ঘূর্ণিঝড় ‘অশনি’র প্রভাবে উপকূলজুড়ে বৃষ্টিপাত
ঘূর্ণিঝড় অশনির প্রভাবে বঙ্গোপসাগর উত্তাল হয়ে উঠেছে। বর্তমানে এটি পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও পাশের অঞ্চলে অবস্থান করে শক্তিশালী হয়ে ক্রমশই উত্তর-পশ্চিম ভারতের উড়িষ্যার দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এর প্রভাবে প্রভাবে উপকূলজুড়ে বৃষ্টিপাত হচ্ছে।
আজ সোমবার বিকেল ৪টার দিকে পটুয়াখালী আবহাওয়া অফিসের তথ্যে পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে অশনির দূরত্ব প্রায় হাজার কিলোমিটার। ফলে গোটা উপকূলজুড়ে বৈরী আবহাওয়ার পাশাপাশি বৃষ্টিপাত চলমান রয়েছে। আগামী আরও দুদিন হালকা ও মাঝারি বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে বলে পটুয়াখালী আবহাওয়া অফিস পর্যবেক্ষক মো. রাহাত হোসেন নিশ্চিত করেছেন।
পটুয়াখালী আবহাওয়া অফিস জানায়, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় অশনির প্রভাবে পটুয়াখালীসহ দক্ষিণাঞ্চল বিপদমুক্ত। তবে ভারতের উড়িষ্যায় আঘাত হানার সম্ভাবনা অনেক বেশি। এর ফলে এ অঞ্চলের উপকূলে এর মৃদু প্রভাব পড়তে পারে। যে কারণে জানমাল নিয়ে নিরাপদে থাকা উত্তম। আপাতত পায়রা সমুদ্র বন্দরকে দুই নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। আজ ভোর রাত থেকে বিকেল ৬টা পর্যন্ত ৪১ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। তবে যেকোনো সময় আবহাওয়া পরিবর্তন হতে পারে। আগামী দুদিন টানা বৃষ্টিপাতের পর জলোচ্ছ্বাস হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে। তবে সেটা নির্ভর করছে অশনির প্রভাবের উপর।
আবহাওয়া অফিস আরও জানায়, ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটার এর মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার; যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে নিকটবর্তী এলাকার সাগর বিক্ষুব্ধ রয়েছে। তাই পায়রা সমুদ্রবন্দরসহ সব কটি সমুদ্র বন্দরকে দুই নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব নৌযান ও মাছ ধরার ট্রলার নিরাপদ স্থানে যেতে বলা হয়েছে।
পটুয়াখালী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোল্লা এমদাদুল্যাহ বলেন, জেলেদের ঘূর্ণিঝড় সম্পর্কে অবহিত করা হয়েছে। আমরা এখন পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড় অশনি সম্পর্কে কোনো নির্দেশনা পাইনি। পরবর্তী নির্দেশনা পেলে জেলেদের জানিয়ে দেওয়া হবে।
পটুয়াখালী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক এ কে এম মহিউদ্দিন বলেন, আমাদের লোক মাঠে আছে। তারা কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছে এবং সতর্ক বার্তা দিচ্ছে। ইতোমধ্যে কৃষকরা ৫০ শতাংশ মুগডাল ঘরে তুলেছে। বাকি ডাল দ্রুত ঘরে তোলার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ৮০ শতাংশ ধান পেকেছে এমন বোরো ক্ষেতের ধান কেটে ঘরে তোলার জন্য নিদের্শনা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন এলাকায় মাইকিং করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামাল হোসেন বলেন, চার নম্বর সতর্ক সংকেত পাওয়ার পর আমাদের প্রস্তুতি সভা হবে। তারপরও আমরা ঘূর্ণিঝড় 'অশনি' সম্পর্কে অবজারভেশনে আছি।
এদিকে বৃষ্টির কারণে রবিশস্য নিয়ে বিপদে পড়েছে এ অঞ্চলের হাজারো কৃষক পরিবার। গলাচিপা উপজেলার বাউরিয়া এলাকায় কৃষক ইউনুস হাওলাদার বলেন, লোকমুখে অশনির কথা শুনেছি। প্রায় এ দেড় একর জমিতে ঘরে তোলার উপযোগী পাকা মুগডাল রয়েছে। কিন্তু দিনমজুর সংকটে সেই ডাল ঘরে তুলতে পারিনি। ঘূর্ণিঝড়ে যদি পানি ওঠে, তা হলে সব ডাল ভেসে যাবে।
একই উপজেলার সুহরী ব্রিজ এলাকার কৃষক আলমগীর হোসেন জানান, তার ৪ একর জমিতে আধাপাকা বোরো ধান রয়েছে।