পাখিদের নিরাপদ কৃত্রিম আবাসস্থল বানাতে তৈরি হচ্ছে বাঁশের হাঁড়ি
জীববৈচিত্র্য ও প্রকৃতির ভারসাম্য বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে দেশীয় পাখি। আগে গ্রামে গ্রামে হরহামেশাই দেখা মিলত নানা প্রজাতির দেশীয় পাখির। কালের আবর্তে এসব পাখি এখন হারিয়ে যেতে বসেছে। তেমন একটা শোনা যায় না এই সব পাখির কলরব।
দেশীয় পাখির বংশ বিস্তার এবং আগের মতো পাখির কলরব ফিরিয়ে আনতে প্রতি বছরের মতো এ বছরও ‘পাখির জন্য ভালোবাসা’ স্লোগান নিয়ে কুষ্টিয়ায় মাসব্যাপী দেশীয় পাখির নিরাপদ কৃত্রিম আবাসস্থল স্থাপন কর্মসূচি শুরু হয়েছে। গত সোমবার (২৯ মে) শুরু হওয়া এ কর্মসূচি চলবে মাসব্যাপী।
ওইদিন জেলা প্রশাসকের কার্যালয় চত্বর ও লালন শাহ’র মাজার এলাকার গাছে গাছে এই কৃত্রিম বাঁশের হাঁড়ি স্থাপন করা হয়।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন মানুষ মানুষের জন্য এর কুষ্টিয়ার সভাপতি শাহাবউদ্দিন মিলন, বাংলাদেশ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ফেডারেশন বিবিসিএফের সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া বার্ড ক্লাবের সভাপতি এস আই সোহেল, মানুষ মানুষের জন্য এর কুষ্টিয়ার সাংগঠনিক সম্পাদক নাব্বির আল নাফিজ, মীর কুশল, তানজিম আহমেদ আলীফ, তালহা জুবায়ের, মুবিন, সাবিত ইবনে মামুন, রাফি ইসলামসহ আরও অনেকে।
শাহাবউদ্দিন মিলন বলেন, পাখিদের মুক্তভাবে বাঁচার জন্য পুকুর ভরাট, গাছ নিধন, শিকার- বন্ধ করার ওপর জোর দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। আমাদের দেশে বড় বড় গাছের সংখ্যা কমে যাওয়ায় পাখিরা বাসা বাঁধার স্থান পাচ্ছে না। বড় বড় গাছ না থাকায় বাচ্চা দেওয়ার সময় পাখিরা দিশেহারা হয়ে যায়।
শাহাবউদ্দিন আরও বলেন, তাই দেশীয় পাখির বংশ বিস্তার এবং আগের মতো পাখির কলরব ফিরিয়ে আনতে গাছে গাছে পাখিদের কৃত্রিম আবাসস্থল গড়ে দেওয়ার এ উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এ বছর প্রথম পর্যায়ে ১৪৫টি বাঁশের হাঁড়ি গাছে লাগানো হয়েছে। আরও ৫০০টি হাঁড়ি গাছে গাছে স্থাপন করা হবে।
পরিবেশকর্মী ও সাংবাদিক নাব্বির আল নাফিজ জানান, এখন আগের মতো বড় গাছ নেই। নেই পুরাতন বিল্ডিং যেখানে পাখিরা নিরাপদে বসবাস এবং বংশবিস্তার করতে পারে। পাখিদের নিরাপদ অভয়াশ্রম গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রকৃতিবাদী স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান মানুষ মানুষের জন্য সংগঠনের উদ্যোগে ২০১৩ সাল থেকে কুষ্টিয়ায় পাখিদের নিরাপদ কৃত্রিম আবাসস্থল গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়।
নাব্বির আল নাফিজ আরও বলেন, সে সময় গাছে গাছে মাটির হাঁড়ি লাগানো হয়। কিন্তু দেখা যায় ডালে ডালে চাপ লেগে হাঁড়ি ভেঙে পাখির ছানাগুলো নিচে পড়ে মারা যাচ্ছে। তাই এ বছর বাঁশ দিয়ে হাঁড়ি তৈরি করা হচ্ছে যাতে এগুলো নিরাপদ থাকে, ভেঙে না যায়।
প্রকৃতিবাদী স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান মানুষ মানুষের জন্য সংগঠনের উদ্যোগে ২০১৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত কুষ্টিয়া জেলাজুড়ে প্রায় ১০ হাজার পাখির আবাসস্থল গড়ে দেওয়া হয়েছে।