সুদানে দুই বাহিনীর সংঘর্ষে নিহত বেড়ে ১৮০
সুদানে সেনাবাহিনী ও আধা-সামরিক বাহিনীর মধ্যে ভয়ঙ্কর লড়াই চলছে। গতকাল সোমবার (১৭ এপ্রিল) রাতে সুদানে জাতিসংঘের দূত জানান, সেনা ও আধা-সামরিক বাহিনী আরএসএফের সংঘর্ষে ১৮০ জন মারা গেছেন। আহত হয়েছেন এক হাজার আটশ জন।
সুদানের বিভিন্ন জায়গায় লড়াই ছড়িয়েছে। রাজধানী খার্তুমে বিমান হামলা হচ্ছে।
গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করে যাওয়া জার্মান সংগঠন ফ্রিডরিক ইবার্ট স্টিফটুংয়ের প্রধান ক্রিশ্চিন রোহার্স বলেন, ‘খার্তুমের বাসিন্দা বেসামরিক মানুষ এই লড়াইয়ের মধ্যে পড়ে গেছেন। তারা বাড়ির বাইরে বের হলেই চারপাশ থেকে গুলির শব্দ শুনতে পাচ্ছেন। সারা দিন ধরে গুলি চলছে।’
ক্রিশ্চিন রোহার্স আরও বলেন, ‘সেনা ও আরএসএফের অফিস শহরের কেন্দ্রস্থলে। সেখান থেকেই লড়াই পরিচালনা করা হচ্ছে।’
সুদানের আসল শাসক আব্দেল-ফত্তাহ আল বুরহান এবং তার ডেপুটি ও আরএসএফের প্রধান জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালো খার্তুমেই আছেন। দাগালোকে তার সমর্থকরা ‘হেমেটি’ বলে ডাকেন। সুদান এখন শাসন করে বুরহানের নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তী কাউন্সিল।
গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সামরিক বাহিনীর সংস্কার কর্মসূচি নিয়ে বিরোধের জেরেই এই সংঘর্ষ। প্রস্তাব ছিল সেনা ও আধাসামরিক বাহিনীকে এক করে দেওয়া হবে।
ফ্রিডরিক বলেছে, ‘বুরহান ও হেমেটির মধ্যে সম্পর্ক কখনই খুব ঘনিষ্ঠ ছিল না। দুজনের স্বার্থ এক হওয়ায় তারা হাত মিলিয়েছিলেন। দুজনে মিলে ২০২১ সালের অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে সামরিক অভ্যুত্থান করেছিলেন। এখন সেনা ও আরএসএফের স্বার্থ আলাদা বলে তারা এখন লড়াই করছেন।’
সাউথ সুদান ফোরামের ম্যারিনা পিটার বলেন, বুরহান ও হেমেটি কেউই নিজেদের কাজের দায় নিতে চান না। দুজনেই সেনাবাহিনী থেকে যাত্রা শুরু করেছেন। দুজনকেই সুদানের দীর্ঘদিনের শাসক ওমর আল-বশির ওপরে উঠতে সাহায্য করেছেন।
বুরহান সেনাতেই থেকে গেছেন। আর হেমেটি আধাসামরিক বাহিনীর নেতৃত্ব দিয়েছেন। ১৯৮০ পরবর্তী সময়ে দারফুরে তিনি অত্যন্ত কঠোর হস্তে বিদ্রোহীদের দমন করেছিলেন।
পিটার বলেন, ‘দুজনেই ভয় পান এবং দায় এড়াতে চান। হেমেটি দারফুরের ঘটনার এবং বুরহান ২০১৯ সালে আল-বসিরের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থানের। দুজনেই তাই ভয়ে থাকেন।’
সুদান নিয়ে বিভিন্ন দেশেরও স্বার্থ আছে। সুদানে সোনার খনি আছে, যা রাশিয়ার সুদান নিয়ে উৎসাহ বৃদ্ধির কারণ। পুতিন সাবেক শাসক আল-বসিরকে বলেছিলেন, সুদান হলো রাশিয়ার অন্যতন প্রধান বন্ধু দেশ।
সেই সময় রাশিয়ার কোম্পানি এম-ইনভেস্টকে সুদান খনির অধিকার দিয়েছিল বলে জানিয়েছে মার্কিন রাজস্ব দপ্তর। এই কোম্পানির পেছনে ওয়্যাগনার গোষ্ঠী আছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
পিটার বলেন, ‘মিসর সরকার চায়, সুদানে একজন স্বৈরাচারী শাসক থাকুক। তাই তারা বুরহানকে সমর্থন করছে। এপ্রিলের গোড়ায় দুই দেশ যৌথ সামরিক মহড়াও করেছে।’
হেমেটির সঙ্গে ইথিওপিয়া, ইরিত্রিয়া ও ইয়েমেনের ভালো সম্পর্ক আছে। মস্কোর সঙ্গেও তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে।
বুরহান ও হেমেটির সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এন্টনি ব্লিংকেন। দুজনকেই তিনি অবিলম্বে সংঘর্ষবিরতির কথা বলেছেন। ব্লিংকেন বলেন, এই লড়াইয়ের ফলে প্রচুর বেসামরিক মানুষ মারা যাচ্ছেন। আহত হচ্ছেন। তাই প্রথম কাজ হলো লড়াই বন্ধ করা।
মিসর জানিয়েছে, তারা এই বিরোধে কোনোভাবে হস্তক্ষেপ করছে না।