১০ ডিসেম্বর সরকারকে বিদায় করার কর্মসূচি : বিএনপি
কুমিল্লার গণসমাবেশমঞ্চে দাঁড়িয়ে বিএনপি নেতারা বলেছেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার ভোট চোর, রিজার্ভ চোর, ব্যাংকের টাকা লুট করে বিদেশে পাচারকারী, মানুষ হত্যাকারী ও গণবিরোধী। আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকার গণসমাবেশ থেকে এ সরকারকে বিদায় করার এক দফার কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। সুষ্ঠু, নিরেপক্ষ ও গ্রহণযোগ্য ভোটের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে দেশবাসীকে সম্পৃক্ত হওয়ার আহ্বান জানান বিএনপি নেতারা।
সরকারের বুকে কাঁপুনি ধরেছে উল্লেখ করে বিএনপি নেতারা বলেন, এই সরকারকে পরাজিত করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করা হবে। সুষ্ঠু ভোট হলে আওয়ামী লীগের কোনো প্রার্থীরই জামানত থাকবে না বলেও জানান বিএনপি নেতারা।
কুমিল্লা টাউন হল মাঠে আয়োজিত বিএনপির বিশাল গণসমাবেশে দলের কেন্দ্রীয় নেতারা আজ শনিবার এসব কথা বলেন।
এই সরকারকে পরাজিত করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করব : মির্জা ফখরুল
নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে সবাইকে জেগে ওঠার আহ্বান জানিয়েছে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ১৯৭১ সালে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি। আসুন, সবাই আরেকবার জেগে উঠি। সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে আরেকটি যুদ্ধ করে, এই সরকারকে পরাজিত করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করবো ইনশাল্লাহ।
বিএনপির নির্বাচনে জয়ী হলে জাতীয় সরকার গঠন করা হবে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, কথা বেশি নাই, জোর করে দুই বার আওয়ামী লীগ ২০১৪ ও ২০১৮ সালে নির্বাচন করেছে। ২০১৪ তে কেউ ভোট দিতে যায়নি। তিনি (শেখ হাসিনা) নাকি আবার নির্বাচন করবেন। যশোরে তিনি রাষ্ট্রীয় খরচে সমাবেশে বলেছেন, আওয়ামী লীগে ভোট দিলে মানুষ শান্তিতে থাকে। আপনারা (উপস্থিত জনতা) কি শান্তিতে আছেন? এখন সবাই বলছে, আগে জানলে তোর ভাঙা নৌকায় উঠতাম না। জনগণ ভাঙা নৌকায় উঠতে চায় না। তাই সময় থাকতে মানে মানে কেটে পড়ুন। অন্যথায় কীভাবে বিদায় করতে হয়, তা এ দেশের মানুষ জানে।
নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচনের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগের জামানত থাকবে না। তাই আবারও ফন্দিফিকির করছে, ইভিএম দিয়ে ভোট নিতে চাচ্ছে। আবার সেই গায়েবি মামলা শুরু করেছে। রাজশাহীতে ১১টি গায়েবি মামলা হয়েছে। ককটেল বিস্ফোরণ মামলা হয়েছে। কিন্তু কেউ ককটেল বিস্ফোরণের আওয়াজই পায়নি।
প্রতিটি মানুষের চোখে এখন আগুন : মির্জা আব্বাস
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, নয়নকে প্রচারপত্র বিতরণকালে পুলিশ সরাসরি গুলি করে হত্যা করেছে। আমি এর তীব্র নিন্দা জানাই। গুম হওয়া পরিবারের সদস্যরা বক্তব্য দিয়েছেন। তাদের চোখে আমি আগুন দেখছি। প্রতিটি মানুষের চোখে এখন আগুন দেখছি।
মির্জা আব্বাস বলেন, শেখ হাসিনা সরকার জোর করে ক্ষমতায় থাকতে চায়। তারা বিএনপির সমাবেশের জবাব দিতে চায়। তারা যশোরে সমাবেশ করেছে। আজকের এই সমাবেশ আওয়ামী লীগের সকল সমাবেশের জবাব দিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, কদিন আগে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যুবলীগের একটা সমাবেশ হয়েছে। কর্মীরা দেওয়াল টপকে বের হয়ে গেছে। আমাদের কর্মীরা কখনও দেওয়াল টপকে বের হয়ে যায়নি। আমাদের নেতাকর্মীরা যে কোনো পরিস্থিতি ট্যাকেল দেওয়ার জন্য প্রস্তুত। তারা কোনো ভয় পায় না। রক্ত চক্ষু নিয়ে সরকারের বাধা মোকাবিলা করে আসছে।
ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের উদ্দেশে মির্জা আব্বাস বলেন, ইসলামী ব্যাংকের টাকার লুট করে নিয়ে গেছেন। কীভাবে দুর্ভিক্ষ বাঁচাবেন। টাকা পয়সা লুট করে নিয়ে যাচ্ছেন। এবার দেশের জনগণ প্রস্তুত হয়ে গেছে। এই দৈত্যকে সরাতে হবে। যতদিন তারা ক্ষমতায় থাকবে, ততদিনে দেশের মানুষের সব খেয়ে ফেলবে।
ক্ষমতায় এলে কুমিল্লা নামেই বিভাগ করব: ড. খন্দকার মোশাররফ
আমরা ক্ষমতায় এলে কুমিল্লা নামেই বিভাগ প্রতিষ্ঠা করব জানিয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, এই দেশের জনগণ এই সরকারকে আর দেখতে চায় না। আগামী ১০ ডিসেম্বর থেকে এই সরকারের বিদায়ের কর্মসূচি ঘোষণা করব। আপনারা এই সরকারকে বিদায় করতে প্রস্তুত থাকবেন। এই সরকারের সময় শেষ। তারাও বুঝতে পারছে, আগমী দিনে বেগম খালেদা জিয়ার বাংলাদেশ।
ড. মোশাররফ বলেন, আজকে যারা সরকারে আছে, তারা বিনাভোটে সরকারে আছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে। গত ১৪ বছরে শুধু সংসদই নয়, স্থানীয় নির্বাচনেও জনগণ ভোট দিতে পারেনি। সারা দেশে ৬০০ গুম, ১০০০ বেশি নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে। আজকে সমাবেশে শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ১০০ এর বেশি মামলা করেছে, যাতে সমাবেশ সফল করতে না পারি। সরকারের লুটপাটের কারণে ২০ শতাংশ সীমা থেকে ৪০ শতাংশে উঠে গেছে।
খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলা দিয়ে সাজা দেওয়ার কথা উল্লেখ করে মোশাররফ বলেন, বিচার বিভাগকে এই সরকার ধ্বংস করেছে। তারা গায়ের জোড়ে ক্ষমতায় টিকে আছে। র্যাবের নিষেধাজ্ঞা দিয়ে এটা বাংলাদেশের জন্য হুমকি। এই সরকার গণতন্ত্র হত্যা করেছে। তারা গণতন্ত্র ফিরিয়ে দিতে পারবে না।
বিএনপির সমাবেশ সরকারের হৃদকম্পন বাড়িয়ে দিয়েছে : নজরুল ইসলাম
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, বিএনপির এই সমাবেশ সরকারের হৃদকম্পন বাড়িয়ে দিয়েছে। আমাদের ছোট ভাই নয়নকে খুন করেছে। নয়নের রক্ত বৃথা যেতে দিব না। তার রক্তের বদলা হিসেবে দেশের গণতন্ত্রকে মুক্ত করে ছাড়ব। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করবো।
নজরুল ইসলাম বলেন, দেশের কৃষক শ্রমিক আজ ভালো নেই। পত্রিকায় আসছে সারা পৃথিবীর মধ্যে বাংলাদেশে গরুর মাংসের দাম বেশি। জিনিসের দাম কমে না। দাম বাড়ায় প্রতিবাদ করতে গেলেই গুলি করে বিএনপি নেতাকর্মীদের মারে। বিএনপির সমাবেশে আসতে দিবে না। তাই বাধা দেয়। তারা দুর্নীতি করে।
তিনি আরও বলেন, আমরা চাই একটা নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হোক। তখন দেখা যাবে জনগণ খালেদা জিয়া, তারেক রহমানকে পছন্দ করে কিনা? এখন চাপা মারতেছেন সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আপনারা (আওয়ামী লীগ) একজনও জিতবেন না।
দেশে ২০১৪ সালের মতো আর ভোট হবে না : রুমিন ফারহানা
বিএনপির সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বলেছেন, আমরা ১৪ বছর বীভৎস সময় পার করেছি। আমরা ভোট দিতে পারিনি। আমাদের নেতাকর্মীদের নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। আর না। আপনারা টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়ার দিকে তাকান। বিএনপির গণসমাবেশ লোকে লোকারণ্য। এই ভালোবাসা বিএনপির প্রতি ভালোবাসা। তারেক রহমানের প্রতি ভালোবাসা। ২০১৪ সালের মতো আর ভোট হবে না। আগামী ২০২৪ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ভোট হবে। ইভিএম এ ভোট হবে না। ভোট হবে ব্যালটে।
পুলিশের উদ্দেশে রুমিন ফারহানা বলেন, পুলিশের লোকদের বলছি আপনারা জনগণের দিকে বন্দুক তাক করিয়েন না। র্যাব তাক করেছিল, র্যাবকে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। আগামী জাতীয় নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া হবে না, হতে দেওয়া হবে না।
পুলিশ নিরীহ মানুষকে গুলি করে হত্যা করছে : আফরোজা আব্বাস
মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস বলেছেন, বাঞ্ছারামপুর উপজেলার ছাত্রদল নেতা নয়ন মিয়াকে পুলিশ বাহিনী নির্মমভাবে হত্যা করেছে। এই পুলিশ বাহিনী কি ভুলে গেছে? তাদের বেতনের টাকা আসে কোথা থেকে? জনগণের ট্যাক্সের টাকায় তাদের বেতন হয়। সেই পুলিশ বাহিনী নিরীহ মানুষকে গুলি করে হত্যা করছে।
আফরোজা আব্বাস বলেন, আপনাদের বলছি, এখনো সময় আছে আপনারা সতর্ক হোন। আপনাদের বন্দুকের নিশানা ঘুরিয়ে দেন। অন্যায়ের দিকে ঘুরিয়ে দিন। জনগণের কাতারে দাঁড়ান। ১৮ কোটি মানুষের দিকে দাঁড়িয়ে আমাদের সাথে স্লোগান দেন, হটাও মাফিয়া, বাঁচাও দেশ, টেক ব্যাক বাংলাদেশ।