শিক্ষার্থীদের চুল কেটে দেওয়ায় শিক্ষককে অব্যাহতি
মুন্সীগঞ্জের সিরাজদীখান উপজেলায় হিজাব না পরায় বিদ্যালয়ের নয় শিক্ষার্থীর চুল কেটে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে। গতকাল বুধবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুরের পর উপজেলার সৈয়দপুর আব্দুর রহমান উচ্চ বিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এ ঘটনা ঘটেছে।
এ ঘটনায় ওই শিক্ষককে চাকরি থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। অভিযুক্ত ওই শিক্ষকের নাম রুমিয়া সরকার। তিনি বিদ্যালয়টির বিজ্ঞান এবং স্বাস্থ্য ও সুরক্ষাবিষয়ের শিক্ষক।
শিক্ষার্থীরা হলো সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী মাইসা জাহান, তানজিলা আক্তার, আনীল আক্তার, তাসফিয়া, মাহাদিয়া, সুমাইয়া, ইফা আক্তারসহ ৯ জন।
বিদ্যালয় ও শিক্ষার্থীদের অভিভাবক সূত্রে জানা যায়, গতকাল বুধবার বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণিতে বিজ্ঞান ক্লাস চলছিল। রুমিয়া সরকার ক্লাস নিচ্ছিলেন। সে সময় ধর্মী আচার-আচরণ নিয়ে কথা হয়। ক্লাসের নয় শিক্ষার্থী ক্লাসে হিজাব ছাড়া ছিল। শিক্ষিকা পর্দার আলোচনা করতে গিয়ে ওই শিক্ষার্থীদের ওপর ক্ষিপ্ত হন। সে সময় তাদের চুল কেটে দেন।
সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী মাইসা জাহান বলে, ‘আমার একটাই হিজাব ছিল। ওই হিজাবটা ময়লা হয়ে যাওয়ায় ধুয়ে দিয়েছিলাম। এজন্য পরে যেতে পারিনি। ম্যাডামকে অনেক অনুরোধ করে বলেও আমি রক্ষা পাইনি। ম্যাডাম আমাদের চুল কেটে দিল।’
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের এক অভিভাবক মো. কহিনুর বলেন, ধর্মের বিষয়টি অন্তর থেকে করতে হয়। বাচ্চারা হিজাব না পরে ভুল করেছে। এটি তাদের বুঝিয়ে বলতে পারত। এটা না করে নয়টা বাচ্চার কারও চার আঙ্গুল, কারও ছয় আঙ্গুল করে চুল কেটে দিল। এটি অন্যায় করেছে। মেয়েরা খুব কান্নাকাটি করেছে। স্কুলে আসতে চাচ্ছিল না।
এ ঘটনায় এলাকায় চাপা উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে। ওই শিক্ষক এর আগে এমন ঘটনা কখনও ঘটাননি বলে জানান বিদ্যালয়টির অধ্যক্ষ মিয়া মো. ফরিদ। তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ঘটনাটি অনাকাঙ্ক্ষিত। ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
ওই শিক্ষক কাঁচি কোথায় পেলেন জানতে চাইলে অধ্যক্ষ বলেন, শিক্ষার্থীদের কাছেই ছিল।
স্কুলটির পরিচালনা পরিষদের সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মাহমুদ বলেন, বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। তদন্ত কমিটি হয়েছে। জড়িত শিক্ষিকার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ ঘটনায় ওই শিক্ষিকাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। স্থায়ী ব্যবস্থা নিতে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটিকে আগামী তিন কার্য দিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাব্বির আহমেদ।
আজ দুপুরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, ‘জেলা প্রশাসকের নির্দেশে আজ সকালে নয়জনের মধ্যে চার শিক্ষার্থীর বাড়িতে গিয়েছিলাম। শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলেছি। হিজাব না পরায় চুলকাটার বিষয়টি জানতে পেরেছি। পরে সকাল ১০টার দিকে এ বিষয়ে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক, স্কুল কমিটির লোকজন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে স্কুলে বসেছিলাম। ধর্মীয় রীতিনীতিতে উৎসাহিত করতে ওই শিক্ষিকা এমন ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। তবে এমন একটি ঘটনা কারো কাম্য নয়।’