রাঙামাটি-চট্টগ্রাম মহাসড়কে গাছবোঝাই ট্রাকে গুলি
রাঙামাটি থেকে রাজধানী ঢাকার উদ্দেশে রওনা হওয়া গাছবোঝাই একটি ট্রাকে দুর্বৃত্তরা অতর্কিতে ২৫ থেকে ৩০ রাউন্ড গুলিবর্ষণ করেছে। আজ বুধবার (২৫ জানুয়ারি) দুপুর ১২টার দিকে রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কের রাঙামাটি শহরের খুব কাছেই দেপ্প্যাছড়িতে এ ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে রাঙামাটি জেলা পুলিশ।
ট্রাকচালক জানিয়েছেন, গাছবোঝাই ট্রাকে পাহাড়ের থেকে অতর্কিতে কে বা কারা গুলিবর্ষণ করে। পরে অস্ত্রসহ কয়েজন সড়ক ধরে আবার পাহাড়ী পথে চলে যায়।
রাঙমাটি ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘দিনের বেলার এভাবে রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কে দুর্বৃত্তরা ট্রাকে গুলি করে চলে গেল। তাহলে আমাদের শ্রমিকদের জীবনের নিরাপত্তা কোথায়? এভাবে চলতে থাকলে কোনো গাড়ি সড়কে চালাব না আমরা।’
রাঙামাটি কাঠ ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক শাওন ফরিদ এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমার প্রায় তিন বছর ধরে কোনো গ্রুপকে চাঁদা দিচ্ছি না। চাঁদা না দেওয়ায় আঞ্চলিক বিভিন্ন দলের নামে আমাদের কাছে চাঁদা চায়। কিন্তু আমরা চাঁদা দিচ্ছি না কাউকে। এ কারণেই হয়তো কেউ আমাদের কাঠ পরিবহণ করা একটি ট্রাকে গুলি করেছে। বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। আমরা আমাদের জীবনের নিরাপত্তা চাই এবং স্বাভাবিক ব্যবসা করার নিশ্চয়তা চাই। এভাবে দিন-দুপুরে দেপ্পাছড়ির মতো জায়গায় যদি গুলি করে চলে যায়, তাহলে তো এর নেতিবাচক প্রভাব পাহাড়ের ব্যবসা-বাণিজ্য, পর্যটন সবকিছুতেই পড়বে।’
রাঙামাটি কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আরিফুল আমিন বলেন, ‘আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলেছি। যতটুকু জেনেছি, গাড়িতে মোট ২৫-৩০ রাউন্ড গুলিবর্ষণ করে দুর্বৃত্তরা। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, ভয়ভীতি দেখানোর উদ্দেশেই এই ঘটনা। বিষয়টি নিয়ে পুলিশ আরও তদন্ত করবে। পরে বিস্তারিত জানানো যাবে।’
প্রসঙ্গত, রাঙামাটি থেকে প্রতিদিনই বেশ কিছু ট্রাক ছেড়ে যায় রাজধানীসহ সারা দেশে। যাতে পরিবহণ করা হয় পাহাড়ের মূল্যবান সেগুনসহ নানা প্রজাতির গাছ। সচরাচর পাহাড়ে সক্রিয় প্রতিটি আঞ্চলিক দলের সশস্ত্র ইউনিটকে বাগানে গাছ কাটা থেকে পরিবহণ পর্যন্ত প্রতিটি পর্যায়ে নির্ধারিত হারে চাঁদা দিয়েই এসব কাঠ পরিবহণ ও ব্যবসা পরিচালিত হচ্ছিল যুগের পর যুগ ধরে। কিন্তু তিন বছর ধরে প্রশাসনের চাপের মুখে ব্যবসায়ীরা চাঁদা দেওয়া থেকে সরে আসে। এতে আঞ্চলিক সশস্ত্র সংগঠনগুলোর আয়ের সবচেয়ে বড় এই খাতকে কঠোর নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী তাদের শক্তি খর্ব করার প্রয়াস নেয়। এতে ক্ষুব্ধ দলগুলোর কোনো একটি পক্ষ ভীতি প্রদর্শন করে ফের চাঁদা চালুর জন্য এই হামলার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে বলে মনে করছেন কাঠ ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা।