স্ত্রী বেশি আয় করলে কী সমস্যা?
সীমা আর আসিফের বিয়ের বয়স দুই বছর হতে চলল। বিয়ের আগে থেকেই চাকরি করত সীমা। শ্বশুরবাড়ির লোকজন প্রথমে বিষয়টি ভালোভাবেই নিয়েছিল। বিয়ের কয়েক মাসের মধ্যেই সীমার পদোন্নতি হলো। এখন আসিফের থেকে সে বেশি বেতন পায়, যা শুরুর দিকে সুখবর বয়ে আনলেও পরে সংসারে অশান্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সীমা আগে সংসারে যে সিদ্ধান্ত দিত, তা তার স্বামী কিংবা পরিবার নির্দ্বিধায় মেনে নিত। কিন্তু এই স্বাভাবিক ধারা, স্বাভাবিক রীতিকে এখন কিছুটা হলেও বাঁকা চোখে দেখা হয়। সবাই ভাবে, সীমা হয়তো পরিবারে কর্তৃত্ব একটু বেশিই দেখাচ্ছে, যা তার দাম্পত্য সম্পর্কে সমস্যা সৃষ্টি করছে।
অন্যদিকে, সজলের চেয়ে নীরা বরাবরই বেতন বেশি পায়। শুরু থেকেই নীরা সংসারে বেশি খরচ করত। এ নিয়ে সজল কোনো সমস্যা করত না। এমনকি মানসিকভাবেও সে হীনমন্যতায় ভোগে না; বরং দুজনেরই সিদ্ধান্তে সংসার খুব ভালোভাবে চলছে। সজলের পরিবারের লোকজনের কাছেও নীরা খুব পছন্দের একজন মানুষ, যার সিদ্ধান্ত বা মতামতকে সবাই প্রাধান্য দিত।
দুটি ঘটনার প্রক্ষাপট এক, স্বামীর চেয়ে স্ত্রীর আয় বেশি। কিন্তু এক পরিবারে এটি সমস্যা আর অন্য পরিবারে এটি বেশ স্বাচ্ছন্দ্যের বিষয়। শিক্ষিত পরিবারগুলোতে এ বিষয় নিয়ে কোনো জটিলতার মুখোমুখি হতে হয় না। আর্থিক সচ্ছলতা না থাকলে ও শিক্ষার অভাব থাকলে পরিবারে অবশ্য স্ত্রীর বাড়তি আয় নিয়ে সমস্যা হতে পারে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক খন্দকার মোকাদ্দেম হোসেন বলেন, স্বামীর চেয়ে স্ত্রীর আয় বেশি হলে দুই ধরনের সমস্যা হয়ে থাকে। প্রথমত. স্বামী স্ত্রীর কাছে তার চাহিদামতো অতিরিক্ত আশা করে; দ্বিতীয়ত. এই আশা পূরণ না হলে ঝামেলার সৃষ্টি হয়। আবার সেই লোকটি তার স্ত্রীকে নিজের প্রতিদ্বন্দ্বীও ভাবতে শুরু করে এবং এই মনোভাবের কারণে শুরু হয় দাম্পত্য কলহ।
অন্যদিকে বউ যদি সারা দিন কাজ করে এসে বিশ্রাম নিতে চায়, তাহলে শ্বশুরবাড়ির লোকজন মনে করে, সে আয় বেশি করে, তাই সে সংসারে কাজ করতে চায় না। এমনকি সংসারে বউয়ের কোনো সিদ্ধান্ত বা মতামত স্বাভাবিকভাবে দেখা হয় না।
আবার কিছু পুরুষ আছে, যারা স্ত্রীর আয় নিয়ে অতিরিক্ত আশা করে না। এমনকি বউয়ের আয়ের ওপর খবরদারিও করে না। এ কারণে তাদের মধ্যে হীনমন্যতাও কাজ করে না।
জেনে নিন স্ত্রীর রোজগার বেশি হলে যে ধরনের সমস্যা হয় এবং তার সমাধান কী :
# স্বামী-স্ত্রী দুজনই সংসারের জন্য কষ্ট করে চাকরি করেন। দুজনেরই আয় সংসারের প্রয়োজনে খরচ হয়। স্ত্রী বেশি রোজগার করলেও তাঁর উচিত স্বামীর সামনে তা বারবার প্রকাশ না করা।
# পরিবারের সবার সঙ্গে একটু হলেও সময় কাটান। এতে করে পরিবারের লোকজন বুঝতে পারবে, আপনি বেশি আয় করলেও তাঁদের থেকে দূরে সরে থাকেন না।
# অফিসের কারণে মেজাজ খারাপ থাকলে বাসায় তা প্রকাশ করবেন না। এতে পরিবারের লোকজন ভাববে, আপনি বোধ হয় তাঁদের পছন্দ করছেন না।
# স্বামীর উচিত স্ত্রীর সিদ্ধান্তকে মূল্য দেওয়া। আপনার স্ত্রী উপার্জন করে আপনাদের সংসারেই খরচ করছে। তাই সংসারে কোথায় কী হচ্ছে, তা জানার তাঁর অধিকার রয়েছে। এবং তাঁর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার মতো মনমানসিকতা তৈরি করুন।
# পরিবারের মানুষকে বোঝান, আপনার স্ত্রীও আপনার মতো বাইরে কাজ করে এসেছে। তাই তাঁরও বিশ্রামের প্রয়োজন রয়েছে।
# সংসার ও সন্তান দুজনেরই। তাই এ বিষয়ে আলোচনা করে দুজনের সিদ্ধান্তে আসতে হবে। সুখের সংসারের জন্য দুজনের মধ্যে বোঝাপড়াটাই সবচেয়ে বেশি দরকার।
# স্ত্রীর আয় বেশি হলে হীনমন্যতায় ভুগবেন না; বরং ভাবুন, আপনার সংসার আর্থিকভাবে সচ্ছল হচ্ছে।