ফ্রিল্যান্সিং শিখুন
কীভাবে আপনার ফ্রিল্যান্স বিজনেস প্ল্যান তৈরি করবেন?
আলামিন চৌধুরী ফ্রিল্যান্সিং শুরু করেন ২০০৪ সালে। বর্তমানে তিনি বেসিসের অঙ্গসংগঠন বিআইটিএমের প্র্যাকটিক্যাল এসইও, ডিজিটাল মার্কেটিং ও অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের লিড ট্রেইনার হিসেবে কর্মরত আছেন। তিনি বাংলাদেশের একজন শীর্ষস্থানীয় ইন্টারনেট মার্কেটিং প্রফেশনাল। বিশ্বের বিভিন্ন ইন্টারনেট মার্কেটিং ফোরামের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন তিনি।
আলামিন চৌধুরী ২০১১ সালে বেসিস আয়োজিত ‘বেস্ট ফ্রিল্যান্সার অ্যাওয়ার্ড’ প্রতিযোগিতায় শীর্ষস্থান অর্জন করেছিলেন এবং পরবর্তী সময়ে ২০১৩-১৪ বেসিস আউটসোর্সিং অ্যাওয়ার্ড প্রোগ্রামের একজন জুরি বোর্ড মেম্বার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
বর্তমানে বাংলাদেশ সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনে স্কিলস ফর এমপ্লয়মেন্ট ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম (এসইআইপি) কর্মসূচির প্র্যাকটিক্যাল এসইও, ডিজিটাল মার্কেটিং ও অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং-এ তিনটি ট্র্যাকের ট্রেনিং কার্যক্রম তাঁর তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হচ্ছে। মূলত যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য, নেদারল্যান্ডস ও অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির সঙ্গে কাজ করছেন তিনি।
এনটিভি অনলাইনের পাঠকের জন্য ফ্রিল্যান্সিংসহ অন্যান্য বিষয় নিয়ে প্রতি সোমবার নিয়মিত লিখছেন আলামিন চৌধুরী
আপনি যখনই একটি বিজনেস প্ল্যান নিয়ে চিন্তা করেন, তখন আপনার মাথায় সর্বপ্রথম কী আসে?
আমার ধারণা, আপনি এমন একটি ডকুমেন্ট তৈরির কথা ভাবছেন, যেটি ৩০-৫০ পৃষ্ঠার হবে এবং যেটা তৈরি করতে আপনার কয়েকশ ঘণ্টা খরচ হবে। সাধারণত একাডেমিক লাইনে আমাদের এক ধরনের বিজনেস প্ল্যান মডেল শেখানো হয়। কিন্তু একজন ফ্রিল্যান্সারের জন্য একইভাবে বিজনেস প্ল্যান তৈরি করা ঠিক হবে না। তার পরও আপনি একজন ক্লায়েন্টের সঙ্গে কাজ করার আগে কিছু পরিকল্পনা তৈরি করে নিতে পারেন। বিশেষত, আপনি যদি আপনার গন্তব্য সম্পর্কে নিশ্চিত না হোন, তাহলে আপনি কখনই সেখানে পৌঁছাতে পারবেন না।
এখানে চিন্তার কিছু নেই। এ কাজের জন্য আপনাকে কোনো বিশাল ডকুমেন্ট তৈরি করতে হবে না। আপনি চাইলে বা সম্ভব হলে দুই পৃষ্ঠার মধ্যেও নিচে উল্লেখিত প্রশ্নের উত্তরগুলো সাজিয়ে নিলেই একটি মানসম্মত বিজনেস প্ল্যান তৈরি করে নিতে পারবেন।
আপনি কি সমস্যা সমাধান করে থাকেন?
একজন ফ্রিল্যান্সার বিভিন্ন কাজ করে থাকেন। আপনি একজন ফ্রিল্যান্স আর্টিস্ট হতে পারেন, একজন ফ্রিল্যান্স কনসালট্যান্ট হতে পারেন, ফ্রিল্যান্স রাইটার, ডিজাইনার, ফিল্মমেকার বা ফটোগ্রাফারও হতে পারেন। সত্যিকার অর্থে এখানে এত ক্ষেত্র আছে, যা বলে শেষ করা যাবে না। যখন কেউ আপনাকে জিজ্ঞেস করে আপনি কী করেন, একজন ফ্রিল্যান্সার সাধারণত এভাবেই উত্তর দিয়ে থাকেন, যেমন : ওয়েব ডিজাইনিং, প্রোগ্রামিং, ফটোগ্রাফি ইত্যাদি। কিন্তু আপনি আপনার বিজনেস প্ল্যানে আপনি কী করেন, এর সংজ্ঞা না দিয়ে আপনি কী কী সমস্যার সমাধান করতে পারেন, এ সম্পর্কে বলুন।
আপনি কী করেন? এসইও। এভাবে না বলে আপনি কি সমস্যা সমাধান করতে পারেন? আমি একটি ওয়েবপেজকে সার্চ ইঞ্জিনের প্রথম পেজে নিয়ে আসতে পারি। এভাবে বললে আপনি আরো সহজভাবে বোঝাতে পারবেন আপনার কর্মদক্ষতা সম্পর্কে। কেননা, সব সফল বিজনেস কিছু সংখ্যক মানুষ নিয়েই সমস্যার সমাধান করে থাকে। তাই আপনি কী বা কোন ধরনের সমস্যার সমাধান করতে পারেন বা দিতে পারেন, সেটাই বিবেচ্য বিষয়।
আপনি কার/কাদের জন্য সমস্যা সমাধান করবেন?
এখানে এমন অনেক বিষয় রয়েছে, যা আপনাকে আরো যোগ্য করে তুলবে, যখন আপনি কোনো বিজনেস শুরু করবেন, যেমন : সঠিক ক্লায়েন্টের সঙ্গে কাজ করা।
চিন্তা করে দেখুন, আপনি একজন নারী উদ্যোক্তা, গ্রাফিকস ডিজাইন সার্ভিস নিতে চাইছেন এমন একজনের কাছ থেকে যিনি তরুণ, কর্মক্ষম এবং প্রাণবন্ত। তাহলে আপনি কি এমন একজন গ্রাফিকস ডিজাইনারকে পছন্দ করবেন, যে নিজে একজন তরুণ, কর্মক্ষম এবং প্রাণবন্ত নারী উদ্যোক্তার সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী, নাকি আপনি এমন একজন গ্রাফিকস ডিজাইনারকে পছন্দ করবেন, যে নিজে একজন ফাইন্যান্স কোম্পানির সিইও আর এর সঙ্গে তিনি কিছু ভালো গ্রাফিকস ডিজাইনের কাজ জানেন, এমন কেউ?
আপনার বিজনেসের এই অংশের পরিকল্পনা আরো নির্দিষ্ট হওয়া প্রয়োজন। খুঁটিনাটি বিষয়গুলো লিপিবদ্ধ করুন। আপনি আপনার চাহিদা অনুযায়ী এভাবেই শুধু ক্লায়েন্টদের সংজ্ঞায়িত করবেন না; ব্যক্তিত্ব, মান, মতামত, মনোভাব, স্বার্থ ও জীবনযাপনও উল্লেখ করুন। যখন আপনি আপনার কাঙ্ক্ষিত ক্লায়েন্টদের বুঝতে পারবেন, তখন তাঁদের খুব সহজেই খুঁজে পাবেন। তাঁদের ভাষায় কথা বলুন এবং নিজেকে ‘ব্র্যান্ড’ হিসেবে উপস্থাপন করুন।
আপনি কীভাবে কাঙ্ক্ষিত ক্লায়েন্ট খুঁজে পাবেন?
যেহেতু আপনি এখন নির্দিষ্ট করে ফেলেছেন, কী ধরনের সমস্যা আপনি সমাধান করবেন এবং কাদের জন্য সমাধান করবেন, তাহলে এখন আপনার কাজ হচ্ছে কোথায় এবং কীভাবে এই কাঙ্ক্ষিত ক্লায়েন্ট খুঁজে পাবেন।
‘মার্কেটিং’ শব্দটা নতুন ফ্রিল্যান্সারদের কাছে অনেকটা ভীতিকর, কিন্তু এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ আপনার ফ্রিল্যান্স বিজনেসকে সাফল্যের সঙ্গে এগিয়ে নিতে। তাই আপনি যদি এখন মার্কেটিং পরিকল্পনা তৈরির পরিবর্তে শুধু আপনার কাঙ্ক্ষিত ক্লায়েন্টদের খুঁজতে শুরু করেন, সেটা আরো অনেক বেশি কষ্টসাধ্য হবে।
কেননা, আপনি এখন জানেন যে আপনার কাঙ্ক্ষিত ক্লায়েন্ট কেমন হবে, তাহলে এখন ভাবুন এমন ক্লায়েন্টদের কোথায় পাবেন। তাঁরা কি কোনো নির্দিষ্ট ইভেন্টে যায়, যেখানে গিয়ে আপনি তাঁদের পেতে পারেন। তাঁরা কি কোনো নির্দিষ্ট সোশ্যাল মিডিয়া চ্যানেলে অংশগ্রহণ করে? তাঁরা কি ব্লগে থাকে?
চিন্তা করুন, আপনার কাঙ্ক্ষিত ক্লায়েন্ট এমন কোন জায়গায় সময় ব্যয় করে, যেখানে গেলে বা অবস্থান করলে আপনি তাঁকে পেয়ে যাবেন।
কীভাবে আপনি ভিন্ন?
আপনি হয়তো লক্ষ করেছেন, প্রায় সব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ফ্রিল্যান্সারদের সম্পৃক্ততা রয়েছে।
প্রায় সব ক্লায়েন্ট, যাঁরা বিদ্যমান রয়েছেন, তাঁরা মনে করেন ফ্রিল্যান্সাররা সব সময় তাঁদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছেন।
এখানে এমন কিছু আপনার মধ্যে রাখতে হবে, যা আপনাকে সবার থেকে আলাদা করবে, যাকে মার্কেটাররা বলে ‘Unique Selling Proposition’।
এখানে একটি বিষয় হচ্ছে, আপনি এরই মধ্যে আপনার ক্লায়েন্টের কাছে ইউনিক হওয়ার জন্য অনেক কিছুই করে ফেলেছেন। এর থেকে ভালো unique selling proposition কী-ই বা হতে পারে যে আপনি আপনার কাঙ্ক্ষিত ক্লায়েন্ট বা বিজনেস কী ধরনের হতে পারে, এ সম্পর্কে বলেছেন। এটা একজন অভিজ্ঞ ফ্রিল্যান্সারকে পৃথক করে, কোনো একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে, যা আপনার ক্লায়েন্টের প্রয়োজন।
আপনি কি আরো এমন কিছু বিষয়ে বা দিক থেকে নিজেকে ইউনিক হিসেবে উপস্থাপন করতে পারবেন?
আপনাকে সব সময় আপনার বিজনেস পরিকল্পনা সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা রাখতে হবে, যা আপনাকে সঠিক ক্লায়েন্টের সঙ্গে যোগাযোগে সাহায্য করবে।
কীভাবে আপনি বিজনেস থেকে অর্থ উপার্জন করবেন?
আপনি নিশ্চয়ই আপনার স্বাস্থ্যের জন্য ফ্রিল্যান্সিং বিজনেস শুরু করবেন না। আপনি ফ্রিল্যান্সিং বিজনেস শুরু করবেন অর্থ উপার্জনের জন্য। অন্যের ওপর নির্ভর করে থাকার চেয়ে আপনি নিজেই পরিকল্পনা করুন, কীভাবে আপনার বিজনেসকে একটি আয়ের উৎস হিসেবে আপনি তৈরি করবেন। ভেবে দেখুন, আপনি আপনার কাঙ্ক্ষিত ক্লায়েন্টদের কাছে কী সেবা দেবেন। এটি ঠিক যে আপনি ফ্রিল্যান্সিং করছেন, কিন্তু এর মানে এই নয় যে আপনি সবকিছুই করবেন, আপনি কোনো একটি নির্দিষ্ট সেবা প্রদান করে থাকবেন, আর এটাই স্বাভাবিক।
এখন ভাবুন, আপনি যে সেবা দিচ্ছেন, এর পারিশ্রমিক কত হওয়া উচিত? আপনি এই সেবার বিভিন্ন ধাপে কেমন পারিশ্রমিক আশা করেন? এবার ভাবুন, এমন কতজন ক্লায়েন্টকে আপনি এই সেবা দিতে পারবেন এবং প্রতি মাসে এর দ্বারা প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে আপনি আপনার যাবতীয় খরচ বহন করতে পারবেন কি না। আপনি যদি এভাবে সবকিছু বিবেচনা করে কাজ করেন, তাহলে নিজেই বিস্মিত হবেন যে এটি আপনাকে কতটা সাহায্য করছে।
আপনি কিসের ওপর অর্থ ব্যয় করবেন?
এটা অনিবার্য যে ব্যবসা করতে গেলে কিছু খরচ বহন করতেই হবে, যেমন : আপনার বিজনেসের জন্য ওয়েব-হোস্টিং, ইনভয়েস সফটওয়্যার, ট্যাক্স, বিজনেস কোচ এবং অন্যান্য যা-ই খরচ হোক না কেন। প্রকৃতপক্ষে এটি আপনার বিজনেসকে আরো এগিয়ে নিতে এবং এর প্রোডাক্টিভিটি বাড়াতে আপনি ইনভেস্ট করছেন। আপনাকে নিশ্চিত হতে হবে যে এসব খরচ আপনি আপনার পরিকল্পনায় রেখেছেন।
তাহলে এখন ভেবে দেখুন, আপনার বিজনেস শুরু করতে আপনার কত খরচ হচ্ছে। আপনি কি আপনার বিজনেসকে আরো উন্নত করতে অনেক দামি যন্ত্রাংশ কেনার জন্য বিনিয়োগ করেছেন? আপনার বিজনেস কখনো স্থির অবস্থায় থাকবে না, এটি একটি চলমান অবস্থা, যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিকশিত হবে। কিন্তু এর জন্য একটি সঠিক পরিকল্পনা তৈরি করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
You Don’t Have to Be a Business Major to Create a Business Plan...
কিন্তু আপনাকে আপনার এই ফ্রিল্যান্সিং বিজনেসের জন্য একটি পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে। এটি কোনো জটিল প্রক্রিয়া নয়। এর মানে এই নয় যে আপনাকে কঠোর পরিশ্রম করে কয়েকশ পৃষ্ঠা লিখে তৈরি করতে হবে।
শুধু ওপরের প্রশ্নের উত্তরগুলো গুছিয়ে রাখুন, আর সেটি ঠিকমতো করতে পারলে আমি বলব আপনি আপনার কাঙ্ক্ষিত ক্লায়েন্টের সঙ্গে কাজ করার জন্য প্রস্তুত।
এই লিংকে প্রবেশ করলে [https://goo.gl/I20n9y] একটি ফরম পাবেন। সেটি পূরণ করে আপনারা ফ্রিল্যান্স বিজনেস প্ল্যানের একটি ওয়ার্কশিটের জন্য আবেদন করুন। আমি সেই ওয়ার্কশিটটি আপনাদের ই-মেইল এ পাঠিয়ে দেব।
আজ এই পর্যন্তই।
আগামী পর্ব ছাপা হবে ১৮ জানুয়ারি, সোমবার।
আপডেট থাকুন
আপডেট থাকতে এনটিভির ভেরিফায়েড পেজে লাইক দিন : www.facebook.com/ntvdigital
শুধু প্রযুক্তির খবর পেতে আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিন : www.facebook.com/ntvtech