যশোরে নিজ দলের স্বতন্ত্রপ্রার্থীদের চ্যালেঞ্জের মুখে আ.লীগ
যশোরের ছয়টি আসনের মধ্যে পাঁচটিতেই আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা নিজ দলের স্বতন্ত্রপ্রার্থীদের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন। বাকি আসনে ইসিতে বাতিল ক্ষমতাসীন দলটি থেকে প্রার্থীর মনোনয়ন গড়িয়েছে হাইকোর্টে। তার করা রিটের ফলাফল আসেনি গতকাল শনিবার (১৬ ডিসেম্বর) পর্যন্ত।
জেলার ছয়টি আসনে ৩২ প্রার্থী চূড়ান্ত প্রতিদ্বন্দ্বীতায় টিকে আছেন। যশোর-১ (শার্শা উপজেলা) আসনে নৌকা প্রতীক নিয়ে পরপর তিনবারের সংসদ সদস্য শেখ আফিল উদ্দিন চতুর্থবারের মতো প্রার্থী হয়েছেন। একই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন বেনাপোল পৌরসভার সাবেক মেয়র জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আশরাফুল আলম লিটন। এলাকাবাসীর ধারণা, দুজনের মধ্যে ভোটের লড়াই বেশ জমে উঠবে। যদিও এই আসনে আছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী আক্তারুজ্জামানও। তবে, মূল লড়াইটা নৌকা বনাম স্বতন্ত্রের মধ্যে হবে বলেই মনে করছেন তারা।
যশোর-২ (ঝিকরগাছা ও চৌগাছা উপজেলা) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়েছেন মো. তৌহিদুজ্জামান তুহিন। তার বিপরীতে আওয়ামী লীগের দুই নেতা সাবেক সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মনিরুল ইসলাম ও চৌগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এস এম হাবিবুর রহমান স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। তবে, নৌকার প্রার্থীর সঙ্গে সাবেক সংসদ সদস্য মনিরুল ইসলামের মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, জাতীয় পার্টির মো. ফিরোজ শাহ, বাংলাদেশ কংগ্রেসের মো. আব্দুল আওয়াল, বিএনএফের মো. শামছুল হক এলাকায় খুব একটা পরিচিত মুখ নন।
যশোর-৩ আসনে গত দুবারের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ এবারও আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়েছেন। একই দল থেকে স্বতন্ত্র লড়বেন সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহিত কুমার নাথ। এ আসনে জাতীয় পার্টির কিছু ভোট আছে। সেক্ষেত্রে এ দলের প্রার্থী মাহবুব আলম বাচ্চু কিছু ভোট পেতে পারেন বলে মনে করছেন এলাকাবাসী। যদিও এই আসনেও স্বতন্ত্রপ্রার্থী আওয়ামী লীগনেতা মোহিত কুমার নাথের সঙ্গে নৌকার প্রার্থীর মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে ধারণা ভোটারদের। এ আসনে অন্য প্রার্থীদের মধ্যে আছেন বিকল্পধারা বাংলাদেশ-এর মারুফ হাসান কাজল, বাংলাদেশ ন্যাশনাল পিপলস পার্টির অ্যাডভোকেট সুমন কুমার রায়, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মো. তৌহিদুজ্জামান, তৃণমূল বিএনপির মো. কামরুজ্জামান, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের শেখ নুরুজ্জামান। তবে, নির্বাচনি মাঝে তাদের তেমন উত্তাপ নেই আর ভোটারদের কাছেও তারা তেমন পরিচিতি নন বলে জানা গেছে।
যশোর-৪ (বাঘারপাড়া ও অভয়নগর উপজেলা) আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী এনামুল হক বাবুল মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকেই ছিটকে পড়েছেন। নির্বাচন কমিশন তার মনোনয়নপত্র বাতিল করেছে। বিষয়টি নিয়ে তিনি হাইকোর্টে রিট করেছেন। গতকাল রোববার পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো অগ্রগতির তথ্য মেলেনি। এখন পর্যন্ত এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগনেতা রণজিত রায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আছেন। নৌকার প্রার্থী যদি শেষ পর্যন্ত প্রার্থীতা ফিরে না পান, তাহলে রনজিত রায় হয়তো আওয়ামী লীগের সমর্থন পাবেন বলেও মনে করা হচ্ছে। যদিও দলের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করা হয়নি। এনামুল হক বাবুল প্রার্থিতা ফিরে না পেলে এ আসনে স্বতন্ত্রপ্রার্থীর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে জাতীয় পার্টির মো. জহুরুল হকের। যদিও আরও প্রার্থীর মধ্যে আছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের সুকৃতি কুমার মন্ডল, ইসলামী ঐক্যজোটের মো. ইউনুছ আলী, তৃণমূল বিএনপির লে. ক. এম শাব্বির আহমেদ (অব.), স্বতন্ত্র থেকে আওয়ামী লীগনেতা সন্তোষ কুমার অধিকারী।
যশোর-৫ (মনিরামপুর উপজেলা) আসনে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী হয়েছেন প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য। তবে, নির্বাচনি মাঠ বলছে, এবার তিনি স্বতন্ত্রপ্রার্থী আওয়ামী লীগনেতা এস এম ইয়াকুব আলীর চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বেন। এ আসনে প্রার্থী হওয়া জাতীয় পার্টির এম এম হালিম, তৃণমূল বিএনপির আবু নসর মোহাম্মদ মোস্তফা, ইসলামী ঐক্যজোটের হাফেজ মাওলানা নূরুল্লাহ আব্বাসী মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতার বাইরে থাকবেন। এলাকার ভোটারদের মধ্যে তাদের পরিচিতিও তেমন একটা নেই।
যশোর-৬ আসনে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী হয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার। অন্য আসনগুলোর মতো এখানেও তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগনেতা এইচ এম আমির হোসেনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বেন বলে মনে করছেন ভোটাররা। এ আসনের অপর দুই প্রার্থী জাতীয় পার্টির জি এম হাসান ও আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা মো. আজিজুল ইসলাম মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী দুই প্রার্থীর ভোটের হিসাবে কিছু যোগ-বিয়োগ করাতে পারবেন।