মালয়েশিয়া পুলিশের আইজি বাংলাদেশের রতন চৌকিদার!
মালয়েশিয়ায় এক বাংলাদেশিকে নিয়ে চলছে তোলপাড়। প্রতিদিন কত কত মানুষ এসে তাঁর সঙ্গে সেলফি তুলতে অনুরোধ করেন। এর পর পুলিশের আইজির সঙ্গে ছবি তোলা হয়েছে বলে ফেসবুকে পোস্ট করেন। অনেক সময় কাজ ফেলে মানুষের আবদার মেটাতে হয় বাংলাদেশের রতন চৌকিদারকে।
মালয়েশিয়ায় পুলিশ বিভাগ বেশ ক্ষমতাধর। তদন্ত বা কাজের প্রয়োজনে যেকোনো সময় মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীকেও ডেকে বসার ক্ষমতা রাখে পুলিশ। আর সেই পুলিশ বিভাগের প্রধানের দায়িত্বে কি না একজন বাংলাদেশি! অনেকে অবাক হন বৈকি।
তবে এই অবাক হওয়া পর্যন্তই সার। রহস্য ভাঙেন রতন নিজেই। বলে দেন, তিনি দেখতে মালয়েশিয়ার পুলিশ বাহিনীর ইন্সপেক্টর জেনারেল (আইজিপি) তানশ্রী খালিদ আবু বকরের মতো। সত্যিই তাই! আইজিপি খালিদের মুখাবয়বের সঙ্গে হুবহু মিলে যায় বাংলাদেশের রতনের চেহারা। আর এই মিলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হৈচৈ ফেলে রাতারাতি তারকা বনে গেছেন রতন।
তবে লোকে মনে করলেও ৩৭ বছর বয়সী রতন এই মিল একেবারেই অস্বীকার করেন। মালয়েশিয়ার স্থানীয় পত্রিকা নিউ স্ট্রেইট টাইমসে খালিদের ছবি দেখতে দেখতে রতন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমি যে দেখতে আইজিপি খালিদের মতোন, এটা মোটেই ঠিক নয়। তাঁর ছবি আমি ফেসবুকে এবং পত্রিকায় বেশ কয়েকবার দেখেছি। তিনি আমার চেয়ে দেখতে ভিন্ন।’
তবে রতন বললেই তো সে কথা মানছেন না তাঁর মালয়েশিয়ান ভক্তরা। রতন জানালেন, কয়েক মাস আগে একজন মালয়েশিয়ান ফেসবুকে রতনের সঙ্গে তোলা ছবি পোস্ট করে সেখানে ক্যাপশন লেখেন, আইজিপি রুটি তৈরির চাকরি নিয়েছেন। এই ছবি তখন ফেসবুকে বেশ সাড়া ফেলে।
আর এর পর থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কল্যাণে মালয়েশিয়ার ওই অঞ্চলে বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন তিনি। রতন বলেন, ‘সেই মালয়েশিয়ান আমাকে তাঁর সঙ্গে ছবি তুলতে অনুরোধ করেন এবং বলেন, আমাকে একজন পুলিশের লোকের মতো দেখতে। আমি হেসে ছবি তুলি। তবে তখন আমি বুঝিনি তিনি কার কথা বলছেন। এর পর আরো অনেক লোক এসেছেন ছবি তুলতে। তাঁরাও একই কথা বলেছেন। আমাকে ফেসবুকে দেখেছিলেন তাঁরা।’
সম্প্রতি ইংরেজি নববর্ষে আরেকটি ছবি পোস্ট হয় রতনের। আরেকজন মালয়েশিয়ান ফেসবুকে রতনের সঙ্গে তোলা ছবি পোস্ট করে ক্যাপশন লিখেছেন, একই রকম, তবে ভিন্ন।
হাসিখুশি রতন বলেন, ‘মানুষ এসে আমার সঙ্গে ছবি তুলতে চায়। আমি অনেক সময় ব্যস্ততা রেখে লোকের আবদার মেটাই। মানুষকে খুশি হতে দেখলে আমার ভালো লাগে। অনেকেই আমাকে বলেছেন, আমি দেখতে কতটা খালিদের মতো। তবে আমি এখন সত্যিই উনার সঙ্গে দেখা করে একটি ছবি তুলতে চাই।’
রতন জানান, পরিবারকে আর্থিক সচ্ছলতা এনে দিতে পাঁচ বছর আগে বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়া পাড়ি জমান তিনি। তাঁর স্ত্রী এবং দুই শিশুসন্তানের কথা ভাবতে হয়েছিল। ঢাকায় তিনি একটি দর্জির দোকানে কাজ করতেন। মালয়েশিয়ায় আগে থেকে বাস করা তাঁর বন্ধুরা বলেছিলেন, মালয়েশিয়া শান্তিপূর্ণ দেশ এবং এখানে বেশি আয় করে পরিবারকে সহায়তা সম্ভব।
মালয়েশিয়া আসার পর থেকেই শাহ-আলমের সেকশন-১০-এ পাক মাল নাসি আয়াম রেস্টুরেন্টে কাজ করছেন তিনি। সম্প্রতি রেস্টুরেন্টের ওয়েস্টার্ন ফুড বিভাগের দায়িত্ব পান বাংলাদেশের রতন। তিনি এর আগে খাবার এবং পানীয় তৈরির কাজ করতেন।
নিউ স্টেয়ার টাইমসে গত ৩ জানুয়ারি, রোববার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে রতন জানালেন, গত পাঁচ বছরে তিনি ঢাকায় ফেরেনি। তবে আগামী রমজান পরিবারের সঙ্গে কাটাতে চান।
পাক মাল নাসি আয়ামের ২৯ বছর বয়সী ম্যানেজার আমিরুল ইজহাম কামারুল হিলাল বলেন, রতন কঠোর পরিশ্রমী এবং কাজের মাধ্যমে রেস্টুরেন্টকে গৌরব এনে দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমার কখনো মনে হয়নি, রতন দেখতে পুলিশের আইজি খালিদের মতো। হয়তো প্রতিদিন দেখার কারণেই আমার কাছে বিষয়টি ধরা পড়েনি।’ হিলাল বলেন, রতন যখন প্রথম মালয়েশিয়া আসেন, একটি মালয় শব্দও বলতে পারতেন না। তবে এখন কাজের পাশাপাশি মালয় ভাষা দ্রুতই রপ্ত করে নিয়েছেন বাংলাদেশি রতন।