বাংলাদেশে ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিতে এবার অস্ট্রেলিয়ার ১৫ এমপির চিঠি
বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় বাধাদানকারীদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানিয়ে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্টনি আলবেনিজকে চিঠি দিয়েছেন দেশটির ১৫ জন পার্লামেন্ট সদস্য (এমপি)। বুধবার (৪ অক্টোবর) এ চিঠি পাঠান তারা।
চিঠিতে বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে চলমান মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং এর প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন এই ১৫ জন পার্লামেন্ট সদস্য। এর সঙ্গে দায়ী ব্যক্তিরা যেন অস্ট্রেলিয়ায় প্রবেশ করতে না পারেন, তা নিশ্চিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানান তারা।
চিঠিতে অস্ট্রেলিয়ার এমপিরা বলেন, ‘বাংলাদেশে একটি গণতান্ত্রিক নির্বাচন আয়োজনের প্রচেষ্টাকে সমর্থন দিতে যুক্তরাষ্ট্র একটি বিশেষ ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে। ওই নীতি অনুযায়ী, বাংলাদেশের নির্বাচনি প্রক্রিয়াকে দুর্বল করার সঙ্গে যুক্ত সরকারি কর্মকর্তা, যেকোনো রাজনৈতিক দলের সদস্য, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, বিচার বিভাগ এবং নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর সদস্যদের জন্য ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এমন অবস্থায়, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী ব্যক্তিরা যাতে অস্ট্রেলিয়ায় প্রবেশ করতে না পারেন, তা নিশ্চিতে ম্যাগনিটস্কি নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে অথবা অন্য কোনো উপায়ে হোক। যুক্তরাষ্ট্রের মতো আমাদেরও অনুরূপ নীতি প্রণয়ন করা অত্যাবশ্যক।’
চিঠিতে আরও বলা হয়, ‘আমরা বিশ্বাস করি, নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও অংশগ্রহণমূলক হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করে এমন যেকোনো কাজকে উদ্বেগজনক মনে করি। এর মধ্যে আছে—ভোট কারচুপি, ভোটারদের ভয় দেখানো এবং রাজনৈতিক দল, ভোটার, সুশীল সমাজ ও মিডিয়াকে মত প্রকাশে বাধা দেওয়া।’
চিঠিতে আরও বলা হয়, ‘বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন দলের সদস্যদের ক্ষমতার অপব্যবহার এবং সাধারণ নাগরিক, অধিকারকর্মী, শ্রমিক ইউনিয়ন নেতা ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ নিয়ে আমরা শঙ্কিত। এই অপরাধগুলো অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রতিবেদনে নথিভুক্ত করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার, বিশেষ করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে এমন নির্যাতনের রিপোর্টগুলো অত্যন্ত উদ্বেগজনক। আন্তর্জাতিকভাবে স্বনামধন্য এনজিওগুলো র্যাবকে সরকারি ডেথ স্কোয়াড হিসেবে চিহ্নিত করেছে।’
চিঠিতে ওই ১৫ এমপি বলেন, ‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন ছাড়া বিচারবহির্ভূত হত্যা ও বলপূর্বক গুমের ঘটনা সম্ভব নয় বলে স্বীকার করেছেন র্যাবের দুই ইনফরমার ও সাবেক সদস্য। আমরা অস্ট্রেলিয়া সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই, যাতে বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও অংশগ্রহণমূলক হওয়ার আন্তর্জাতিক মানদণ্ড পূরণে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হয়।’
অস্ট্রেলিয়ার এই এমপিরা বলেন, বাংলাদেশের ২০১৪ ও ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত বিগত দুটি জাতীয় নির্বাচন বিতর্ক এবং অনিয়মে ভরা ছিল। ভয় প্রদর্শন এবং বিরোধী রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ ও মিডিয়ার ওপর সহিংসতার অভিযোগ ছিল। ২০২৩ সালের শেষের দিকে, কিংবা ২০২৪ সালের শুরুর দিকে বাংলাদেশে আরেকটি সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে যা দেখা গেছে, তা প্রতিরোধ করতে আমরা নির্বাচনের আগে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে একটি গঠনমূলক সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য সরকারকে অনুরোধ করছি। সে লক্ষ্যে আমরা চাইছি, অস্ট্রেলিয়া সরকার বাংলাদেশের কাছে স্পষ্টভাবে আমাদের প্রত্যাশা ব্যক্ত করুক, আগামী নির্বাচনটি জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের অফিসের মানবাধিকার স্ট্যান্ডার্ডস অনুযায়ী অনুষ্ঠিত হতে হবে। পাশাপাশি বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিতে অস্ট্রেলিয়া সরকারকে বাংলাদেশ, জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে কাজ করতে হবে। একইসঙ্গে প্রকাশ্যে ঘোষণা দিতে হবে, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচনি প্রক্রিয়ায় কেউ বাধা দিলে তাদেরকে ম্যাগনিটস্কি নিষেধাজ্ঞার অধীনে টার্গেট করবে অস্ট্রেলিয়া।’
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রীকে দেওয়া চিঠিতে আরও বলা হয়, ‘যেহেতু অস্ট্রেলিয়ার সরকার কূটনীতির মাধ্যমে আইনের শাসন ও মানবাধিকারের প্রচারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, আমরা আশা করি আপনি আমাদের এই চিঠিকে গুরুত্ব দেবেন। আমরা যে বিষয়গুলো উত্থাপন করেছি, তা নিয়ে আপনার কাছ থেকে শোনার জন্য উন্মুখ হয়ে আছি।’
চিঠিতে স্বাক্ষরকারী এমপিরা হচ্ছেন—সিনেটর ডেভিড শোব্রিজ, সিনেটর জর্ডন স্টিল-জন, অ্যাডাম ব্যান্ড এমপি, সিনেটর লারিসা ওয়াটার্স, সিনেটর নিক ম্যাককিম, সিনেটর জ্যানেট রাইস, সিনেটর বারবারা পোকক, এলিজাবেথ ওয়াটসন-ব্রাউন এমপি, স্টিফেন বেটস এমপি, সিনেটর মেহরীন ফারুকী, সিনেটর পিটার হুইস-উইলসন, সিনেটর দরিন্দা কক্স, সিনেটর পেনি অলম্যান, ম্যাক্স চ্যান্ডলার ও সিনেটর সারাহ হ্যানসন।