আদালতে চত্বরে গাঁজার গন্ধ, অস্বস্তিতে মানুষ
আদালতে গাঁজার গন্ধে অনেকটাই বিস্মিত প্রতারণা মামলার বাদী আবির আহম্মেদ (৪৪)। আজ রোববার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এসেছিলেন মামলার শুনানিতে। সেখানে নিষিদ্ধ গাঁজার গন্ধে আঁতকে উঠে তিনি বলেন, ‘এখানেও...!’ যদিও পরে এক আইনজীবীর মাধ্যমে জানতে পারেন, আদালতে গাঁজা খাওয়া হচ্ছে না, জব্দকৃত গাঁজা পোড়ানো হচ্ছে। তাতেই ঝাঁজাল গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে আদালতপাড়ায়। এমনটা ঘটে সপ্তাহে অন্তত দুদিন। এরমধ্যেই চলে আদালতের কার্যক্রম।
আজ রোববার ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত প্রাঙ্গণে দেখা গেছে, একটি চুল্লির মধ্যে নিষিদ্ধ মাদক গাঁজা পোড়ানো হচ্ছে। এ সময় তীব্র ধোঁয়া তৈরি হয়। চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে গাঁজার গন্ধ। এতে আদালতপাড়ায় আসা মানুষের মধ্যে অস্বস্তি ছড়িয়ে পড়ে।
আইনজীবী, বিচারপ্রার্থী, পুলিশসহ আশপাশের স্থানীয়রা জানান, প্রায়ই এমন গন্ধে অস্বস্তিতে ভুগতে হয় তাঁদের। এতে শ্বাসকষ্টেও পড়েন অনেকে। এমন প্রেক্ষাপটে জব্দ গাঁজা ধ্বংসে বিকল্প ব্যবস্থার দাবি জানান তাঁরা।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা জেলার মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান চালিয়ে প্রতিদিন গাঁজাসহ বিপুল মাদক জব্দ করে। কিছু নমুনা রেখে বাকি মাদক একজন ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (সিজেএম) আদালতের বাইরে ধ্বংস করা হয়। সপ্তাহের দুই-তিন দিন এই গাঁজা পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয়। এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলে এ কার্যক্রম।
এভাবে গাঁজা পোড়ানোর কারণ হিসেবে পর্যাপ্ত জায়গার অভাব ও ইনসিনারেটর (মাদক ধ্বংস করার মেশিন) না থাকার কথা বলছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে, গাঁজার ধোঁয়ার কারণে বিচারক, আইনজীবী, বিচারপ্রার্থীসহ সবার চলাফেরায় ভোগান্তির কথাও স্বীকার করেন তারা।
এ বিষয়ে আইনজীবী আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘সপ্তাহে তিন দিন দুপুরের দিকে ঢাকার সিজেএম আদালত চত্বরে গাঁজা পোড়ানো হয়। তখন ধোঁয়ায় পুরো এলাকা অন্ধকার হয়ে যায়। এ কারণে ওই এলাকায় চলাফেরা করা আমাদের জন্য কষ্টকর হয়। কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি, এর যেন একটা বিকল্প ব্যবস্থা করা হয়।’
আবুল কালাম আজাদ আরও বলেন, ‘গাঁজার ধোঁয়ায় সিএমএম, সিজেএম আদালত ও জনসন রোড, শাঁখারীপট্টিসহ আশেপাশের এলাকায় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ সৃষ্টি হচ্ছে। ধোঁয়ায় অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েন।’
বিচারপ্রার্থী আবির বলেন, ‘মামলায় হাজিরা দিতে আদালতে আসতে হয়। কিন্তু, প্রায়ই গাঁজা পোড়ানোর ধোঁয়ায় এ এলাকায় চলাচল করা কষ্ট হয়ে যায়।’
আরেক বিচারপ্রার্থী তাহেরা বানু বলেন, ‘আমি একটি মামলার বাদী। এক বছরের ছোট বাচ্চা নিয়ে আদালতে হাজিরা দিতে এসেছি। কিন্তু, এখানে এসে দেখি সিজেএম আদালতের সামনে থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে। এমন অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে আদালত এলাকায় দাঁড়িয়ে থাকা কঠিন।’
এ বিষয়ে মহাখালী সরকারি সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. শ্রীবাস পাল এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘মাদকের ব্যবহারের বিভিন্ন দিক রয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে এটি ওষুধের ক্ষেত্রেও ব্যবহার হয়। কিন্তু, বাংলাদেশে এটি অপব্যবহার বেশি করা হচ্ছে। তবে, জনসম্মুখে এটি না পুড়িয়ে নির্ধারিত সংরক্ষিত এলাকায় পোড়ানো উচিত।’
ডা. শ্রীবাস পাল আরও বলেন, ‘এই গাঁজার ধোঁয়াটা বাতাসে মিশে কিছুটা ক্ষতির কারণ হতে পারে। তবে, সরাসরি মাদকসেবিরা যেভাবে মাদক সেবন করে, সেভাবে না করলে তেমন ক্ষতি হয় না।’
ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রট আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আনোয়ারুল কবির বাবুল এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘গাঁজা পোড়ানোর ফলে অনেকের অস্বস্তি হচ্ছে। চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারকদের রুমেও এই ধোঁয়া যাচ্ছে, এতে অস্বস্তি হচ্ছে। সবার স্বাস্থ্য ঝুঁকির কথা বিবেচনা করে, গাঁজাসহ অন্যান্য মাদক নদীর পাশে উন্মুক্ত স্থানে পোঁড়ানো উচিত।’