প্রেমিকা বা স্ত্রী বয়সে বড় হলে
প্রেম, ভালোবাসা বা বিয়ে যে কোনো বয়সেই হতে পারে। তবে এসব সম্পর্কের ক্ষেত্রে মেয়েরা ছেলেদের থেকে বয়সে ছোট হবে, এমনটাই ভাবে সবাই। কারণ বয়সের ধারণাটি আমাদের দেশের সমাজব্যবস্থাই তৈরি করে দিয়েছে।
নিজের থেকে বয়সে বড় এমন একজন নারীর প্রেমে যে কেউই পড়তে পারেন, তাকে ভালোবাসতে পারেন, এমনকি বিয়েও করতে পারেন। কিন্তু আমাদের সমাজ ও পরিবার এমন ‘অসম’ বয়সের সম্পর্ক সহজে মেনে নিতে চায় না। এমনকি বয়সের পার্থক্যের কারণে ভবিষ্যতে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যেও সমস্যা দেখা দেয়।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মসিউর রহমান বলেন, এ ধরনের সম্পর্কে দুজনকেই নানা ধরনের সামাজিক বা পারিবারিক চাপের সম্মুখীন হতে হয়। তবে তিনি মনে করেন, বয়সের ব্যবধান যদি অনেক বেশি হয়, অর্থাৎ ১০-১৫ বছরের ব্যবধান হলে সোশ্যাল, বায়োলজিক্যাল বা ডেমোগ্রাফিক্যাল সব ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হতে হয় তাদের।
আসলে আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে এই সম্পর্কটি এখনো পুরোপুরি স্বাভাবিক নয়। তাই সমাজ বলি আর পরিবার বলি, কোথাও এই অসম সম্পর্কটি গ্রহণযোগ্য হয়নি।
তবে অধ্যাপক রহমান মনে করেন, যদি এই সম্পর্কটি দ্বিতীয় বিয়ের ক্ষেত্রে হয় তাহলে খুব বেশি সমস্যার সৃষ্টি হয় না। যদি তাঁদের মধ্যে বোঝাপড়া ভালো থাকে।
জেনে নিন এ ধরনের অসম বয়সের সম্পর্কে কী ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয় এবং তার সমাধান কী :
সমস্যা-১
স্বামীর চেয়ে স্ত্রীর বয়স বেশি হলে পারিবারিক ও সামাজিক নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় তাঁদের। ফলে উভয়ের মধ্যেই মানসিক চাপের সৃষ্টি হয়। এই মানসিক চাপ যেমন দুজনের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি করে, তেমনি এর কারণে সম্পর্ক ভেঙেও যেতে পারে।
সমাধান
সম্পর্কের মাঝে দূরত্ব সৃষ্টি হলে তা উত্তরণের চেষ্টা করুন। সঙ্গীর সাথে বেশি সময় কাটান।
সমস্যা ২
আমাদের পরিবারগুলো এখনো গতানুগতিক সম্পর্কের বাইরে বেরোতে পারেনি। খুব কম পরিবারই আছে যারা এমন বিয়ে সহজেই মেনে নেয়। পরিবারের সদস্যরা এ সম্পর্কের ব্যাপারে কোনো ধরনের সহযোগিতাই করেন না।
সমাধান
পরিবারকে চাপ না দিয়ে ধীরে ধীরে তাদের বোঝানোর চেষ্টা করুন যে আপনারা কোনো ভুল সিদ্ধান্ত নেননি। যেকোনো সম্পর্কে প্রয়োজন ভালো বোঝাপড়া, শ্রদ্ধাবোধ, ভালোবাসা আর দায়িত্ববোধ। এখানে বয়স কোনো মুখ্য বিষয় নয়। একসময় না একসময় পরিবার মেনে নেবেই।
সমস্যা ৩
স্বামী-স্ত্রীর বয়সের পার্থক্যের কারণে মানসিক বয়সের পার্থক্যও দেখা দেয়। এই মানসিক বয়সের পার্থক্যের কারণে মাঝে মাঝেই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বোঝাপড়ার অভাব হতে পারে, হতে পারে ভুল বোঝাবুঝিও।
সমাধান
একে অপরের চিন্তাভাবনা, মতামত, সিদ্ধান্ত ইত্যাদিকে গুরুত্ব দিন। সমস্যা হলে খোলাখুলি আলোচনা করুন।
সমস্যা ৪
সাধারণত ৩০-৩৫ বছরের পরেই গর্ভধারণের ব্যাপারটি মেয়েদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যায়। তাই স্ত্রীর বয়স বেশি হলে তা আরো বেশি সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
সমাধান
বিয়ের আগে বা বিয়ের পরপরই ঠিক করে নিন যে আপনারা সন্তান কবে নিতে চান। বেশি দেরি না করাটাই ভালো।
সমস্যা ৫
স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বয়সের পার্থক্য খুব বেশি হলে একটা সময়ে গিয়ে যৌনজীবনে সমস্যার সৃষ্টি হয়। আর এর ফলে দাম্পত্য সম্পর্কে কলহ সৃষ্টি হয়।
সমাধান
শারীরিক সম্পর্কে একে অপরের মধ্যে সমঝোতার দরকার রয়েছে। এ ব্যাপারে ধৈর্য ও সহনশীলতারও প্রয়োজন। তাই দুজনের মতামতকেই প্রাধান্য দিন।