স্কুলছাত্রী জেসি হত্যার মূলহোতাকে সদর থানায় হস্তান্তর
মুন্সীগঞ্জে স্কুলছাত্রী জেসিকা মাহমুদ (১৬) হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার করা প্রধান আসামি বিজয় রহমানকে সদর থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। আজ রোববার রাজধানীর কারওয়ানবাজারের র্যাব মিডিয়া সেন্টারে এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনের পর বিকেলে পুলিশের কাছে তাকে হস্তান্তর করে।
এর আগে গতকাল শনিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) রাতে রাজধানীর ওয়ারী থেকে গ্রেপ্তার করা হয় বিজয়কে।
আজ দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের লিগ্যাল উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, আদিবা আক্তারের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়ান বিজয়। এই সম্পর্ক চলাকালীন গত বছরের জানুয়ারিতে জেসির সঙ্গে প্রেম শুরু করেন। এরপর দুজনের সঙ্গেই প্রেমের সম্পর্ক বজায় রাখেন তিনি। এ অবস্থায় আদিবাকে গোপনে বিয়ে করেন বিজয়। বিষয়টি জানতে পেরে বিজয়ের সঙ্গে তার বিভিন্ন কথোপকথনের স্ক্রিনশট আদিবাকে মেসেঞ্জারে পাঠান জেসি। এর পরই সম্পর্কের অবনতি শুরু হয় বিজয়-আদিবার। যা নিয়ে পরে বিজয়-আদিবার মধ্যে অশান্তি শুরু হয়। এ অবস্থায় বিজয় ও আদিবা মিলে জেসিকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে মুন্সীগঞ্জের কোর্টগাঁও এলাকায় জেসিকে বাসার ছাদে ডেকে নিয়ে হত্যা করা হয়।
র্যাব আরও জানায়, ঘটনার পর নিজেদের নির্দোষ প্রমাণ করতে চেষ্টা করেন বিজয়-আদিবা। তাঁরা জেসিকে ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ার নাটক সাজান।
হত্যাকাণ্ডের পর চার দিন মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান এবং পরে ফরিদপুরের একটি মাজারে ছদ্মবেশে ২২ দিন পলাতক ছিলেন বিজয়।
এদিকে বিজয়কে গ্রেপ্তারে স্বস্তির কথা জানিয়েছে নিহত জেসির স্বজনরা। মামলার বাদী জেসির ভাই জিদান বলেন, ‘বিজয়কে গ্রেপ্তারের খবর পেয়েছি। ও পলাতক ছিল। মনে হয়েছিল ধরা পড়বে কি পড়বে না। এখন ধরা পড়েছে। আমাদের কিছুটা হলেও স্বস্তি লাগছে।’
জিদান আরও বলেন, ‘বোন হারিয়েছি, বোনকে তো আর পাব না। দুই অপরাধীর সর্বোচ্চ শাস্তি যেন হয়—এটাই আমরা এখন চাই।’
প্রসঙ্গত, গত ৩ জানুয়ারি সন্ধ্যায় মুন্সীগঞ্জ শহরের কোর্টগাঁও এলাকায় প্রেমঘটিত বিরোধের জেরে স্কুলছাত্রী জেসি মাহমুদকে বাড়িতে ডেকে নিয়ে পিটিয়ে ও শ্বাসরোধ করে গুরুতর আহত করে বন্ধু বিজয় রহমান ও আদিবা। পরে ছাঁদ থেকে পড়ে যাওয়ার ঘটনা সাজান। হাসপাতালে নেওয়ার পথে ওইদিন রাত ৮টায় মৃত্যু হয় তার। এ ঘটনায় বিজয় ও আদিবাকে অভিযুক্ত করে হত্যা মামলা করেন নিহত জেসির ভাই জিদান। পরে আদিবা আক্তারকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠালে ১৬৪ ধারায় হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন তিনি। অভিযুক্ত আদিবা সদর উপজেলার পঞ্চসার ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি জাহিদ হাসানের মেয়ে এবং বিজয় মুন্সীগঞ্জ শহর ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ও সেচ্ছাসেবক লীগনেতা আরিফুর রহমানের ছেলে।
নিহত জেসিকা জেলা শহরের সরকারি এভিজেএম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী এবং সদর উপজেলার কেওয়ার এলাকার সেলিমের মেয়ে।