তিন বছর গৃহবন্দি থেকে কী হয়েছে অ্যাসাঞ্জের শরীরে?
২০১২ সাল থেকে যুক্তরাজ্যের লন্ডনে অবস্থিত ইকুয়েডরের দূতাবাসে অবস্থান করছেন সাড়াজাগানো উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ। ইকুয়েডরে রাজনৈতিক আশ্রয় পেয়েছেন এই অস্ট্রেলীয়। ‘যুক্তরাষ্ট্রের চাপে’ নিজ দেশে ব্রাত্য হয়ে যাওয়ার পর প্রায় তিন বছর ধরে এখানেই আছেন এসাঞ্জ।
তবে জাতিসংঘ ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো এতদিন পরে অ্যাসাঞ্জের মানবাধিকারের বিষয়টি নিয়ে আলোকপাত করলেও যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশগুলো অত সহজে তাঁর পিছু ছাড়বে না বলে মন্তব্য করেছে দি ইনডিপেনডেন্ট। সুইডেনে একটি ধর্ষণ মামলা আর গোপন নথি ফাঁসের কারণে যুক্তরাজ্যে গুপ্তচরবৃত্তির মামলায় ‘ফেরারি’ অ্যাসাঞ্জ। এই দুটি দেশ তাঁকে পেলেই যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তুলে দেবে বলে আশঙ্কা করেছেন অনেকেই।
এদিকে ইকুয়েডরের দূতাবাসের ছোট্ট চৌহদ্দিতে দিনরাত ঘরের ভেতর অবস্থান করছেন এই অস্ট্রেলীয়। নিরাপত্তা শঙ্কায় একেবারেই গোপন ঘরে অবস্থানের কারণে সরাসরি সূর্যের আলো লাগছে না তাঁর শরীরে। মাসখানেক আগে রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছিলেন, দীর্ঘদিন তাঁর দেহ সূর্যালোকের স্পর্শে না আসার কারণে অসুস্থ হয়ে গেছেন তিনি।
তাঁর এই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে অ্যাসাঞ্জের চিকিৎসক ও অন্যান্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেছে ইনডিপেনডেন্ট পত্রিকা। পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক অ্যাসাঞ্জের চিকিৎসক জানান, দীর্ঘদিন ধরে সরাসরি সূর্যালোকের সংস্পর্শে না আসার কারণে ত্বকে নানা সমস্যাসহ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছেন অ্যাসাঞ্জ। তেলযুক্ত মাছ, ডিম এবং ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার খেয়ে তাঁর এই ঘাটতি পূরণের চেষ্টা করা হচ্ছে।
ওই চিকিৎসক আরো বলেন, দেহের ৯০ শতাংশ ভিটামিন ডি সূর্যালোক থেকে আসে। আর এই ভিটামিন ডি-এর অভাব হলে শরীরে খুব দরকারি দুটি উপাদান ক্যালসিয়াম ও খনিজ ঠিকমতো গ্রহণ করতে পারে না। আর এতে শরীরে রক্তস্বল্পতাসহ হৃদরোগ এমনকি মৃত্যুও হতে পারে।
অস্ট্রেলিয়ান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট ডা. স্টিফেন পারনিস জানান, মানবদেহে সূর্যের আলো পড়বে- এভাবেই দেহের গঠন ঠিক করা থাকে। ভিটামিন ডি-এর অভাবজনিত কারণে দুর্বল ও অপুষ্ট পেশি, হাড় ক্ষয়ে যাওয়াসহ নানাবিধ রোগ হতে পারে। আর এভাবেই ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যেতে পারে শরীর।
এর আগে গত শুক্রবার উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকে মুক্তি দিতে যুক্তরাজ্যের সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিল জাতিসংঘ। একই সঙ্গে জাতিসংঘ জানিয়েছে, ইকুয়েডরের দূতাবাসে জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকে ‘অবৈধভাবে আটক’ রাখা হয়েছে। তবে জাতিসংঘের আদেশের পর এখনো পর্যন্ত যুক্তরাজ্য ও সুইডেন কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
অ্যাসাঞ্জকে আটকে রাখার বিষয়ে অবৈধভাবে আটকবিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞ দলের প্রধান সিয়ং-ফিল হং বলেন, বিভিন্নভাবে জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের স্বাধীনভাবে চলাফেরায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের আটকাবস্থার ইতি টানতে হবে। তাঁকে স্বাধীনভাবে চলাফেরার অধিকার দিতে হবে।
এর আগে গত বুধবার জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের আটক রাখা অবৈধ কি না জানতে চেয়ে রুল করেন জাতিসংঘের আইনজীবীরা।
সুইডেনের সরকারপক্ষের আইনজীবীর মতে, জাতিসংঘের রুলে বর্তমান অবস্থার কোনো পরিবর্তন নাও ঘটতে পারে। জাতিসংঘের প্রস্তাবকে মানতেই হবে এমন না ভেবে, কোনো মত হিসেবেই দেখতে পারে যুক্তরাজ্য সরকার।