ইউক্রেনে মানবিক সহায়তা প্রদানে বাংলাদেশের সমর্থন
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন ও জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হায়াশি ইয়োশিমাসার মধ্যে বৈঠক শেষ হয়েছে। আজ সোমবার জাপানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ঘণ্টাব্যাপী এ বৈঠক হয়। বৈঠকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দুই দেশের সম্পর্ক এগিয়ে নিতে জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।
দ্বিপক্ষীয় এ বৈঠকে তাঁরা সমসাময়িক গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিষয়াদি নিয়ে আলোচনা করে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ইউক্রেনে মানবিক সহায়তা প্রদানের পদক্ষেপকে বাংলাদেশ সমর্থন করেছে।
জাপানের নাম বাংলাদেশের জনগণের কাছে অতিপ্রিয় এবং জাপান এশিয়াতে বাংলাদেশের বৃহত্তম দ্বিপক্ষীয় উন্নয়ন সহযোগী উল্লেখ করে ড. মোমেন সুনীল অর্থনীতি, অটোমোবাইলস, আইসিটি, ফার্মাসিউটিক্যালস, প্রকৌশল, ইলেকট্রনিক্স ইত্যাদির মতো উদীয়মান খাতে জাপানি বিনিয়োগের আমন্ত্রণ জানান।
জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির সাথে সাথে আরও জাপানি কোম্পানি বাংলাদেশে বিনিয়োগে আকৃষ্ট হবে। দ্বিপাক্ষিক অর্থনৈতিক সম্পর্ক এগিয়ে নিতে সুনীল অর্থনীতি, আইসিটি ও ফার্মাসিউটিক্যালসে আরও সহযোগিতা করবে জাপান। বাংলাদেশের তরুণ জনগোষ্ঠী দ্রুত শিখতে পারে ও পরিশ্রমী।
দক্ষ জনগোষ্ঠী গড়ার লক্ষ্যে জাপান সরকারকে আরও বেশি সংখ্যক বৃত্তি ও দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ দিয়ে সহায়তার অনুরোধ জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হায়াশি বলেন, জাপান মানবসম্পদ উন্নয়নে বাংলাদেশকে বৃত্তি ও দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ প্রদান অব্যাহত রাখবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বাংলাদেশকে জাপানের কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন প্রদানের জন্যে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, এ সকল সহায়তার কারণেই বাংলাদেশ এ পর্যন্ত দক্ষতার সাথে কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবেলা করেছে।
বাংলাদেশ রোহিঙ্গা সমস্যা ও ভাসানচরে স্বেচ্ছায় ৩০ হাজার রোহিঙ্গাকে স্থানান্তরসহ এ পর্যন্ত গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের বিষয়টি তুলে ধরেছে। বাংলাদেশকে এ পর্যন্ত প্রদেয় সহায়তার পাশাপাশি সমস্যা নিরসনে জাপানের অবিচল প্রতিশ্রুতির জন্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাপানকে ধন্যবাদ জানান এবং এ সমস্যার দ্রুত সমাধানের জন্য জাপানের আরও সম্পৃক্ততা আশা করেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী হায়াশি বলেন, জাপান বাংলাদেশকে সহায়তা অব্যাহত রাখবে। কারণ এ সমস্যা সমাধানের জন্য প্রত্যাবাসন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ইউক্রেন, উত্তর কোরিয়া ও ইন্দো-প্যাসিফিকের পরিস্থিতি তুলে ধরে বাংলাদেশের সহযোগিতা কামনা করেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, বাংলাদেশ শান্তিপ্রিয় দেশ ও যুদ্ধের বিরুদ্ধে। ইরাক, আফগানিস্তান, সিরিয়া বা লিবিয়া যেখানেই যুদ্ধ হয় সেখানে জানমালের ক্ষতি হয়; যা আমরা ইউক্রেনে প্রত্যক্ষ করছি। বাংলাদেশ মানবিক বিবেচনায় রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে এবং ইউক্রেনে মানবিক সহায়তা প্রদানের পদক্ষেপকে সমর্থন করেছে।
দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যু এবং বাংলাদেশের মতো ঝুঁকিপূর্ণ দেশের উপর এর প্রভাব নিয়ে আলোচনা করেন। তারা বৈশ্বিক ইস্যুতে একসঙ্গে কাজ করতে সম্মত হয়েছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বাংলাদেশের Regional Adaptation Centre (আঞ্চলিক অভিযোজন কেন্দ্র) জন্য জাপানের সহায়তা কামনা করেন। দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিভিন্ন বহুপাক্ষিক ফোরামে ভবিষ্যৎ প্রার্থিতা নিয়েও আলোচনা করেছেন এবং একে অপরের প্রার্থীদের সমর্থন দেওয়ার কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে পারস্পরিক সুবিধাজনক সময়ে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানানো হলে তিনি তা বিবেচনা করতে সম্মত হন।
টোকিওতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শাহাবুদ্দিন আহমদ, মিশন উপ-প্রধান শাহ্ আসিফ রহমান ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক মো. এমদাদুল ইসলাম চৌধুরী পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে বৈঠকে অংশ নেন।