স্বামী-স্ত্রী যখন একই অফিসে
স্বামী-স্ত্রী দুজনেই চাকরিজীবী, আজকাল এটা খুবই স্বাভাবিক একটা ব্যাপার। কিন্তু দুজন একই অফিসে? কর্মস্থল একই হলে স্বামী-স্ত্রী অনেক সময় বিষয়টি ইতিবাচক হিসেবেই নেন। কিন্তু কর্মস্থলের অনেকেই বিষয়টিকে নেতিবাচক হিসেবে নিতে পারেন। তবে স্বামী-স্ত্রী একই অফিসে চাকরি করার সুবিধা ও অসুবিধা দুটোই রয়েছে। সুবিধার জায়গাটা হলো, দম্পতিরা একে অপরের কাজ ও ব্যস্ততা দেখতে পারছেন, যা তাঁদের পারস্পরিক বোঝাপড়ায় অনেক সহায়তা করে।
তবে ভারতের দাম্পত্যবিষয়ক পরামর্শদাতা ড. সঞ্জয় মুখার্জি বলেন, ‘স্বামী-স্ত্রী একসঙ্গে কাজ করবেন, এমন চিন্তা মাথায় না আনাই ভালো। এতে কর্মক্ষেত্রে যেমন সমস্যা হয়, তেমনি কে কতটা ভালো করতে পারে—এ নিয়ে নিজেদের মধ্যেও সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। এবং এর ফলে নিজেদের বিবাহিত জীবনের সুখও নষ্ট হতে পারে। বিশেষ করে বিষয়টি আরও গভীর হয়, যখন দুজনেরই বস হয় একই ব্যক্তি।’
অনেক সময় বিবাহিত জীবনের ছায়া কাজের ওপর এত গভীরভাবে পড়ে যে কর্মক্ষেত্রে নানা সমস্যার সৃষ্টি হয় এবং কর্মক্ষেত্র ও ব্যক্তিগত জীবনে টানাপড়েনও দেখা দেয়। একই সঙ্গে কাজ করার সময় নিজেদের ব্যক্তিগত ভাবনাগুলো আলাদা করে রাখা অনেক কঠিন ব্যাপার।
আবার অনেকেই আছেন, যাঁরা খুব ভালোভাবে এ দুটি বিষয়ের মধ্যেই ভারসাম্য বজায় রাখতে পারেন। এমন ঘটনা অহরহই ঘটছে, যেখানে স্বামী-স্ত্রী একই অফিসে কাজ করছেন এবং এ বিষয়টি তাঁদের কর্মক্ষেত্রে বা ব্যক্তিগত জীবনে কোনো প্রভাব ফেলছে না। গুটিকয়েক সহজ নিয়ম মেনে চললেই বিষয়টি আপনি সহজে সামলাতে পারবেন। চলুন, জেনে নিই গুটিকয়েক সহজ নিয়মের কথা ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়ার বরাতে।
একে অপরের কাজে হস্তক্ষেপ করবেন না
আপনারা বিবাহিত, এর মানে এই নয় যে আপনি আপনার সঙ্গীর সব বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবেন। বিশেষ করে কর্মক্ষেত্রে সঙ্গীর সব বিষয়ে জানতে চাইবেন না। যদি আপনার সঙ্গী তাঁর কোনো সহকর্মীর সঙ্গে সমস্যায় জড়িয়ে পড়েন, তাহলে আগ বাড়িয়ে সে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করবেন না। এটা তাঁদের ওপরই ছেড়ে দিন। একসঙ্গে যখন কাজ করতেই হবে, তখন তাঁদের বিষয় তাঁরাই মিটিয়ে নেবেন।
কিছুটা দূরত্ব বজায় রাখুন
প্রতিটি সম্পর্কেই কিছুটা দূরত্ব বজায় রাখা ভালো। এই কিছু সময়ের দূরত্ব একে অপরের সম্পর্ককে আরো গভীর করতে সাহায্য করে। যখন একই অফিসে কাজ করবেন, তখন নিজেরা একসঙ্গে বেশি সময় না কাটিয়ে অন্য কলিগদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করুন। দুজনের অফিস-বন্ধু আলাদা হতেই পারে। তাঁদের সঙ্গে আলাদা সময় কাটান। একে অপরের পেশাগত সম্পর্কে কথা না বলাই ভালো। এটা আপনার ক্যারিয়ারের জন্যও ভালো এবং এতে আপনার পেশাদারিত্বও প্রকাশ পাবে। এটা সব সময় জরুরি না যে সব কাজ একসঙ্গেই করতে হবে। আপনার সঙ্গীর আলাদা একটি জগৎ থাকতেই পারে। এ বিষয়টি বুঝলে কোনো সমস্যাই আর সমস্যা মনে হবে না।
অতি আন্তরিক আচরণ এড়িয়ে চলুন
অফিসে অতি আন্তরিক আচরণ এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন। কারণ, এ ধরনের আচরণ অনেকের কাছেই দৃষ্টিকটু মনে হতে পারে। আবার কলিগদের কাছে নিজেদের অজান্তেই হাস্যকর হয়ে উঠতে পারেন আপনারা। অফিসে পেশাদারি আচরণ করার চেষ্টা করুন। এটি আপনাদের দুজনেরই ক্যারিয়ারের জন্য ভালো হবে।
ব্যক্তিগত বিষয় নিজের কাছেই রাখুন
যদি বাসায় কোনো ঝগড়া হয়ে থাকে, তাহলে কাজের ক্ষেত্রে তা প্রকাশ করবেন না। নিজের কলিগদের সঙ্গে এ বিষয় নিয়ে কোনো আলোচনাও করতে যাবেন না। পারিবারিক আলোচনা অফিসে করবেন না। এতে কর্মক্ষেত্রে আপনার ভাবমূর্তি নষ্ট হতে পারে। সব সময় মনে রাখবেন, সহকর্মীরা আপনাদের দিকে নজর রাখছেন। তাই কর্মক্ষেত্রে কখনোই নিজেদের ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব প্রকাশ করবেন না। এতে অন্য সহকর্মীরা আপনাদের নিয়ে সমালোচনা করার সুযোগ পেয়ে যাবেন।
পেশাদার হওয়ার চেষ্টা করুন
কর্মক্ষেত্রে কখনো ব্যক্তিগত বিষয়ে আলোচনা করবেন না। বাসায় বাজার নেই, আজ বাচ্চার স্কুলের বেতন দেওয়া হয়নি বা বন্ধুর বিয়েতে কোন পোশাক পরে যাবেন, এসব বিষয়ে আপনি বাসায় ফিরে বা অফিস ছুটির পর বাসায় যেতে যেতেও আপনার সঙ্গীর সঙ্গে বলতে পারেন। তাই অফিসে এসব প্রসঙ্গ টেনে না আনাই ভালো। এ বিষয়টি দুজনকেই খেয়াল রাখতে হবে। এমনকি ব্যক্তিগত নামগুলোও অফিসে এড়িয়ে চলুন।
একে অপরকে হিংসা করবেন না
কোনো একজনের প্রমোশন হলে বা বস প্রশংসা করলে অন্যজন কখনোই হিংসা করবেন না। মনে রাখবেন, একজনের পদোন্নতি বা সফলতা মানে দুজনেরই সফলতা। তাই এ ধরনের ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করুন।
শ্রদ্ধা বজায় রাখুন
কর্মক্ষেত্রে সঙ্গীর সঙ্গে আচরণে সংযত হন। এমন অনেক কারণ থাকতে পারে, যেখানে আপনি সঙ্গীর সঙ্গে একমত নাও হতে পারেন। সে ক্ষেত্রে শ্রদ্ধার সঙ্গে সঙ্গীর কথা শুনুন এবং বোঝার চেষ্টা করুন। অন্য কলিগদের সামনে তাঁর সঙ্গে বাজে কোনো আচরণ করবেন না।
কলিগদের সিদ্ধান্তকে গুরুত্ব দিন
সঙ্গীর কোনো সিদ্ধান্তে সরাসরি সমর্থন জানানোর চেষ্টা করবেন না। অন্যদের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার চেষ্টা করুন। যদি কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে সমস্যার সৃষ্টি হয়, তাহলে পরে আলাদাভাবে ব্যাপারটি নিয়ে আলোচনা করে নিন এবং অন্যভাবে সমাধানের চেষ্টা করুন।