ফিরে দেখা ২০২১ : প্রশাসনকে নাড়িয়ে দেওয়া আলোচিত যত ঘটনা
বিদায়ী বছরে যেসব ঘটনা প্রশাসনকে নাড়া দিয়েছিল, সেগুলোর মধ্যে সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসানের ফোনকল ফাঁস ও পদত্যাগের ঘটনা ছিল অন্যতম। এ ছাড়া একজন জনপ্রতিনিধির সঙ্গে বিরোধের জেরে বরিশাল সদরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে জোড়া মামলার ঘটনা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং মুক্তিযুদ্ধে বীর শহীদের সংখ্যা নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্যের জের ধরে গাজিপুর সিটি করপোরেশনের মেয়রের পদ থেকে মো. জাহাঙ্গীর আলমকে বরখাস্ত, জাতির পিতাকে নিয়ে কটূক্তি এবং দুর্নীতির অভিযোগে রাজশাহীর কাটাখালী পৌরসভার মেয়র মো. আব্বাস আলীর বরখাস্তের ঘটনা, এবং শিক্ষা কর্মকর্তাকে লাঞ্ছিত করে জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মো. শাহনেওয়াজ শাহানশাহের বরখাস্ত হওয়ার ঘটনা উল্লেখযোগ্য।
প্রশাসনজুড়ে মুরাদকাণ্ড
২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে জামালপুর-৪ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন ডা. মুরাদ হাসান। ২০১৮ সালের মন্ত্রী সভায় তিনি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পান। মাত্র পাঁচ মাসের মাথায় তাঁকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে ২০১৯ সালের ১৯ তথ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
তথ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণের পর কখনও গান গেয়ে, কখনও ওয়াজ নসিহত করে, আবার কখনও বিতর্কিত ও আপত্তিকর বক্তব্য-মন্তব্য করে আলোচনায় আসেন ডা. মুরাদ।
গত অক্টোবরে শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষ্যে দেওয়া এক বক্তব্যে মুরাদ হাসান বাংলাদেশের বর্তমান সংবিধান নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন। তাঁর সে বক্তব্যে সংবিধান থেকে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বাদ এবং ১৫তম সংশোধনী বাতিল করে ১৯৭২ সালের সংবিধান পুনর্বহাল রাখার দাবি পেশ করেন। কিন্তু, বাংলাদেশের বর্তমান সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা উল্লেখ থাকায় এবং সব ধর্মের প্রতি সমান মর্যাদা উল্লেখ থাকায় তাঁর প্রস্তাবটি ইন্টারনেট দুনিয়ায় ব্যাপক সমালোচনার মুখোমুখি হয়। ডা. মুরাদের এ দাবি সরকার ও প্রশাসনকে বেকায়দায় ফেলে দেয়। সংবিধান সংরক্ষণের শপথ নিয়ে তিনি নিজেই সংবিধান সংশোধনের দাবি জানানোয় তাঁকে নিয়ে প্রশাসনজুড়ে প্রশ্ন দেখা দেয়।
গত ১ ডিসেম্বর রাতে এক ফেসবুক লাইভে মুরাদ হাসান বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং তাঁর কন্যা জাইমা রহমানকে নিয়ে কটূক্তি করেন। তিনি জাইমা রহমানকে অশালীন ও মারাত্মক আপত্তিকর বক্তব্য দেন। এসব অশ্রাব্য বক্তব্যের কারণে তিনি নেট দুনিয়ায় ‘মুরাদ টাকলা’ নামে হাসাহাসির কারণ হন। এ ঘটনায় বিএনপি তাঁর পদত্যাগ দাবি করে। তবে, বিবিসিকে তিনি বলেন—এসব বক্তব্য দিয়ে তিনি কোনো ভুল করেননি। এগুলো তিনি প্রত্যাহারও করবেন না কিংবা প্রত্যাহার করার ব্যাপারে সরকার ও দলের ওপর থেকে কোনো চাপও নেই। উলটো তিনি বলেন, ‘আমি যা বলি ও করি, তা প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েই করি। ডা. মুরাদ কথা বলা বন্ধ করবে না। ডা. মুরাদ কথা বলবে। আমাকে থামাতে হলে হত্যা করতে হবে।’
৬ ডিসেম্বর ২০২১ সালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মুরাদ হাসানের সঙ্গে চিত্রনায়ক মামনুন হাসান ইমন এবং নায়িকা মাহিয়া মাহি একটি ফোনালাপ ভাইরাল হয়। যেখানে তিনি মাহিয়া মাহির সঙ্গে অশ্লীলভাবে কথা বলেন এবং তাঁর কাছে যেতে বলেন। ওই কথোপকথনে তথ্য প্রতিমন্ত্রী মাহিকে ধর্ষণের হুমকি দেওয়ার পাশাপাশি তাঁকে আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর সহায়তায় তুলে আনার হুমকি দেন। পুরো বক্তব্যে অশ্রাব্য ও অশ্লীল কথা বলেন ডা. মুরাদ। বিষয়টি দেশজুড়ে সমালোচনার জন্ম দেয়। পর পর দুটি ঘটনায় রাজনৈতিক অঙ্গন, নারী অধিকার নিয়ে আন্দোলনকারীসহ বিভিন্ন মহল ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যেমন সমালোচনার ঝড় ওঠে, তেমনি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যেও প্রবল প্রতিক্রিয়া হয়।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তিনি ৭ ডিসেম্বর ইমেইলের মাধ্যমে তাঁর পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেন। তবে, পদত্যাগের জন্য তিনি ব্যক্তিগত কারণের কথা উল্লেখ করেন। তাঁকে প্রতিমন্ত্রী এবং জামালপুর জেলার আওয়ামী লীগের কমিটির পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। তিনি দেশ ত্যাগ করে কানাডার উদ্দেশে দেশ ছাড়েন। কিন্তু, কানাডায় প্রবেশ না করতে পেরে দুবাই গিয়ে সেখানেও প্রবেশ করতে ব্যর্থ হয়ে ১২ ডিসেম্বর দেশে ফিরে আসেন ডা. মুরাদ। সে থেকে তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন।
গাজীপুরের মেয়রের পদ থেকে বহিষ্কার
গত ২৫ নভেম্বর মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলমকে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়। তাঁর এ বহিষ্কারও ছিল দেশজুড়ে আলোচনার অন্যতম বিষয়।
২০১৮ সালে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়রের চেয়ারে বসেন ৩৫ বছর বয়সি জাহাঙ্গীর। মেয়রের পদে বসে প্রথম আলোচনার জন্ম দেন ২০২০ সালে। ওই সময় তিনি চীন থেকে ৫০ হাজার র্যাপিড টেস্ট কিট নিয়ে আসেন, যদিও দেশে তখনও র্যাপিড টেস্টের অনুমোদন ছিল না। আর নিয়ম অনুযায়ী ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের কোনো অনুমতিও তিনি নেননি।
সে সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে বেশ সমালোচনা হয়। এর জবাবে মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেছিলেন, ‘মানুষ মরে গেলে আইন দিয়ে কী করব! … কিন্তু, আমার এখানে ৪০ লাখ মানুষ আমাকে ভোট দিয়েছে। যেকোনোভাবে হোক, আগে তাদের বাঁচানোর চেষ্টা করা আমার দায়িত্ব। মানবিক কারণে আমি আনছি, বাঁইচা থাকলে তখন আইন আদালত।’
গত সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে মেয়র জাহাঙ্গীরের একটি মন্তব্যের অডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলে নতুন করে তোলপাড় শুরু হয়। মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহীদ এবং বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করেন জাহাঙ্গীর আলম। এ ঘটনার পর দল ও প্রশাসনের ভেতরে তাঁকে নিয়ে তীব্র সমালোচনা হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে তাঁকে মেয়রের পদ হারাতে হয়।
কাটাখালীর পৌর মেয়র বরখাস্ত
জাতির পিতাকে নিয়ে কটূক্তি ও দুর্নীতির অভিযোগে গত ১০ ডিসেম্বর রাজশাহীর কাটাখালী পৌরসভার মেয়র মো. আব্বাস আলীকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। জাতির পিতার ম্যুরাল স্থাপনের বিরোধিতায় বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের এক মামলায় গ্রেপ্তার করে তাঁকে কারাগারে নেওয়া হয়েছে।
মো. আব্বাস আলীকে সাময়িক বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত জানিয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল নিয়ে আব্বাসের যে ‘বিতর্কিত অডিও’ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে, সে বিষয়ে ২৫ নভেম্বর তাঁকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু, তিনি কোনো জবাব দেননি। নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ওই অডিও টেপে বলতে শোনা যায়, রাজশাহী সিটি গেইটে বঙ্গবন্ধুর যে ম্যুরাল করার নকশা দেওয়া হয়েছে, সেটা ‘ইসলামি শরিয়ত মতে সঠিক নয়’। এটা করতে দিলে ‘পাপ হবে’।
শিক্ষা কর্মকর্তাকে লাঞ্ছিত করে বরখাস্ত দেওয়ানগঞ্জের পৌর মেয়র
শিক্ষা কর্মকর্তাকে লাঞ্ছিত করে বরখাস্ত হন জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মো. শাহনেওয়াজ শাহানশাহ। গত ২১ ডিসেম্বর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে।
গত ১৬ ডিসেম্বর সকালে বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে পুষ্পস্তবক অপর্ণের সময় ঘোষণা মঞ্চ থেকে পৌরসভার মেয়র শাহনেওয়াজ শাহানশাহর নাম দেরিতে ঘোষণা করায় তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে অনুষ্ঠানের উপস্থাপক উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন। শিক্ষাকর্মকর্তাকে লাঞ্ছিত করার এ ঘটনা গোটা প্রশাসনে তোলপাড় সৃষ্টি করে।
আলোচনায় ছিল বরিশালের ঘটনা
বরিশাল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুনিবুর রহমানের সরকারি বাসভবনে হামলার ঘটনায় সিভিল প্রশাসন এবং ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ কয়েকদিন ধরে ছিল মুখোমুখি অবস্থানে। ১৮ আগস্ট মধ্যরাতে বরিশালে পোস্টার-ব্যানার অপসারণকে কেন্দ্র করে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) সরকারি বাসভবনে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় পুলিশ-আনসার ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে ওসি ও প্যানেল মেয়রসহ সাত জন গুলিবিদ্ধ এবং ২৫ জন আহত হয়। দফায় দফায় সংঘর্ষের পরই ইউএনওর বাসভবনে বিপুল পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
ঘটনার পর ১৯ আগস্ট প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে হামলাকারী আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের দুর্বৃত্ত হিসেবে আখ্যায়িত করে জানায়, ‘আইনের মাধ্যমেই দুর্বৃত্তদের মোকাবিলা করা হবে এবং আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে। বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ এবং তাঁর দুর্বৃত্ত বাহিনী সিটি করপোরেশনের কর্মচারীদের দিয়ে নানা প্রকার প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে ও সব জেলায় (বরিশাল) ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করছে।’
অ্যাডমিনিস্ট্রেশন সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের এই বক্তব্য নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে নানা আলোচনা হয় ওই সময়। সিভিল প্রশাসন একজন নির্বাচিত মেয়রকে এভাবে বলতে পারে কি না, তা নিয়ে নানা কথা ওঠে দলটির নেতাদের মধ্যে। কেউ কেউ মনে করেন, এ বক্তব্য আওয়ামী লীগের প্রতি প্রচ্ছন্ন হুমকি বা আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের মনোভাব প্রকাশ পেয়েছে।
ঘটনার পর সরকারের মন্ত্রীরা এ ঘটনা নিয়ে নিজেদের উদ্বেগের কথা জানান। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, তিনি পরিস্থিতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলেছেন। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না, নিজ দলেরও নেতাকর্মী হলেও ছাড় দেওয়া হবে না। আর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, বরিশালের ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অবস্থা নেওয়া হবে। বেশ কয়েকদিন এ নিয়ে প্রশাসন ও সরকারি দল আওয়ামী লীগের মধ্যে অস্বস্তিকর পরিস্থিতি বিরাজের পর আলোচনার মাধ্যমে সমাধান হয় ও পরিস্থিতি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক হয়ে আসে।
সাংবাদিক রোজিনাকে হেনস্তা
পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য গত ১৭ মে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে গেলে প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামকে সেখানে পাঁচ ঘণ্টার বেশি সময় আটকে রেখে হেনস্তা করা হয়। একপর্যায়ে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। রাত সাড়ে আটটার দিকে পুলিশ তাঁকে শাহবাগ থানায় নিয়ে যায়। রাত পৌনে ১২টার দিকে পুলিশ জানায়, রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টে মামলা হয়েছে। তাঁকে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
পাঁচ ঘণ্টার বেশি সময় আটকে রাখা হয় রোজিনাকে। সেখানে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। একপর্যায়ে তিনি মেঝেতে পড়ে যান। রাত সাড়ে আটটায় তাঁকে ধরাধরি করে নারী পুলিশ সদস্যরা ওই কক্ষ থেকে বের করে নিচে নামিয়ে আনেন এবং গাড়িতে তুলে নিয়ে যান। এ সময় সাংবাদিকেরা পুলিশের কাছে জানতে চান, রোজিনাকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে? তখন পুলিশ জানায়, চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে। কিছুক্ষণ পর জানা যায়, তাঁকে হাসপাতালে নয়, শাহবাগ থানায় নেওয়া হয়েছে।
এ ঘটনার প্রতিবাদে সাংবাদিকেরা বিকেলে সচিবালয়ে এবং রাতে শাহবাগ থানার সামনে বিক্ষোভ করেন। এর নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দেয় কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্ট (সিপিজে),অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংগঠন। এ ছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিরা ঘটনার প্রতিবাদ জানায়।
পরে আদালত জামিন মঞ্জুর করলে ২৩ মে বিকেলে গাজীপুরের কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি মেলে রোজিনা ইসলামের।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ১৭টি নথি গায়েব
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ১৭টি নথি গায়েবের ঘটনা ঝড় তুলে গোটা প্রশাসনে। নথি গায়েবের ঘটনা জানা যায় মন্ত্রণালয়ের করা একটি সাধারণ ডায়েরি থেকে। সতেরোটি ফাইল সরানোর ঘটনায় গত ২৮ অক্টোবর সন্ধ্যায় শাহবাগ থানায় জিডি করে মন্ত্রণালয়। জিডিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ফাইলগুলো ছিল স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) শাহাদৎ হোসাইনের কক্ষের লাগোয়া কক্ষে। সে কক্ষে বসেন ক্রয় ও সংগ্রহ শাখা-২-এর সাঁট মুদ্রাক্ষরিক ও কম্পিউটার অপারেটর মো. জোসেফ সরদার ও আয়েশা সিদ্দিকা। ফাইলগুলো এ দুই কর্মীর কেবিনেটে ছিল এবং এ কেবিনেটের চাবিও ছিল তাঁদের দুজনের কাছেই।
এ ঘটনায় মন্ত্রণালয়ের ছয় কর্মচারিকে হেফাজতে নিয়ে তিন দিন ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করে সিআইডি। তাঁদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যে মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালগুলোয় সরঞ্জামাদি সরবরাহের ঠিকাদার রাজশাহীর নাসিমুল গনি টোটনের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাঁকেও আটক করে সিআইডি। এ ঘটনায় মোট ১০ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী।
বাংলাদেশ সচিবালয় প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র। এখানে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে। দেশের অত্যন্ত নিরাপদ ও গুরুত্বপূর্ণ এ স্থান থেকে সরকারি নথি চুরির ঘটনা প্রশাসনকে ভাবিয়ে তোলে।