শুরু করে ঘরের অনেক কাজে স্ত্রীকে সাহায্যও করেন।
যদি স্ত্রী চাকরিজীবী নাও হন, তাহলেও দেখা গেছে পিতৃত্বকালীন ছুটি কাটানোর পর কাজে যোগ দিলে অনেক বেশি মনোযোগ দিয়ে কাজ করতে পারেন বাবারা। এই বাড়তি মনোযোগ ক্যারিয়ারের জন্য ইতিবাচক তো বটেই!
২. পিতৃত্বকালীন ছুটি কর্মজীবনে কোনো প্রভাব ফেলে না; বরং এর ফলে একজন বাবা কাজে নতুন করে উদ্যম ফিরে পান। এবং সন্তানের কারণেই কাজের প্রতি তাঁর আগ্রহ আরও বেড়ে যায়। সম্প্রতি এক গবেষণা থেকে জানা গেছে, পুরুষদের বেতন ৬ শতাংশের থেকেও বেশি বেড়েছে, যখন সে বাবা হয়েছে। অতএব, পিতৃত্বকালীন ছুটির সঙ্গে বেতন বাড়ার একটা সম্পর্ক আছে বৈকি!
৩. মায়ের মানসিক ও শারীরিক সুস্থতার জন্য পিতৃত্বকালীন ছুটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গবেষণা থেকে জানা গেছে, সন্তান জন্মানোর পর থেকেই মায়েরা শারীরিকভাবে অসুস্থ এবং মানসিকভাবে বিষণ্ন থাকেন। এ সময় পরিবার থেকে তাঁকে মানসিকভাবে সহায়তা দেওয়া খুবই জরুরি। শিশুর জন্মের পর প্রথম কয়েক মাস বাবা ও মায়ের মধ্যে একে অপরকে সাহায্য করার মনোভাব তৈরি হয়, যা ভবিষ্যতে শিশুর লালন-পালনের ক্ষেত্রে কাজে লাগে।
৪. সন্তানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা তৈরির ক্ষেত্রে পিতৃত্বকালীন ছুটি বেশ কার্যকর। সম্প্রতি পিউ রিসার্চ সেন্টারের গবেষণা থেকে জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রে সন্তান জন্মদানের পর ২৩ শতাংশ মা সন্তানকে সময় দিতে পারেন না। অন্যদিকে, ৪৬ শতাংশ বাবা সন্তানদের সঙ্গে খুবই কম সময় কাটান। সুইডেন ও জার্মানিতে পিতৃত্বকালীন ছুটি থাকে। তাই এসব দেশে বাবার সঙ্গে সন্তানদের সম্পর্কটা বেশি দৃঢ় ও সহজ হয়। এবং সন্তানরাও বাবাকে বেশি বুঝতে পারে।
৫. আপনি পিতৃত্বকালীন ছুটি নিন। এবং যাঁরা নিতে চান না, তাঁদেরও উৎসাহিত করুন, যাতে ভবিষ্যতে তাঁদের সন্তান একটি আদর্শ পরিবার পেতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রে দেখা গেছে, সন্তান জন্মানোর সময় বাবারা খুব বেশি ছুটি নিতে চান না। মেরেকেটে দু-একদিন ছুটি নেন। কিন্তু আপনি যদি পিতৃত্বকালীন ছুটি নেন, দুই কি তিন সপ্তাহের জন্য, তাহলে আপনার অন্য পুরুষ সহকর্মী এতে উৎসাহ বোধ করবেন। এবং পরিবারকে একটু বেশি সময় দেবেন। এতে শুধু স্বামী নয়, স্ত্রীর মনও ভালো থাকে। সন্তানরাও পিতৃস্নেহ থেকে বঞ্চিত হবে না।