গ্রেপ্তারের হুমকিতেই ব্রিকস সম্মেলনে যোগ দেবেন না পুতিন!
আগামী মাসেই দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত হবে ব্রিকসের শীর্ষ সম্মেলন। তবে, আন্তর্জাতিকভাবে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হওয়ার কারণে এই সম্মেলনে যোগ দেবেন না রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। আজ বুধবার (১৯ জুলাই) দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এর মাধ্যমে কয়েক মাসের জল্পনা কল্পনার সমাপ্তি ঘটল। খবর এএফপির।
ব্রিকস সম্মেলনে যোগ দিবেন পুতিন এমন খবর পাওয়া যাচ্ছিল অনেক আগে থেকেই। তবে, পুতিনের আগমন নিয়ে কূটনৈতিক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। কারণ, ইউক্রেনীয় শিশুদের বেআইনিভাবে রাশিয়ায় নির্বাসনসহ যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে পুতিনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছিল আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)। আর আইসিসির সদস্য দক্ষিণ আফ্রিকা। নিয়ম অনুযায়ী, আইসিসির সদস্য দেশগুলোয় ভ্রমণের সময় রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনকে গ্রেপ্তার করা যেতে পারে।
প্রেসিডেন্টের বিবৃতির উদ্ধৃতি দিয়ে রামাফোসার মুখপাত্র ভিনসেন্ট মাগওয়েনিয়া বলেন, ‘পারস্পরিক চুক্তিতে রুশ ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এই সম্মেলনে যোগ দেবেন না। পররাষ্ট্রমন্ত্রী সার্গেই ল্যাভরভ রাশিয়ার প্রতিনিধিত্ব করবেন।’
গতকাল রাতে পুতিনের না আসার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় জানিয়ে ওই মুখপাত্র বলেন, ‘সদস্য অন্য দেশগুলোর নেতারা আসবেন।’
দক্ষিণ আফ্রিকা ব্রিকসের বর্তমান সভাপতি। এই গ্রুপের অন্যান্য সদস্যরাষ্ট্রের মধ্যে রয়েছে ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত ও চীন। পশ্চিমা বিশ্বের অর্থনৈতিক আধিপত্যের বিপক্ষে পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হয়ে থাকে ব্রিকসকে।
আগামী ২২ আগস্টে শুরু হয়ে ২৪ আগস্ট পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকার রাজধানী জোহানেসবার্গে চলবে ব্রিকস সম্মেলন। এতে আনুষ্ঠানিকভাবে আমন্ত্রণ জানানো হয় পুতিনকে। তবে, দক্ষিণ আফ্রিকায় পুতিনের আসা নিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে বেশ চাপে রয়েছে প্রোটিয়ারা।
মাগওয়েনিয়া বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট রামাফোসা সম্মেলন নিয়ে আশাবাদী। তার আশা, ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলন সফল হবে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা প্রতিনিধিদের আতিথেয়তা বাড়ানোর জন্য জাতির প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।’
ক্রেমলিনের নেতা আফ্রিকায় পা রাখলেই তাকে যেন গ্রেপ্তার করা হয় এবং তাকে দ্রুত সময়ের মধ্যে আইসিসির কাছে হস্তান্তর করার জন্য দাবি জানিয়েছিল প্রধান বিরোধী দল দ্য ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স (ডিএ)। এ জন্য আদালতেরও দ্বারস্থ হন বিরোধী নেতারা। এর জবাবে গতকাল মঙ্গলবার প্রকাশিত আদালতের এক নথিতে রামাফোসা লেখেন, ‘পুতিনকে গ্রেপ্তার করা রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার সমান হবে।’
পুতিনকে গ্রেপ্তার করলে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা হবে এমনটি অস্বীকার করে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, ‘এটি সবার কাছে একেবারে পরিষ্কার, রাশিয়ার প্রধানকে ঘেরাও করার প্রচেষ্টার অর্থ কী।’
আদালতের ওই নথিতে দেখা যায়, আইসিসির নিয়মের অধীন থেকে অব্যাহতি চেয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। পুতিনকে গ্রেপ্তার করলে রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, শান্তি ও শৃঙ্খলা হুমকির সম্মুখীন হতে পারে এমন যুক্তি দেখানো হয়েছে। পাশাপাশি রামাফোসা যুক্তি দিয়েছেন, পুতিনকে গ্রেপ্তার করা হলে কিয়েভ-মস্কো যুদ্ধ বন্ধে তাদের প্রচেষ্টা ধূলিসাৎ হয়ে যাবে।
গত মাসে সাত আফ্রিকান দেশের নেতৃত্ব দিয়ে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ বন্ধে একটি প্রস্তাবনা দেন রামাফোসা। যার মধ্যে রয়েছে, মিসর, সেনেগাল ও জাম্বিয়ার মতো দেশগুলো। কিয়েভের ঊর্ধ্বতনদের সঙ্গে সেন্ট পিটাসবার্গে বৈঠক করেন রামাফোসা।
ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের শুরু থেকেই নিরপেক্ষ অবস্থানে থাকার দাবি করছে দক্ষিণ আফ্রিকা। তবে, সমালোচনাকারীদের দাবি, ভেতরে ভেতরে মস্কোকে সমর্থন করছে দক্ষিণ আফ্রিকা। কারণ, মস্কোর সঙ্গে বৃহৎ অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য রয়েছে তাদের।