নওগাঁয় হত্যা মামলায় ৯ জনের মৃত্যুদণ্ড
নওগাঁয় আলোচিত ট্রিপল মার্ডারের নয় আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই মামলায় একজনের আমৃত্যু কারাদণ্ড ও ১০ জনের খালাস দেওয়া হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের প্রায় আট বছর পর এই মামলার রায় ঘোষণা করা হলো।
আজ সোমবার দুপুরে ট্রিপল মার্ডার মামলার রায় দেন নওগাঁর অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক হাসান মাহমুদুল ইসলাম।
মৃত্যুদণ্ড ও আমৃত্যু দণ্ডাদেশের আসামির প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়।
মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া আসামিরা হলেন, নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার মিঠাপুর ইউনিয়নের উজালপুর গ্রামের সাইদুল ইসলাম, আইজুল হক, হেলাল হোসেন, জালাল হোসেন, বেলাল হোসেন, জায়েদ আলী, আবুল হোসেন, মোস্তফা ও সোহাগ আলী।
দণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে সাইদুল ইসলাম, জায়েদ আলী ও সোহাগ আলী পলাতক। অন্যরা রায়ের সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে হাসেম আলীকে। তিনি বদলগাছীর উজালপুর গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন। রায়ের সময় তিনি আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
মামলার রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক বলেন, ‘সামান্য বিষয় থেকে এই ধরনের হত্যাকাণ্ড খুবই মর্মান্তিক। এই ধরনের হত্যাকাণ্ডের ঘটনা যাতে আর না ঘটে সে জন্য সমাজে একটা বার্তা দেওয়া উচিত।’
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণে জানা গেছে, জমিজমা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে উজালপুর গ্রামের শহিদুল ইসলাম, তাঁর ভাই আমজাদ হোসেন ও শ্যালক আব্দুল ওয়াদুদের পরিবারের সঙ্গে প্রতিপক্ষ হাসেম আলী, সাইদুল ইসলাম, আইজুল হক, হেলাল হোসেনসহ অন্য আসামিদের বিরোধ চলছিল। ওই বিরোধের জের ধরে জমির দখল নেওয়াকে কেন্দ্র করে ২০১৪ সালের ৬ জুন বিকেল ৩টার দিকে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে শহিদুল ইসলাম, আমজাদ হোসেন ও আব্দুল ওয়াদুদের ওপর হামলা চালিয়ে প্রতিপক্ষের লোকজন তাঁদের হত্যা করে।
এ ঘটনায় নিহত শহিদুল ইসলামের ছেলে মো. ফরহাদ হোসেন বাদী হয়ে পরের দিন ২৪ জনের নামে বদলগাছী থানায় হত্যা মামলা করেন।
অভিযুক্ত আসামিদের মধ্যে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেওয়ার আগেই দুজনের মৃত্যু হয়। পরে মামলাটি তদন্ত করে ২০ জনের বিরুদ্ধে ২০২১ সালের ৫ ডিসেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন মামলায় তদন্তকারী কর্মকর্তা।
২০২১ সালের ৭ ডিসেম্বর এই মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। এই মামলায় বাদী ও বিবাদী পক্ষের ১৮ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আদালত আজ সোমবার বেলা সাড়ে ১২টায় এই রায় দেন।
বাদীপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন রাষ্ট্রপক্ষে কৌঁসুলি (এপিপি) মোজাহার আলী ও আব্দুল্লাহেল বাকী। আসামিপক্ষে মামলা পরিচালনা করেন আইনজীবী রফিকুল ইসলাম বাচ্চু।
বাদীপক্ষের আইনজীবী মো. মোজাহার আলী বলেন, ‘দণ্ডবিধির ৩০২/৩৪ ধারার শাস্তিযোগ্য অপরাধের অভিযোগ বাদীপক্ষ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে সক্ষম হওয়ায় ২০ আসামির মধ্যে নয়জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং একজনকে আমৃত্যু কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। এ মামলার রায়ে আমরাসহ বাদী পক্ষ অত্যন্ত খুশি।’
মামলার বাদী নিহত শহিদুল ইসলামের ছেলে মো. ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘এই রায়ে আমরা খুশি। অবিলম্বে আসামিদের সাজা কার্যকর হলে আমার বাবা, চাচা ও মামার আত্মা শান্তি পাবে।’
আসামিপক্ষের আইনজীবী রফিকুল ইসলাম বাচ্চু বলেন, ‘বিচারে নয় আসামিকে ঢালাওভাবে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ আমরা মেনে নিতে পারছি না। মক্কেলের সঙ্গে আলোচনা করে এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করা হবে।’