মেহেরপুরে ৪০০ টন লিচু উৎপাদনের আশা
মেহেরপুরে স্থানীয়ভাবে চাষ হওয়া মোজাফ্ফর জাতের লিচু স্বাদে গন্ধে ভরা। স্থানীয় মোজাফ্ফর জাতেরসহ চায়না-৩, বোম্বাই ইত্যাদি জাতের লিচুসহ জেলায় ৩০০ হেক্টর জমিতে লিচু চাষ হয়েছে। প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগ না হলে এ মৌসুমে ৪০০ টন লিচু উৎপাদনের আশা করা হচ্ছে। যার বাজার মূল্য ৩০ থেকে ৩২ কোটি টাকা।
আম-কাঁঠালের পাশাপাশি মেহেরপুরের লিচু সুস্বাদু। চাহিদাও ভালো। ভৌগলিক কারণে মেহেরপুরের লিচু অন্য জেলার আগেই বাজারজাত করা যায়। দাম ভালো পাবার কারণে ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে লিচু চাষ। মেহেরপুরের লিচুর কদর হিমসাগর আমের মতোই। লিচু মৌসুমি ফল। আগাম উৎপাদন ও অধিক দামের কারণে লিচু চাষে কৃষকরা অধিক উৎসাহী হয়ে পড়েছে।
এই জেলায় উৎপাদিত লিচু দেশি ও আটি মোজাফ্ফর জাতের (গুটি লিচুও বলা হয়ে থাকে) চাষ আছে। তবে, লিচুর মধ্যে আতা বোম্বাই সর্বশ্রেষ্ঠ। কারণ মাংসল, রসালো, সুমিষ্ট ও ছোট বিচির টকটকে লাল এই লিচু বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ লিচুর অন্যতম।
প্রথমে ব্যক্তি উদ্যোগে কেউ কেউ বাড়ির আঙিনায় শখের বসে চাষ করেন। এই লিচুর চাষ বর্তমানে সম্প্রসারিত হয়েছে। উদ্যান উন্নয়ন বিভাগ থেকে টিএস-৪ ও চায়না ১৪ প্রজাতির লিচুর বাগান তৈরি হয়েছে ব্যাপকভাবে। এগুলোও উন্নত জাত ও বোম্বাই লিচু হিসেবে সর্বত্র পরিচিত। আর মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে বাজারে উঠবে মোজাফ্ফর জাতের লিচু। তার দিন পনের পরেই বোম্বাই লিচু পাকা ধরবে ও বাজারে পাওয়া যাবে।
মেহেরপুরের বিভিন্ন লিচু বাগান ঘুরে দেখা গেছে লিচুর ভারে ডাল নুইয়ে পড়েছে। জেলা শহরের নতুনপাড়ার লিচু চাষী হেকমত আলী জানান, তার ৫ বিঘা জমিতে লিচুর বাগান। লিচুগাছে ফুল আসার আগেই গত জানুয়ারি মাসে পাঁচ লাখ টাকায় লিচু ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন বাগান।
লিচু বাগান ক্রেতা মাবুদ আলী জানান, তিনি তিনটি লিচু বাগান কিনেছেন প্রায় পাঁচ লাখ টাকায়। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে অন্তত আট লাখ টাকার কেনা বেচা হবে। এই একটি মাত্র ফল একমাস সময় যত্ন করতে হয়। লিচুর বড় শত্রু বাদুড় আর চামচিকা। লিচুতে রং ধরলেই একরাতেই চামচিকাতে লিচু কেটে নষ্ট করে দেবে। এজন্য রাত জেগে বাদুড় চামচিকা প্রতিরোধ করতে হয়। অতিরিক্ত তাপদাহও লিচু ফেটে নষ্ট হয়ে যায়।
ঝাউবাড়িয়া গ্রামের লিচু চাষী আব্দুল মান্নান জানান, তার তিন বিঘা জমিতে লিচুর বাগান। চলতি বছরসহ পরবর্তী দুই বছরের জন্য আগাম ফল বিক্রি করে দিয়েছেন সাড়ে পাঁচ লাখ টাকায়।
মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শঙ্কর কুমার মজুমদার বলেন, ‘মেহেরপুরে ৮০ ভাগ বাগানে আটি লিচু চাষ হয়। এই লিচুর বৈশিষ্ট্যগুলো হচ্ছে—আটি মোজাফ্ফর জাতের লিচু আগাম পাকে। সংখ্যায় বেশি ধরে। পোকার আক্রমণ কম হয়। ফলের ৭০ ভাগই রসালো। জেলায় ৩০০ হেক্টর জমিতে লিচু চাষ হয়েছে। ৪০০ টন লিচু উৎপাদন হবে। যার বাজার মূল্য ৩০ থেকে ৩২ কোটি টাকা।