‘ইসলামিক রেপ অব ইউরোপ’-এর কড়া সমালোচনা
বিশ্বের বিভিন্ন যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ থেকে ইউরোপের দেশগুলোতে অভিবাসনপ্রত্যাশী মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। সে সঙ্গে বাড়ছে এই ইস্যুতে নানা ধরনের বিতর্ক। তবে সবকিছু ছাপিয়ে গেছে পোল্যান্ডের ডানপন্থী সাপ্তাহিক পত্রিকা ভি সিয়েটচি বা দ্য নেটওয়ার্কের প্রচ্ছদ। অভিবাসী ইস্যুতে ছাপা হওয়া পত্রিকাটির একটি প্রচ্ছদ নিয়ে চলছে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা।
প্রচ্ছদে একজন শ্বেতাঙ্গ নারীর ছবি দেখা যায়, যার পরনে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পতাকা। ছবিতে দেখা যায়, কিছু কালো ও তামাটে বর্ণের পুরুষের হাত ওই নারীর শরীর থেকে পোশাকটি টেনে খুলে ফেলতে চাইছে। আর নারীটি তীব্র চিৎকার করে সর্বশক্তি দিয়ে প্রতিবাদ করার চেষ্টা করছেন।
মূলত জার্মানিতে বর্ষবরণ উৎসবে কিছু অভিবাসী পুরুষ দ্বারা জার্মান ওই ইউরোপীয় নারী লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনাকে প্রতীকীভাবে তুলে ধরতেই এমন প্রচ্ছদ করা হয়েছে। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই প্রচ্ছদের কড়া সমালোচনা করা হচ্ছে।
ব্রিটেনের প্রভাবশালী গণমাধ্যম দি ইনডিপেনডেন্ট জানিয়েছে, কিছু টুইটার ব্যবহারকারী এই ছবিকে জার্মানির নাৎসি এবং ইতালির মুসোলিনির ফ্যাসিস্ট প্রপাগান্ডার সঙ্গে তুলনা করেছেন, যারা নারীদের ওপর আক্রমণের ছবি ইহুদি ও উত্তর আফ্রিকার পুরুষদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করত।
ইউরোপের নারীদের ওপর যৌন সহিংসতা ছাড়াও শরণার্থী ও অভিবাসী পুরুষদের বিরুদ্ধে হাজারো চুরির অভিযোগ উঠেছে।
এই প্রচ্ছদের সঙ্গে পোল্যান্ডের পত্রিকাটি শিরোনাম হিসেবে লিখেছে ‘ইসলামিক রেপ অব ইউরোপ’।
প্রচ্ছদ প্রতিবেদনে লেখক আলেকজান্দ্রা রাইবিনস্কা বলেন, অভিবাসন-সংক্রান্ত বিষয়ের কারণে ইসলামী ও খ্রিস্টান সভ্যতার মধ্য এক অনিবার্য সংঘর্ষ হবে। মুসলিমরা এই যুদ্ধের জন্য প্রচার চালাচ্ছে বলে বিশ্বাস করেন তিনি। লেখক এটাও মনে করেন, বহু সংস্কৃতিকে প্রবেশের সুযোগ করে দিয়ে ইউরোপ তাঁর নিজের বিপদ নিজেই ডেকে আনছে। এই প্রচ্ছদ প্রতিবেদনে গত কয়েক সপ্তাহে ইউরোপীয় নারীদের ওপর যৌন হামলার ঘটনার সংখ্যা তুলে ধরা হয়।
ইতিহাসবিদ আরনল্ড টয়েনবির উক্তি উল্লেখ করে আলেকজান্দ্রা বলেন, ‘সভ্যতা আত্মহত্যা করে, তাকে কেউ খুন করে না।’
পত্রিকাটিতে ‘ইউরোপ কি আত্মহত্যা করতে চায়?’ এবং ‘ইউরোপের জাহান্নাম’ নামে আরো দুটি নিবন্ধ ছাপা হয়েছে।
গ্রিসের সঙ্গে থাকা ভলকান দেশগুলোর সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্তকে চেক রিপাবলিক, হাঙ্গেরি ও স্লোভাকিয়ার সঙ্গে একমত হয়ে স্বাগত জানিয়েছে পোল্যান্ড সরকার। এ ঘোষণার কয়েক দিন পরেই পত্রিকাটি এ ধরনের প্রচ্ছদ করল।
অবশ্যই ভি সিয়েটচি পত্রিকাটির বিরুদ্ধে এর আগেও বিতর্কিত বিষয় নিয়ে প্রচ্ছদ করার অভিযোগ আছে। এর আগে জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মেরকেলকে মাদার তেরেসার চরিত্রে রূপায়ণ করে এবং দেশটির প্রধানমন্ত্রী ইওয়া কোপাকজকে বোরকা পরিয়ে বোমা বহনকারীর চরিত্র রূপায়ণের প্রচ্ছদ এঁকে সমালোচিত হয়েছিল তারা।