স্ত্রীকে দেখতে সাইকেলে আট দেশ পেরিয়ে সুইডেনে!
‘দ্য জাপানিজ ওয়াইফ’ চলচ্চিত্রে অজপাড়া গাঁয়ের স্নেহময়ের সঙ্গে পত্রমিতালির মাধ্যমে প্রেম হয়ে ছিল জাপানি তরুণী মিয়াগির। দেখাদেখি নেই, বিয়ে পর্যন্ত হয়েছে পত্র মারফত। স্নেহময় প্রেমের পাশাপাশি অপেক্ষা করেছেন জাপানে যাওয়ার। স্নেহময়ের যাওয়া হয়নি। কিন্তু বাস্তবে ভারতের ওড়িশার প্রদ্যুম্ন হার মানিয়েছেন স্নেহময়কে। অপর্ণা সেনের নায়ক স্নেহময় সাইকেল নিয়ে কেবল গ্রামেই চক্কর দিয়েছেন। কিন্তু প্রদ্যুম্নের সাইকেল পৌঁছেছে সুইডেন! সেখানে বাস্তবের নায়িকা শার্লো বা চারুলতার দেশ।
সম্প্রতি প্রদ্যুম্নকে নিয়ে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে ইন্ডিয়া টাইমস। ১৯৭৫ সালে ভারতে প্রদ্যুম্ন কুমার মহানান্দিয়ার বিয়ে হয় সুইডেনের মেয়ে শার্লো ভন স্লেভদিনের। দেশে ফেরার সময় প্রদ্যুম্নকে সুইডেন যাওয়ার টিকিট দিয়েছিলেন শার্লো। কিন্তু প্রদ্যুম্ন নিজের টাকায় যেতে চেয়েছিলেন। তিন বছর পর ১৯৭৮ সালে নিজের সব বিক্রি করে একটা সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়েন তিনি। আটটি দেশের ওপর দিয়ে সাইকেল চালিয়ে তিনি হাজির হন সুইডেনের সীমান্তে।
সীমান্তে প্রদ্যুম্নকে দেখে সুইডেনের পুলিশের চক্ষু চড়কগাছ! এ লোকের বউ সুইডেনে! আর বউকে দেখতে সাইকেলে করে এত দূর!
ওড়িশাতে নিম্নবর্ণের ঘরে জন্ম নেন প্রদ্যুম্ন। অচ্ছ্যুৎ বলে স্কুলে সমস্যা হয় তাঁর। প্রতি পদে পদে অপমানিত হতে হয়। একইসঙ্গে তাঁকে পড়াশোনা করানোর মতো পয়সাকড়িও ছিল না তাঁর মা-বাবার। কিন্তু প্রদ্যুম্নের আঁকার হাত ছিল অসাধারণ। ১৯৭১ সালে তিনি নয়াদিল্লির আর্ট কলেজে ভর্তি হন। দিনে দিনে তিনি পোট্রেট আঁকায় নাম কুড়াতে থাকেন। সুনাম ছড়িয়ে পড়তে থাকে চারিদিকে।
প্রদ্যুম্নের কথা শুনে ১৯৭৫ সালে লন্ডনের এক ছাত্রী শার্লো ভন স্লেভদিন ভারতে আসেন। উদ্দেশ্য প্রদ্যুম্নকে দিয়ে পোট্রেট করাবেন। সেই থেকে তাঁর সঙ্গে গল্প, প্রেম এবং একেবারে রীতিনীতি মেনে বিয়ে। শার্লো বিয়ের পর নিজের নাম বদলে রাখেন চারুলতা।
নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার সময় প্রদ্যুম্নকে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন শার্লো। কিন্তু পড়াশোনা শেষ না হওয়ায় যেতে চাননি তিনি। একই সঙ্গে জেদ ছিল নিজ অর্থে যাওয়ার।
১৯৭৮ সালে নিজের সব বিক্রি করে সাইকেল আর দরকারি জিনিসপত্র কেনে ইউরোপের দিকে রওনা দেন প্রদ্যুম্ন। গন্তব্য সুইডেন। সোভিয়েত ইউনিয়ন তখনো জীবন্ত। আফগানিস্তান, ইরান, তুরষ্ক, বুলগেরিয়া, যুগোস্লাভিয়া, জার্মানি, অস্ট্রিয়া এবং ডেনমার্ক পেরিয়ে হাজির হন সুইডেনের সীমান্তে। এত পথ যেতে তাঁর সময় লেগেছিল চার মাস তিন সপ্তাহ।
বিয়ের ৪০ বছর হয়ে গেল। দুই সন্তানকে নিয়ে এখন সুইডেনেই আছেন প্রদ্যুম্ন ও শার্লো। চিত্রকলা বিষয়ে সুইডিশ সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করছেন তিনি। এ ছাড়া সুইডেনে ওড়িশার সাংষ্কৃতিক দূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। চিত্রকলায় অবদানের জন্য ভুবেনশ্বরের উৎকল বিশ্ববিদ্যালয় প্রদ্যুম্নকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি দিয়েছে।
সুইডিশ সরকার শার্লো ও প্রদ্যুম্নের প্রেম নিয়ে একটি প্রামাণ্য চিত্র নির্মাণ করেছে। এ রকম কাহিনী নিয়ে বলিউড বসে থাকবে তা কি হয়? প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সঞ্জয় লীলা বানসালি নাকি এ নিয়ে চিন্তাভাবনাও শুরু করেছেন।