রোহিঙ্গা গণহত্যার বিচারে এখন আপত্তি নেই সু চির দলের
মিয়ানমারে গত বছরের সামরিক অভ্যুত্থানের পর দেশটির গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সান সু চির দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসির (এনএলডি) নেতৃত্বে গঠিত ছায়া সরকার বলেছে, রোহিঙ্গা সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে মিয়ানমারের গণহত্যার অভিযোগে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) যে মামলা চলছে, সেই মামলার বিচারে তাদের কোনও আপত্তি নেই।
গত বছরের শুরুর দিকে সামরিক বাহিনী ক্ষমতা ছিনিয়ে নেওয়ার আগে মিয়ানমারের বর্তমান ক্ষমতাচ্যুত অং সান সু চি নেতৃত্বাধীন সরকার আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগে গাম্বিয়ার দায়েরকৃত মামলায় প্রাথমিকভাবে আপত্তি জানিয়েছিল। এই আপত্তি জানানোকে মামলার প্রক্রিয়া বিলম্ব করার পদক্ষেপ হিসাবে দেখা হয়েছিল।
সু চির রাজনৈতিক দল এনএলডির ক্ষমতাচ্যুত নির্বাসিত আইনপ্রণেতা এবং সাবেক প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের নিয়ে গঠিত মিয়ানমারের জাতীয় ঐক্যের সরকার (এনইউজি) মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে বলেছে, এই মামলার ব্যাপারে প্রাথমিকভাবে যে আপত্তি জানানো হয়েছিল, তা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। খবর রয়টার্সের।
এনইউজি বলছে, প্রশাসনিক ধারণার মধ্যে থেকে বেলজিয়ামের ব্রাসেলসে জান্তার অধীনে থাকা মিয়ানমারের কূটনীতিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে তারা এবং আপত্তি প্রত্যাহার করে নেওয়ায় তা আইনি প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করবে কিনা সেটি এখনও স্পষ্ট নয়।
বিবৃতিতে এনইউজি বলেছে, যদি আইসিজে সামরিক জান্তাকে স্বীকৃতি দেয়, তাহলে সেটি জান্তাকে আরও সাহসী এবং সেনাবাহিনীর দৈনন্দিন নৃশংস অপরাধ বাড়িয়ে তুলবে। জাতিসংঘে নিযুক্ত মিয়ানমারের স্থায়ী প্রতিনিধি কিয়াও মো তুনের সঙ্গে এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে আইসিজের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে এনইউজি।
এ বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে আইসিজের মন্তব্য পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে রয়টার্স। মিয়ানমারের সামরিক জান্তার একজন মুখপাত্রকে টেলিফোন করা হলেও সাড়া দেয়নি।
২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দেশটির সেনাবাহিনীর কঠোর অভিযানে ৭ লাখ ৩০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা মুসলিম বাংলাদেশে পালিয়ে আসে।
আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা রাখাইনে বেসামরিক হত্যা এবং গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়ার প্রমাণ নথিভুক্ত করেছে। দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের হামলার পর সেখানে শুরু হওয়া সামরিক অভিযান ‘গণহত্যার অভিপ্রায়ে’ চালানো হয়েছিল বলে জানায় জাতিসংঘের তদন্তকারীরা।
হেগের আদালতে মামলা দায়ের হওয়ার পর ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে এক শুনানিতে অংশ নিয়ে মিয়ানমারের তৎকালীন বেসামরিক সরকারের প্রধান অং সান সু চি মামলাটি খারিজ করে দেওয়ার অনুরোধ জানান।
সরকার হটিয়ে সেনাবাহিনী ক্ষমতা নেওয়ায় দেশটিতে গণবিক্ষোভ চলছে এবং ভিন্নমতাবলম্বীদের বিরুদ্ধে রক্তক্ষয়ী অভিযান পরিচালনা করছে সামরিক জান্তা। দেশটির ক্ষমতাচ্যুত অং সান সু চিকে এখন বিচারের মুখোমুখি করেছে সামরিক জান্তা এবং তাকে কয়েক বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
মহামারির কারণে এতদিন হেগের আদালতের সেই মামলার কার্যক্রম অনেকটাই স্থবির ছিল। তবে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীকে আদালত নির্দেশ দিয়েছিলেন, প্রতি ৬ মাস পর পর যেন রোহিঙ্গা পরিস্থিতি সম্পর্কে আদালতে প্রতিবেদন জমা দেয় সেনাবাহিনী।