এক-তৃতীয়াংশ ভোটকেন্দ্রই ‘ঝুঁকিপূর্ণ’, শীর্ষে খুলনা
আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনের এক-তৃতীয়াংশ ভোটকেন্দ্রই ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ বলে এক গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। পাঁচটি কারণ বিবেচনায় নিয়ে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ কেন্দ্রের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। ‘ঝুঁকির’ শীর্ষে রয়েছে খুলনা বিভাগ আর সবার নিচে রয়েছে সিলেট বিভাগ। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়ে পাঠানো এ প্রতিবেদনে প্রতিকারের জন্য দুটি সুপারিশও করা হয়েছে।
নির্বাচন কমিশনের হিসাব অনুযায়ী, সারা দেশে ২৩৩ পৌরসভার তিন হাজার ৪০৩টি ভোটকেন্দ্র রয়েছে। এর মধ্যে এক হাজার ১৮৪টি কেন্দ্রকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ বলা হয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে।
তবে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ ভোটকেন্দ্র সম্পর্কে নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব মো. মোখলেসুর রহমান আজ বৃহস্পতিবার সকালে এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘কমিশনের কাছে ঝুঁকিপূর্ণ ভোটকেন্দ্র বলতে কিছু নেই। এগুলোকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে আখ্যায়িত করে থাকি। গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে আটজন অস্ত্রধারীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ২০ সদস্য মোতায়েন থাকবেন।’
মো. মোখলেসুর রহমান আরো বলেন, পৌর নির্বাচনে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব), পুলিশের পাশাপাশি বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও কোস্টগার্ড মোতায়েন করা হবে। এ ছাড়া জুডিশিয়াল ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের নেতৃত্বাধীন ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে।
সূত্র জানায়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে সবচেয়ে বেশি ‘ঝুঁকিতে’ রয়েছে খুলনা বিভাগ। শতকরা হিসাবে এ বিভাগে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ ভোটকেন্দ্র ৩৪ দশমিক ৮০ শতাংশ। খুলনার ৪৭১টি কেন্দ্রের মধ্যে ১৯৫টিই ‘ঝুঁকিপূর্ণ’, যা শতকরা ৪১ দশমিক ৪০ শতাংশ।
খুলনার পরেই রয়েছে রংপুর বিভাগ। এ বিভাগে মোট ভোটকেন্দ্র ৩০৪টি। এর মধ্যে ১১৮টি কেন্দ্রই ‘ঝুঁকিপূর্ণ’। তৃতীয় অবস্থানে থাকা বরিশাল বিভাগের ১৬৭টি কেন্দ্রের মধ্যে ৬৩টি ‘ঝুঁকিপূর্ণ’, শতকরা হিসাবে ৩৭ দশমিক ৭০ ভাগ। চট্টগ্রাম বিভাগ রয়েছে চতুর্থ অবস্থানে। এ বিভাগের ৪৮০টি কেন্দ্রের মধ্যে ১৬৯টি কেন্দ্র ‘ঝুঁকিপূর্ণ’।
ঢাকা বিভাগে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ ভোটকেন্দ্র ৩৪৮টি। এখানে মোট ৯৯১টি কেন্দ্র রয়েছে। ঝুঁকির তালিকায় এ বিভাগ পঞ্চম। রাজশাহী বিভাগের অবস্থান ষষ্ঠ। এ বিভাগের ৮০১টি কেন্দ্রের মধ্যে ২৪৬টি ‘ঝুঁকিপূর্ণ’, যা শতকরা ৩০ দশমিক ৭০ ভাগ।
সবচেয়ে কম ‘ঝুঁকিতে’ রয়েছে সিলেট বিভাগ। এখানকার ১৮৯টি কেন্দ্রের মধ্যে ৪৫টি ‘ঝুঁকিপূর্ণ’, যা শতকরা ২৩ দশমিক ৮০ ভাগ।
ঝুঁকির পাঁচ কারণ
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ নির্ধারণের ক্ষেত্রে পাঁচটি কারণের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে :
১. বিএনপি ও জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীরা তাদের প্রার্থীদের নির্বাচনে জয়লাভ করানোর উদ্দেশ্যে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে ভোটকেন্দ্রে যাওয়া থেকে বিরত রাখতে নাশকতা ও গোলযোগ সৃষ্টির অপচেষ্টা চালাতে পারে।
২. এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও একচেটিয়া ভোট লাভের চেষ্টায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল-সমর্থিত প্রার্থীরা কতিপয় কেন্দ্রে গোলযোগ সৃষ্টি করতে পারে।
৩. নির্বাচনকে বিতর্কিত কিংবা রাজনৈতিক পরিবেশকে অস্থিতিশীল করতে বিএনপি-জামায়াত গোলযোগ সৃষ্টি করতে পারে।
৪. ভোট গ্রহণ-পরবর্তী সময়ে পরাজিত প্রার্থীর সমর্থকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে বা পূর্বশত্রুতার জের ধরে কিংবা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে এলাকায় গোলযোগ করতে পারে।
৫. আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল এবং আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থীর প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে এলাকায় গোলযোগ সৃষ্টি হতে পারে।
দুই দফা সুপারিশ
‘ঝুঁকিপূর্ণ’ কেন্দ্রগুলোর এলাকায় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে দুই দফা সুপারিশ করা হয়েছে।
প্রথম সুপারিশে বলা হয়েছে, ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অবস্থান জোরদার করতে হবে। পাশাপাশি ওই এলাকায় নির্বাচনের দুদিন (৪৮ ঘণ্টা) আগ থেকে ভোটের দুদিন পর পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা অব্যাহত রাখা উচিত।
এ ছাড়া ‘সংখ্যালঘু অধ্যুষিত’ এলাকায় ভোট গ্রহণের আগ থেকে ভোট গ্রহণের পর পর্যন্ত সার্বক্ষণিক ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
আগামী ৩০ ডিসেম্বর সারা দেশে ২৩৩টি পৌরসভায় সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে ফেনী জেলার পরশুরাম পৌরসভায় মেয়র ও কাউন্সিলর পদে একক প্রার্থী থাকায় সেখানে কোনো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে না। এ ছাড়া ছয়টি পৌরসভায় আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী একক প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন।
সারা দেশে ৯২৩ জন মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ অন্যান্য দলের মনোনয়নপ্রাপ্ত প্রার্থীরা নির্বাচনে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন।